পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বৃষ্টির কারণে গত কয়েক দিনের গরম থেকে স্বস্তি মিললেও বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার হয়ে উঠতে পারে ভয়ের কারণ। আবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে রাজধানীতে পরিচালিত জরিপেও সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিহ্নিত করা হয়েছে হটস্পট।
সেসব স্পট ধরে কাজ শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশন। নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি সতর্কও করা হচ্ছে। গত মাসে কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে গঠিত ২১টি দল রাজধানীর দুই হাজার ৫২০টি বাড়ি পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ১১৪টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিচালিত জরিপে দুই সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড এবং স্থান চিহ্নিত করা হয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮, ৪০, ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় ২০ শতাংশের বেশি মশার ঘনত্ব পাওয়া যায়। উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১, ১৫, ২৩ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশের বেশি এবং ৮, ১৪, ২০, ৩৫, ৪৬ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ডিএনসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ড মিরপুরের পল্লবী ও আশপাশের এলাকা, ২০ নম্বর ওয়ার্ড মহাখালী ও এর আশপাশের এলাকা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ১০ থেকে ১৯ শতাংশ মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ডিএনসিসির ১০, ১৩, ১৬, ২৭, ৩০ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে। গত মাসে কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেশি থাকলেও চলতি মাসের চালানো জরিপে ডেঙ্গুর লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘যেহেতু জুন মাসকে ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আমরা দেখেছি গত বছরের তুলনায় এবার একই সময় এডিস মশা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এখন যেহেতু বৃষ্টিপাত বেড়েছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় এবার অন্তত ১০ গুণ বেশি প্রকোপ হতে পারে। ’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজলে শামসুল কবির বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের চিহ্নিত করা এলাকার পাশাপাশি আমরা সব ওয়ার্ডে কাজ করছি। ফগিং দিয়ে লার্ভা ধ্বংস করা যায় না। এর জন্য জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হয়। একই সঙ্গে লার্ভিসাইডিং করা লাগে। বর্তমানে লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য কার্যকরী কীটনাশক ব্যবহার করছি। চলমান চিরুনি অভিযানে বিভিন্ন নির্মাণাধীন ভবন, বাসার আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ছাদবাগানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মেয়র কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। আগামী সোমবার থেকে ১০ দিনের চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এখন সচেতন করা হলেও অভিযানে জেল-জরিমানা করা হবে।’