আমরা আজও এক দেহ | মুহাম্মাদ আইয়ুব
দীর্ঘদিন পর গতকাল সকালে ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। ঘুরে ফিরে সবখানে হাড় হিম করা খবর নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ! ভালো করে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে রাত সাড়ে আটটার দিকে এক বিকট বিস্ফোরণে মসজিদে আগুন ধরে যায় মসজিদে অবস্থানরত সকল মুসল্লী ভাই-ই অগ্নিদগ্ধ হন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইমাম মুয়াজ্জিন সহ মোট চব্বিশ জন ইন্তেকাল করেছেন। “ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” বাকীদের অবস্থা খুবই গুরুতর সঙ্কটাপন্ন। আল্লাহ পাক মৃত মুসল্লী ভাইদের শহিদী মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের ফায়সালা করুন। শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সবরে জামিল অবলম্বনের তাওফিক দান করুন। আহতদের পরিপূর্ণ সুস্থ করে দিন। মসজিদ কমিটিকে যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠার তাওফিক দিন।
সুদূর গোপালগঞ্জ থেকে গতকাল এশার নামাজের পর মুসল্লীদের নিয়ে দোয়ার ভিতর হুবহু এ কথাগুলোই আল্লাহ পাকের আলিশান দরবারে উত্থাপন করছিলাম। বায়তুস সালাত জামে মসজিদের নাম ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। নিহত, আহত মুসল্লী ভাইদেরও কখনো দেখিনি কিন্তু তাদের জন্য হৃদয়ের গভীরে যে টান অনুভব করছি। সারা বাংলাদেশের মানুষ করেছে। মসজিদে মসজিদে তাদের জন্য দোয়া হয়েছে। হচ্ছে।
নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে সাধারণ মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে এতে মুসলিম জাতীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসূলে পাক সাঃ এর জগদ্বিখ্যাত সেই হাদিসখানার কথা-ই বারবার মনে পড়ছে যে, “মুমিনদের পরস্পরের ভালবাসা, অনুগ্রহ, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহ বা শরীরের মতো। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়; তখন সারা দেহের সবগুলো অঙ্গই নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে এবং কষ্ট যন্ত্রণায় জরাগ্রস্ত ও কাতর হয়ে যায়”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
সত্যিই তো! নারায়ণগঞ্জের দূর্ঘটনার দুঃখ সারা বাংলার সব মানুষকে স্পর্শ করে গেছে, সবাইকে নাড়া দিয়ে গেছে। তবে নাড়া দেয়নি সেসব হায়েনাদের যারা গ্যাসের লিকেজ ঠিক করেনি।
মসজিদ মাদ্রাসা ও ধর্মীয় কাজ করে দিতে পেরে সাধারণ মানুষেরা যেখানে আত্মার প্রশান্তি খোঁজে সেখানে একটি গ্যাস কোম্পানির ঠিকাদাররা লিকেজ সারানো বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে বসেছে! (সমকাল)
সে টাকা জোগাড় করতে করতেই ঘটে গেল দূর্ঘটনা!
এ দিকে গতকাল আমাদের এক মন্ত্রী মহোদয় মসজিদ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বড় মজার কথা বলেছেন। “মসজিদের ভেতরে দেড় টনের ছয়টি এসি রয়েছে। এলাকা পরিদর্শনে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ সেখানে বাস করে। এমন এলাকার একটি মসজিদে কীভাবে এত লোডের অনুমোদন দেওয়া হলো, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলেছি।” (সমকাল)
নারায়ণগঞ্জকে বলা হয় শিল্প এলাকা। সেই নারায়ণগঞ্জ সদরের একটা মসজিদে ছয়টি দেড় টনের এসির অনুমোদন কিভাবে দেওয়া হল এটা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে নাকি অতি বিস্ময়ের অথচ গ্যাস কোম্পানির অবহেলা যে এত বড় দূর্ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী সে ব্যাপারে অতটা উৎসাহ তাঁর কথার ভিতর ফুটে উঠল না আফসোস!
শোকের ভিতরও আজ আমার হাসি পায় তবুও চিৎকার করে হাসতে পারিনা। আমার ভাইদের শোক আমায় হাসতে দেয় না। তবে চির সত্য কথা হচ্ছে, গুটিকয়েক আমলার উদ্ভট বাণী দিয়ে যেমন একটি জাতির মনোভাব কোনদিন বোঝা যায় না তেমনি নির্দয় সহিংস ভাবাপন্ন দুই চারজনকে দিয়ে সমগ্র মুসলিম জাতীর মানবতা, দয়া, মমতাকে মুড়িয়ে ফেলা যায়না, যাবে না।
মুসলিম জাতী আজকের সৌদি, আরব আমিরাত, কসোভার মতো মুসলিম রাস্ট্রের মীর জাফর মার্কা ষণ্ডা শাসকদের মতো নয় যারা মুসলিম বিদ্বেষী ইসরায়েলের সঙ্গে বাসর করে মজা পায়। মুসলিম জাতী তো পারস্পরিক ভালবাসা, মায়া মমতায় আজো অক্ষয়, দুর্জয়। সেসকল মুসলিম নামধারী আমলাদের মতো নয় যারা মুসলমানদের ফাঁদে ফেলতে, তাদের দূর্দশা দেখে অট্টহাসি দিতে সদা প্রস্তুত থাকে।
নারায়ণগঞ্জের দূর্ঘটনায় দেশবাসীর সহমর্মিতা, তাদের জন্য দোয়া, কান্নাকাটি ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা আবারও প্রমাণ করল বিশ্ব মুসলিম আজো এক দেহের মতো। এ বন্ধন ও ভালোবাসা আরো দৃঢ় থেকে দৃঢ়তম হোক মুসলিম মিল্লাতের কাছে এই প্রত্যাশা রইল।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক