আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ ১৭ মার্চ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ দিন থেকে শুরু হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল গোপালগঞ্জের নিভৃত গ্রাম টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেন। মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও বিশ্বনেতায় পরিণত হন। গত বছর ছিল বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতার জন্মশতবার্ষিকী। বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে মূল কর্মসূচি উদযাপন করা সম্ভব না হওয়ায় এ বছর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি ও মুজিববর্ষের কর্মসূচি যৌথভাবে উদযাপিত হবে। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশ নিচ্ছেন।

বাংলার রাখাল রাজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

প্রায় দুইশ’ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে স্বাধীনতার জন্য উত্তাল ভারতের অগ্নিগর্ভে জন্ম নেন শেখ মুজিব। পরাধীন ভারতে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব শৈশব থেকেই জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও নির্যাতন দেখেছেন। মানুষের দুঃখ, কষ্ট দেখে তাদের মুক্তির সংগ্রামে ছাত্র জীবন থেকেই তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।

ব্রিটিশ শাসন-শোষণের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ মুক্ত হলেও বাঙালির ওপর জেঁকে বসে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন। ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র শুরু থেকেই বাঙালির ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে থাকে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তখন থেকেই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে বাঙালি। দীর্ঘ আন্দোলন আর লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিক পথ পেরিয়ে শেখ মুজিব বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ’৭১ এর ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেন।

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তোমাদের যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাক, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। ’

বঙ্গবন্ধুর এই চূড়ান্ত নির্দেশই জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস জোগায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।

চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের তৃতীয় সন্তন। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন।

১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতার বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন তিনি এবং এই কলেজের বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে শেখ মুজিব বিএ পাশ করেন। তিনি ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন শেখ মুজিব।

ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব বাংলা সফরে এসে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ তথা বাঙালি জাতি প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নেমে আসে জেল-জুলুম নির্যাতন।

আরও পড়ুন: বুধবার বুর্জ খলিফা সাজবে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে

রাজনৈতিক জীবনে এক যুগেরও অধিককাল তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। দুইবার তিনি ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, ১৮ বার কারাবরণ করেছেন। পাকিস্তাানি শাসক চক্রের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছেন। ’৫২, ’৫৪, ’৬২, ’৬৬ এর আন্দোলন আর ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০-এর নির্বাচনে বিজয় সবই জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসেন। দেশে এসেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনগর্ঠন ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্থাৎ দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের এই মহান স্থপতিকে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় মানবতার শত্রু, স্বাধীনতাবিরোধী, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘাতক চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *