আজ আল্লামা মাসঊদ-এর ১৭তম কারামুক্তি দিবস

আজ আল্লামা মাসঊদ-এর ১৭তম কারামুক্তি দিবস

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ-এর ১৭তম কারামুক্তি দিবস আজ। দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসলামদ্রোহী গোষ্ঠী ‘জামায়াতে ইসলামী’র ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ২০০৬ সালের এই দিনেই কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

২০০৫ সালের ২২ আগস্ট সোমবার ইংল্যান্ডের একটি শান্তি সেমিনারে যোগদানের লক্ষ্যে যাত্রার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে গোমরাহ ঘোষিত ও পথচ্যুত ইসলামদ্রোহী দল, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী গোষ্ঠী ‘জামায়াতে ইসলামী’র মূলোৎপাটনে জীবনভর সংগ্রাম চালিয়েছেন আল্লামা মাসঊদ। চারদলীয় জোটের কাঁধে সওয়ার হয়ে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে তৎকালে সরকারী চাকুরীরত আল্লামা মাসঊদ ২ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ পদত্যাগপত্রে ‘জামায়াতে’র বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশের সরকার গঠনে ‘জামায়াতে’র অংশীদারত্বের প্রতিবাদে স্বেচ্ছা-অবসর গ্রহণ করেন।

অতঃপর তিনি দেশব্যাপী রাষ্ট্রদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহী গোষ্ঠী ‘জামায়াতে ইসলামী’র বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ‘জামায়াতে’র প্রতিরোধে নিজেকে উৎসর্গ করেন।

ফলশ্রুতিতে শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করে ‘জামায়াত’ এবং তাঁকে বিনাশ করতে উঠেপড়ে লাগে। এরই ধারাবাহিকতায় একসময় ইসলামদ্রোহী দল ‘জামায়াতে ইসলামী’র প্রত্যক্ষ ইন্ধনে আল্লামা মাসঊদকে গ্রেফতার করে বোমা হামলার দুটি মামলায় জড়ানো হয়।

“নিজামীকে রিমান্ডে নিন। নিজামীকে রিমান্ডে নিলেই বোমা হামলার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে।”

খারেজি মতাদর্শে অনুপ্রানিত ‘জামায়াত’ আল্লামা মাসঊদের গ্রেফতারে বৃহত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসাবে তাঁকে আদালতে আনা হলে গণমাধ্যমের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তারা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র তাদের দিকেই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে, যখন আল্লামা মাসঊদ আদালতে দাঁড়িয়ে বোমা হামলা প্রসঙ্গে তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর ৩ দশক ধরে প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে গড়ে তোলা অটুট মুখোশ খুলে দিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, “নিজামীকে রিমান্ডে নিন। নিজামীকে রিমান্ডে নিলেই বোমা হামলার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে।”

পরবর্তীতে বিশ্লেষকরা বলেন, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের হাতে ভারতবর্ষের পতনের পর হযরত শাহ আব্দুল আযীয-এর ঐতিহাসিক ‘দারুল হরব’ ঘোষণার পর শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদের উপরোক্ত মন্তব্যটিই ক্ষমতাসীন জালিম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর বক্তব্য ছিলো, এবং সমাজে এই বক্তব্যের সুদুরপ্রসারি প্রভাবও পড়েছে একইরকম বৃহত আকারে।

এরই সূত্রধরে একসময় দেশদ্রোহী ও ইসলামদ্রোহী গোষ্ঠী ‘জামায়াতে ইসলামী’র কবর রচিত হয় বাংলাদেশে। জালিমের রক্তচক্ষুর সামনে শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদের এই বক্তব্যের মাধ্যমেই ‘জামায়াতে’র পতনযাত্রা শুরু হয়েছিলো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল্লামা মাসঊদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে “মিথ্যা, সাজানো ও ভিত্তিহীন” বলে লিখিত মন্তব্য করেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে কারাগারে থাকতেই রাষ্ট্র ও ধর্মদ্রোহী দল ‘জামায়াত ইসলামী’ আল্লামা মাসঊদকে ২ দফা আপোষের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু প্রতিবারই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আল্লামা মাসঊদের ইস্পাত-দৃঢ় মনোবলের সম্মুখে নিরাশ হয়ে ‘জামায়াতে ইসলামী’ আল্লামা মাসঊদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে তাঁর সহধর্মিণীর কাছেও আপোষের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ সন্তান ও সদ্যঘোষিত জানেশীন মাওলানা মাকনুন। কিন্তু সেখানেও জামায়াতকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়।

বোমা হামলার ২টি মামলার ১টিতে তিনি কারাগারে থাকা অবস্থাতেই পুলিশ চার্জশীট দাখিল করে এবং তাঁকে এই মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আল্লামা মাসঊদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে “মিথ্যা, সাজানো ও ভিত্তিহীন” বলে লিখিত মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহী ‘জামায়াতে ইসলামী’ তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় আল্লামা মাসঊদের বিরুদ্ধে তখন আরও একটি মানি লন্ডারিং মামলা করে। কিন্তু এতেও তারা ব্যার্থ হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগই তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সবগুলো মামলারই নিষ্পত্তি ঘটে।

২ দফা রিমাণ্ডসহ দীর্ঘ ৭ মাস কারাগারে জুলুম-নিপীড়ন সয়ে অবশেষে ২০০৬ সালের ১৫ মার্চ শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন।

বন্দীদশায় ঈদের দিনগুলো ছাড়া একাধারে ৭ মাস কেবলমাত্র শুকনো হালকা খাবার খেয়ে রোজা রেখে আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য নজীর স্থাপন করেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ। কারামুক্তির পর আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে তিনি বলেছিলেন, আমার জীবনে আল্লাহপ্রেমের এই সময় আর পাবো না। ইবাদতের এই নিবিড় সময় আর কীভাবে পাবো? কখনোই পাইনি।

সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রামের এই ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে আল্লামা মাসঊদ তাঁর কারা-অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘মাওলানা ফরীদ এখন কারাগারে’ নামে একটি পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর কারামুক্তির বর্ষপূর্তিতে ২০০৭ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে আজ আল্লামা মাসঊদের কারামুক্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা ঢাকা মহানগরীর কার্যালয়ে এক শোকরিয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন মহানগরী জমিয়তের নির্বাহী সভাপতি ও আল্লামা মাসঊদের জানেশীন মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *