অর্ধেকের কম দামে নিত্যপণ্য, টিসিবির ট্রাকে মানুষের ভিড়

অর্ধেকের কম দামে নিত্যপণ্য, টিসিবির ট্রাকে মানুষের ভিড়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ভর্তুকি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানুষের ভিড় দেখা যায়। মূলত, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য নেওয়ার জন্য ক্রেতাদের এই ভিড়। যদিও টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক আসে দুপুর ১টায়, তার আগে থেকেই ভিড় করতে থাকেন ক্রেতারা। আর ট্রাক আসলে সেই ভিড় আরও বেড়ে যায়। লেগে যায় লম্বা লাইন।

সোম ও মঙ্গলবার (১১ ও ১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবির পণ্য নেওয়ার এসব চিত্র দেখা যায়। আরও বেশকিছু স্থানে বিক্রি হয় টিসিবির পণ্য।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তাই টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাকে মানুষের লাইন দিন দিন বড় হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হলেও এসব পণ্য হাতছাড়া করতে চান না তারা। কারণ, বাড়তি দামে পণ্য কেনার সাধ্য অনেকেরই নেই।

সরেজমিনে পণ্য বিক্রির নির্ধারিত স্থানে টিসিবির ট্রাককে কেন্দ্র করে স্বল্প আয়ের মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। স্বল্প আয়ের মানুষের সঙ্গে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের মানুষও এই পণ্য নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

ক্রেতারা বলছেন, ৫৪০ টাকার পণ্যের সঙ্গে দুই কেজি পেঁয়াজ পাচ্ছেন তারা। এর সঙ্গে রয়েছে আলু, তেল ও ডাল। যেগুলো বাজার থেকে কিনতে গেলে ১,২০০ টাকা বেশি লাগে। তবে পণ্য নিতে আসা মানুষের অভিযোগও রয়েছে।

আনন্দবাজার থেকে আসা নীলা গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। টিসিবির পণ্য নিতে সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সকাল ৭টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বেলা ৩টায় কিনতে পেরেছি। তাও ভালো, এই টাকায় এত জিনিস এখন পাওয়া যায় না। পেঁয়াজের কেজিই তো এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। অন্য জিনিস তো আছেই। সরকার এভাবে আলু-পেঁয়াজ না দিলে আমরা চলতে পারতাম না। এটা অনেক ভালো কাজ করেছে।”

আরেক ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখানে আসি কম দামে জিনিসপত্র কিনতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোনো একটা জিনিস আমাদের কিনতে দেয় না। আমি যদি পেঁয়াজ কিনতে আসি, আমাকে অন্য সব পণ্যও কিনতে হবে। শুধু পেঁয়াজ আমরা কিনতে পারি না। এখন যদি আমাদের তেল-ডাল দরকার নাও থাকে, তাও এগুলো কিনতে হয়। তাহলে লাভ কী হলো আমাদের? খরচ তো আমাদের হয়েই যাচ্ছে।”

শ্রমজীবী আব্দুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, “আমরা এখানে কম দামে জিনিসপত্র কিনতে আসি। কিন্তু এত দেরি হলে আমাদের কাজের সময় এখানেই শেষ হয়ে যায়। আমার এক বেলা কাজ বন্ধ হলেই তো লস হয়।”

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মোজাম্মেল হোসেন কম দামে টিসিবির পণ্য কিনতে দাঁড়িয়েছিলেন লাইনে। তিনি বলেন, “আমি এসেছি কেরানীগঞ্জ থেকে। কম দামে কিছু জিনিস কিনতে পারবো, তাই এসেছি।”

দেরি করে আসায় টিসিবির পণ্য কেনার টোকেন পাননি আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তি। তবু তিনি লাইনে ছিলেন পাওয়ার আসায়। তিনি বলেন, “আমার আসতে দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই এসে টোকেন নিতে পারিনি। তবু লাইনে দাঁড়িয়েছি। যদি তারা আমাকে কেনার সুযোগ দেয়, তাহলে কিছু কিনে বাড়ি ফিরতে পারবো।”

টিসিবির পণ্য বিতরণকারী মো. শহিদুল্লাহ বলেন, “আমরা ৫৪০ টাকায় একটি প্যাকেজে চার ধরনের পণ্য দিচ্ছি। দুই কেজি পেঁয়াজ (ভারতীয়), চার কেজি আলু, দুই কেজি ডাল (মোটা) আর দুই লিটার রাইস ব্র্যান তেল দিচ্ছি। আমাদের তেলটা পরিবর্তন হয়। কখনও সয়াবিন তেল দিই, কখনও রাইস ব্র্যান দিই।”

তিনি আরও বলেন, “এখন বাজারে দুই কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকা, চার কেজি আলুর দাম ২০০ টাকা, দুই কেজি মোটা মসুর ডাল ২৩০ টাকা, দুই লিটার রাইস তেলের দাম ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ১ হাজার ২৩০ টাকার পণ্য ক্রেতারা পাচ্ছেন ৫৪০ টাকায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *