৩০শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৯ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী মুদ্রানীতিতে ইন্টারেস্ট রেট করিডর বা বাজারভিত্তিক সুদহার চালুর বিষয়ে ঘোষণা দেবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। রিজার্ভ গণনার বিষয়েও আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে মুদ্রার একক বিনিময় হার চালুর দিকেও যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ও আইএমএফের যৌথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে আসা সংস্থাটির স্টাফ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফর আজ শেষ হয়েছে। শেষ দিনে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর রবিবার (৭ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।
একক বিনিময় হার চালুর বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মেজবাউল হক বলেন, ‘মুদ্রার একক বিনিময় হার মানে এই নয় যে, ডলারের কেনাবেচার হার একই হবে। এখন একাধিক বিনিময় হার আছে। তবে সেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান ২ শতাংশের মধ্যে এলেই বলা যাবে— মুদ্রার একক বিনিময় হার আছে। সেটা প্রায় অর্জিত হয়ে গেছে। তবে তা আরও বেশি সীমার মধ্যে আনার চেষ্টা করা হবে।’
এ ছাড়া আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনার বিষয়েও আগামী মুদ্রানীতিতে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্তানুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম চালানোর কথা, সেগুলোর কিছু বিষয় সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্জিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ কী বলেছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফ এসব যৌথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে সন্তুষ্ট। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। সময় আছে, সেগুলো আমলে নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করতে পারবো।’
চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, ‘সেটা তো আপনারা জানেন, রিজার্ভ গণনা নিয়ে একটা ইস্যু আছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত হিসাব করে, আইএমএফ তাতে পরিবর্তন চায়। তাদের পরামর্শ হলো— প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হোক।’
মেজবাউল হক আরও বলেন, ‘‘চলমান সফরে প্রধানমন্ত্রী যেসব দেশে গেছেন, তারা সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেগুলো আসতে শুরু করলে দেশের ‘ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট’ আরও শক্তিশালী হবে।’’
অনুমোদিত ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ আইএমএফ এরই মধ্যে ছাড় করেছে। সংস্থার সদ্য সমাপ্ত মিশনের বা প্রতিনিধি দলের সফরের সঙ্গে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ প্রাপ্তির সম্পর্ক নেই বলে জানান মেজবাউল হক।
আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে, তার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে— বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়।
গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভার পরে বলা হয়েছিল, ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে। ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করা যাবে। তবে ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে আগামী জুলাই মাস থেকে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট। তবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচি চালু থাকার কথা রয়েছে।