আত্মশুদ্ধির চেতনায় ইসলাহী ইজতেমায়

আত্মশুদ্ধির চেতনায় ইসলাহী ইজতেমায়

  • মুফতী মুহাম্মাদ আইয়ুব

আলস্য কিংবা ব্যস্ততা যা ই থাকুক সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে আড়মোড়া ভেঙে প্রতি বছর চেষ্টা করি বেলংকা কিংবা ঢাকায় আমার শায়খ ও মুরশিদ শায়খুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ (দা.বা.) এর ইসলাহী ইজতেমায় শরীক হতে।

বারবার কেন ছুটে যাই?

রৌদ্রদগ্ধ অভাগা বরফ শীতল জলে গলা ভিজিয়ে যেমন শান্তি পায়-আমার মতো পাপী হতভাগ্য গোনাহগার এই দরবারে আসলে তেমন শান্তি খুঁজে পাই। আর নতুনভাবে জীবন গোছানের ছক কষি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ইসলাহী মজমায় বড্ড শান্তি পাই। যেই শান্তির জন্যই তো মানুষের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি, অমানুষিক কায়ক্লেশ।

এখানে শুধু বারবার এই কথা ধ্বনিত হয়, বাঁচতে হলে আল্লাহ পাককে মানতে হবে কথা। মুক্তির জন্য নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পথে চলতে হবে। সাহাবাদের ঈমান দীপ্ত জীবন থেকে আলো মাখতে হবে গায়। বারবার শায়খের মুখ থেকে ধ্বনিত হয় পূর্বসূরি আকাবিরদের সূদুরপ্রসারী চীর শান্তির বাণী ‘এক হও,নেক হও’। কত সুন্দর করে তিনি সবাইকে বুঝান ‘আমাদের দিলের সাথী আল্লাহ, আমলের সাথী নবীজী, আর চলার সাথী সাহাবী।’

কোন কালে কে দিতে পেরেছে এত সুন্দর পাথেয়?

ইসলাহী বয়ানে আহ! কত সুন্দর করে শায়খ বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর শব্দ আল্লাহ ও তাঁর নামের জিকির। আল্লাহ নামের জিকিরের স্বাদ, আল্লাহ নামের স্বাদ কখনো কমে না, বরং যত বেশি বেশি করবে তত স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। আল্লার নামের জিকিরে কখনো বিরক্তিও আসে না। যে ব্যক্তি যত বেশি জিকির করবে সে আল্লাহর কাছে তত প্রিয় হতে থাকবে।

কখনো তন্ময় হয়ে শুনি শায়খের এই কথাগুলো, আল্লাহর রহমত পেতে হলে দুটি আমল করতে হবে। ১. নেক হতে হবে। ২. এক হতে হবে। মানুষ যখন নেক ও এক হয়ে যাবে তখন আল্লাহর রহমত আসবে। মুসলমানরা দুনিয়তে জয়ী হওয়া শুরু করবে। আর এই দু’টি শর্ত সমাজে বাস্তবায়ন করতে নবীজী মুহাম্মদ (সা.) পাঁচটি কাজ করেছেন। আমাদেরকেও এই চারটি কাজ করতে হবে। ১. দাওয়াত। ২. তালীম। ৩. তাজকিয়া। ৪. মুজাহাদা। ৫. ইনফাক ফি সাবীলিল্লাহ।

আর কি পাওয়া যায় এই ইজতেমায়?

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হযরতের খলিফাগণ আসেন। যিকির আযকার, হৃদয়ের ব্যাথা মিশ্রিত বয়ান অজিফায় সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে কখন যে সকাল হয় বোঝা মুশকিল। ইজতেমার বিভিন্ন পর্বে ইসলাহী বয়ান, পবিত্র কুরআনী তালিম ও তেলাওয়াত, জিকির ও দুরুদের আমলসহ ধারাবাহিক আত্মোন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ধন্য হন আমার মত তৃষ্ণার্ত মুসল্লিরা। খুঁজে পায় পরকালীন মুক্তির পরম পাথেয়।

মেহমানি সুন্নতের পুনর্জাগরণ

ইসলাহী ইজতেমায় আগত সবাইকে মেহমানদারির সুন্নতে জানেশিনে শায়খুল ইসলাম, উস্তাযে মুহতারাম মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন সাহেব যেভাবে পরিবেষ্টিত করেন, তা সত্যিই আমাদের পতনোন্মুখ এই যুগে প্রথম যুগের কথা মনে করিয়ে দেয়। ইজতেমা আয়োজনের সব কিছুর সমাধান নিমিষেই তিনি করে ফেলেন, আন্তরিকতাপূর্ণ মধুময় ব্যবহারে সবাইকে শিখান, নেক ও এক হওয়ার পূণ্যময় সবক মাশাআল্লাহ।

  • মুহতামিম: জামিয়া আবু বকর সিদ্দীক রা. মাদ্রাসা ও এতিমখানা বলাকইড়, গোপালগঞ্জ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *