অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে হবে

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে হবে

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে হবে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কিছু হলেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের জন্য ডাক্তার বা প্রেসক্রিপশন লাগে না। ফার্মেসিতে যথেচ্ছভাবেই দেয়া হচ্ছে এমন অ্যান্টিবায়োটিক। কারণ, এতে করে বেঁচে যায় ডাক্তারের বিল। এ থেকে দেশের মানুষকে বিশেষত শিশুদের না বাঁচাতে পারলে অন্ধকার ধেয়ে আসছে- কোনো সন্দেহ নেই।

অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর বিষয়ক ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের উদ্বোধনী সভায় অ্যান্টিবায়োটিকের বেপরোয়া ও নির্বিচার ব্যবহার কমিয়ে আনতে দ্রুত বৈশ্বিক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে তিনি ছয়টি প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিপণন নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোরভাবে আইন ও বিধি প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় প্রস্তাবে মানব, মৎস্য ও প্রাণীর জন্য ব্যাপকভাবে পরীক্ষাগারভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি অনুমোদিত ব্যক্তির প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল পণ্য বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন। তাঁর চতুর্থ প্রস্তাবটি হচ্ছে, এএমআর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ মৌলিক, পরীক্ষামূলক ও পরিচালনামূলক গবেষণা জোরদার করতে হবে।

পঞ্চম প্রস্তাবে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল পণ্যের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য উচ্চপর্যায়ের অ্যাডভোকেসি, যোগাযোগ ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং ষষ্ঠ প্রস্তাবে এসংক্রান্ত নীতির কঠোর বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, এফএও, ওআইই, ডাব্লিউএইচও, জাতিসংঘ পরিবেশ সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার কথা বলেন তিনি।

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ২০১৩ সালে বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-নিড ফর গ্লোবাল সলিউশন’ শীর্ষক একটি বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে বিশ্বের ২৬ জন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ প্রবন্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যে হারে বাড়ছে, তাতে করে হয়তো দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে মানুষ সংক্রামক রোগে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করবে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণজনিত মৃত্যুহার বিংশ শতাব্দীর পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যখন কোনো কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না। কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে অতি সাধারণ সার্জারি বা অস্ত্রোপচার অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। বিশ্বব্যাপী বহু চিকিৎসক অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা, অনিশ্চয়তা ও অবহেলার কারণে রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়ে অযৌক্তিক ও ঢালাওভাবে রোগীকে ওষুধ প্রয়োগ করে থাকেন।

বাংলাদেশেও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছভাবে। ২০১৫ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সায়েন্টিফিক রিসার্চের এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, ওই জরিপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছে। ২০১৯ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র বা আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীর ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হলো সুপারবাগ। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। ২০১৭ সালে অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অতিদ্রুত পৃথিবী থেকে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দ্রুত বৈশ্বিক পদক্ষেপ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেই আমরা আশাবাদি। দেশের মানুষের ভবিষ্যৎচিন্তা থেকেই পরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *