আজই আষাঢ়ে নামে বাদলের ধারা

আজই আষাঢ়ে নামে বাদলের ধারা

আজই আষাঢ়ে নামে বাদলের ধারা

আদনান আহমাদ : আষাঢ়ের কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দারুণ চিত্রায়ণ করেছেন। কী দারুণ মধুর ব্যাঞ্জনা তার কাব্যে। ওই বেণুবন দুলে ঘনঘন পথপাশে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে। নিচে আরও কিছু কবিতার অংশ উপস্থাপন করা হলো-

নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।

বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন, ধবলীরে আনো গোহালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।

দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,
রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে।

এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।।
শোনো শোনো ওই পারে যাবে বলে কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে।

খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।
পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল ছলছল উঠে বাজি রে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।।

ওগো, আজ তোরা যাস নে গো, তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।

আমরা জানি, বর্ষা নিভৃত উপলব্ধির। বাংলার বর্ষা একেবারেই নিজস্ব। এটি এমনই এক ঋতু, যে কাউকে উদাস করে ফেলে। মনের ভেতরে লুকানো নিগূঢ় কোনো দুঃখবোধকে এক নিমিষে জাগিয়ে তুলতে পারে বর্ষা। আবার তা ধুয়েমুছে সাফও করে দিতে পারে। কবির মনেও গভীর ছায়া ফেলে এ ঋতু। তাইতো বর্ষাকে ঘিরে শত-সহস্র কবিতা লেখা হয়েছে বাংলা সাহিত্যে।

সংশোধিত বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাংলা বছরে ছয়টি ঋতু বিরাজমাম। আজ বছরের প্রথম ঋতু গ্রীষ্মের শেষ দিন। অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠের শেষ দিন আজ। রসালো শাঁসালো হরেকরকম ফলের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছিল ‘মধুমাস’ জ্যৈষ্ঠ। টক-মিষ্টি আম, লাল লাল লিচু আর জাতীয় ফল কাঁঠালও পেকেছে এই মাসে। মধুময় ফলের ডালি যেন পূর্ণতা পায় এ সময়ে।

আজই আষাঢ়ের প্রথম দিন। আর আষাঢ় মানেই তো বর্ষা কিংবা বাদলা দিন! বিদ্রোহী ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বর্ষাকে চঞ্চলা মেয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন-

‘ওগো ও কাজল-মেয়ে,
উদাস আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে।
কাশফুল সম শুভ্র ধবল রাশ রাশ শ্বেত মেঘে
তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে।
ওগো ও জলের দেশের কন্যা! তব ও বিদায়-পথে
কাননে কাননে কদম-কেশর ঝরিছে প্রভাত হতে।
তোমার আদরে মুকুলিতা হয়ে উঠিল যে বল্লরী
তরুর কণ্ঠ জড়াইয়া তারা কাঁদে নিশিদিন ভর।

এদিকে দেশের আবহাওয়ায় বর্ষার আগমন ঘটেছে কিন্তু কয়েকদিন আগেই। বছরের প্রথমবারের মতো বর্ষার বৃষ্টি হয়েছে গত শুক্রবার। গতকালও প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন সারাদেশে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আষাঢ় ও শ্রাবণ এই দু’মাস বর্ষাকাল। যদিও আষাঢ় মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে যখন নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে যায়, মানুষজন, পশু-পাখি অস্থির হয়ে পড়ে। গাছপালা শুকিয়ে মরার মত হয়ে যায়—তখন বর্ষা এসে সকলের মধ্যে নূতন প্রাণের জোয়ার এনে দেয়।

বর্ষাকাল আমাদের শহুরে ও গ্রামীণ জীবনে ভিন্ন। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যথাযথ বৃষ্টিপাত বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় বাংলাদেশের কৃষি ভেঙে পড়ে। তাই বর্ষাকাল আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *