অল্প বিদ্যা ভয়ংকর | আবু আফফান

অল্প বিদ্যা ভয়ংকর | আবু আফফান

অল্প বিদ্যা ভয়ংকর | আবু আফফান

বর্তমান সমাজে প্রচলিত ওয়াজ মাহফিল আমি শুনি না। তবে মাঝেমধ্যে বিনোদনের জন্য কতিপয় ফানি বক্তাদের ওয়াজ শুনে একটু আধটু মজা পাই। দুঃখি মন ক্ষনিকের জন্য হলেও ভালো করার থেরাপি পাই। যারা ভাবছেন হালের বক্তাদের ওয়াজ শুনে আল্লাহ রাসূলকে পাবেন তারা অযথা সময় নষ্ট করছেন। বাজনার চেয়ে খাজনা বেশি ব্যয় করে ফেলছেন। মনে রাখবেন বাজারি বক্তাদের বয়ান যতই কম শোনা যায় ততই দুনিয়া আখেরাতের জন্য মঙ্গলজনক।

করোনা নিয়ে পৃথিবীর হালচালের উপর লেখালেখি কম করিনি, বেশ করেছি। সেদিন একটা অনলাইন পত্রিকার জন্য লেখা রেডি করতে যেয়ে ইউটিউবে কিছু বাজারি বক্তার ওয়াজ শুনতে হয়েছে। করোনা নিয়ে এরা যে সব আজগুবি ভবিষ্যৎবাণী করল তাতে মনে মনে আমি আমাকে প্রশ্ন করছিলাম যে, কত মানুষতো পাবনা যায় কিন্তু এদের এ্যাম্বুলেন্স কি পাবনা যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেছে? সরকারতো কত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছ কিন্তু এদেরকে পাবনায় নিয়ে সমাজের আসল উন্নয়নে কেন অবদান রাখেনা?!

বাজারি বক্তাদের পাগলামির নমুনা: একজন স্বপ্নযোগে করোনার ইন্টারভিউয়ের বয়ান করছে। এ স্বপ্নে করোনা কেন আসলো, কাদের উপর আসলো সাথে সাথে করোনার ভ্যাকসিন কি। এসব ফালতু আলোচনা সে দেদারসে করছে কুরআন হাদিসের মঞ্চে! আরেক আন্তর্জাতিক বক্তা মানের গাধা বলছে করোনা নাকি ইহুদিদের জন্য! অথচ করোনায় বিশ্বের কতিপয় আলেমও ইন্তেকাল করেছেন এখন তো সে বক্তার কথামত তাঁরা ইহুদী! (নাউজুবিল্লাহ)

অন্য এক মশহুর ছিরিয়াল ছাড়া বক্তা নামের তক্তা বললেন ‘মুসলমানদের করোনা হবেনা,হলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে ‘! এ যাবত অনেক মুসলমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এবার সেই মালের কাছে আমার প্রশ্ন কুরআন মিথ্যা হয়ে গেছে? আপনার কথামতো তো কুরআন মিথ্যা কারণ মুসলমান তো মারা গেল করোনায়?!(নাউজুবিল্লাহ মিন যালিক)

কত বড় ভয়ংকর কথা! অথচ এরা আবার এক শ্রেণির অভাগা মানুষের কাছে মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক! বড়োর দিক থেকে বহুত বড়! বিশালতার দিক থেকে মারাত্মক ইসলামী চিন্তাবিদ। আগামী দুই তিন বছর এদের বয়ানের সিরিয়াল অলরেডি ঠিক হয়ে  আছে! সর্বনাশ!!

অথচ পাঠক! জেনে অবাক হবেন যে, এসব তথাকথিত আন্তর্জাতিক বক্তারা দেশের বিজ্ঞজনদের কাছে জাহালাতের ময়দানে বিশাল বড় বড় রুস্তম পালোয়ান। আর আজকাল আমি তো দেখছি যে, যে  যত বড় বক্তা সে তত বড় জাহেল। ঢাকার গণপরিবহনের চালকের সিটে যেমন হেলপার বসে চোখবুঁজে গাড়ি টানে ঠিক তেমন দশা  আজ বয়ানের মঞ্চের! শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরাও এখন আন্তর্জাতিক মানের মুফাসসির, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ!

এদের হাতে যখন ইসলামের নাটাই তখন ইসলাম নিয়ে তামাশাকারীদের সংখ্যা কিভাবে কমে বলুন? দেশে যদি নাস্তিকদের সংখ্যা বেড়ে থাকে তাহলে এর জন্য সর্বপ্রথম আজকের বাজারি বক্তারা দায়ী। পড়া নাই লেখা নাই তো কি হয়েছে কন্ঠে সুর আছেনা? ব্যস আপনি কোকিলকন্ঠি। ওয়াজের ময়দানে নেমে গলা ঝেড়ে কাশেন। রাতারাতি আপনি হয়ে গেলেন ইসলামি চিন্তাবিদ(?) কতিপয় ইউটিউবারদের ধরে এনে আপনার ওয়াজের ভিডিও করিয়ে নিন অতঃপর আকর্ষনীয় শিরোনাম দিয়ে ছেড়ে দিন ইউটিউবে। হয়ে গেলেন আপনি জাহেলদের হিরো!

পাঠক! খেয়াল করেছেন কি? হালের প্রফেশনাল বক্তাদের বয়ান কিন্তু  তাদের অজ্ঞতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এরা যে পড়াশুনায় একদম শূন্য তা বুঝতে যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম হওয়া লাগে না। মূর্খতার বন্যায় ভেসে যাচ্ছে আজকের ওয়াজ মাহফিল। আফসোসের বিষয় হল, বয়ানের নামে ওয়াজ মাহফিলে মূর্খতার এত ছড়াছড়ি সত্ত্বেও অনেক বিজ্ঞ আলেম, লেখক গবেষক এ ময়দানে কোমরে গামছা বেঁধে নেমে যাচ্ছেন। মাশাআল্লাহ খুব ভাল কথা। কিন্তু টাকার অংক যখন নিচে নেমে আসে তখন আবার তাঁদের মুখটা ভার ভার লাগে । এখন আমাদের মুখ দিয়ে মাশাআল্লাহর পরিবর্তে ইন্নালিল্লাহ(!) বের হয়। নিরবে আপন মনে ভাবি। ইশ! হুজুর না হয়ে যদি গ্রামের যেয়ে বকরীর রাখাল হতাম তাহলেও অনেক ভাল হতো। অন্তত আজ আমার টুপি দাঁড়ির দিকে কেউ আড় চোখে তো তাকাতো না!

দেশে কি নাস্তিক ভরে গেছে?: অনেক বক্তা সাহেবের ভাব সাভ ও কথাবার্তায় মনে হয় নাস্তিকে দেশ ভরে গেছে। এরাই দেশে ইসলামের উন্নয়নের পথে বিরাট বাধা, আসল সমস্যা! অথচ বক্তা সাহেব কি জানে ইবলিস শয়তান কিন্ত নাস্তিক নয় বরং মহা বড় আস্তিক ছিল এবং জগতের সব ক্ষতি সে একাই করছে। এবং বক্তা সাহেব কিন্তু যেখানে সেখানে ধানাই পানাই ফতোয়া দিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে বিরাট বড় আস্তিক শয়তানেরই গোলামী করছে?!

লেখার শিরোনাম একটা দিয়ে আলোচনা করছে ভিন্ন কিছুর এ কথা ভেবে যারা আমাকে সাইজ করার ভাবনা ভাবছেন তাদেরকে বলছি। মূলত অল্প বিদ্যা নিয়েই আজকালকের বক্তারা ওয়াজ মাহফিলের ময়দান চষে বেড়াচ্ছে আর এতেই সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। তাই অল্প বিদ্যা যে কত ভয়ংকর তা বর্তমানের বক্তাদের দিকে তাকালে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়।

পরিশেষে বলে যাই। অল্প বিদ্যা থেকে দূরে থাকুন।দেশ ও দশের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *