আমাকে হাসায় ওদের কান্না!

আমাকে হাসায় ওদের কান্না!

আমাকে হাসায় ওদের কান্না!

মুহাম্মাদ আইয়ুব ❑ সবাইকে অবাক করে দিয়ে আজ পাঁচ ছয় মাস পর লিয়াকত মিয়া আবারো মসজিদে এসে সোজা ইমাম সাহেবের নাক বরাবর বসছে আর খুব মন দিয়ে বয়ান শুনছে। আমি ইমনকে চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম আজো ঘটনার তদন্ত করা দরকার, নিশ্চয় গন্ডগোল কিছু একটা হয়েছে।

নামাজের পর মোনাজাত পর্বে লিয়াকত মিয়ার আমিন আমিন ধ্বনি বাকিদেরটা গিলে ফেলল।হাউমাউ করে কান্না কাকে বলে তার সংজ্ঞার জন্য অভিধান ঘাটাঘাটির কোন দরকার নাই কারণ লিয়াকত মিয়া হাতে কলমে বুঝিয়ে দিয়েছে। দোআর ভিতরেই ইমনকে বললাম শরিফ চাচার কাছে বিদুৎগতিতে চলে যাবি। যদি সুদের টাকা মাফ করে দেয় তাহলে বুঝলাম যে, ভরা মজলিসে মামুর কান্না নির্ভেজাল। যেই কথা সেই কাজ, শরিফ ঝড়ো বেগে শরিফ চাচার কাছ থেকে জেনে আসছে বজ্জাত লিয়াকইত্যা তার সুদী করবারিতে অটল।

কি বিষ্ময়কর! আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারের মত জঘন্য কাজ করছে আবার হাউমাউ করে ও কাঁদছে! গু খাচ্ছে আবার কান্নায় মসজিদের পরিবেশ ভারি করছে! কি বিচিত্র খেলা দুনিয়ার! সুদ দাতা, গ্রহিতা আর সাক্ষী দাতা সবাই সমান পাপে পাপী। যারা সুদ খায় তাদের ব্যাপারে সুরা বাক্বারায় আল্লাহ পাকের সুস্পষ্ট ঘোষণা ‘তারা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে’ নাউজুবিল্লাহ মিন যালিক।

আজ সবখানেই লিয়াকত আর লিয়াকত। জয় লিয়াকইত্যা জয়!

আজ রাষ্ট্রের গোড়া থেকে আগা সবখানে লিয়াকইত্যাদের অবাধ বিচরণ, দেশের হর্তাকর্তা এরা। যে যত বড় লিয়াকত তার চেয়ার, পদবী, ফুলের মালা তত বড় তত মজবুত! লিয়াকতরা নোবেল পায়, লিয়াকতরা মরে গেলে রাষ্ট্রীর মর্যাদা পায়। আজ সবখানেই লিয়াকত আর লিয়াকত। জয় লিয়াকইত্যা জয়!

সারা বছর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে রাখবে আর মসজিদে এসে হাউমাউ করবে, মাফ চাইবে এ কেমন তামাশা ভাই? মহা প্রতাপশালী পরাক্রমশালী আল্লাহর সাথে বিটলামি! সাবধান একদম সাবধান! তিনি আল্লাহ, তিনি গফুর আবার তিনিই জাব্বার। তিনি রহিম আবার তিনিই কাহহার। দুনিয়ার সবজায়গায় টাল্টুবাল্টু চললেও তার সামনে সবই অচল। আলো আর আঁধার একসাথে যেমন চলেনা, পরিচ্ছন্নতা আর অপরিচ্ছন্নতা একসাথে যেমনি থাকতে পারেনা ঠিক তেমনি সুদ আর মাগফিরাত এক ব্যক্তির জীবনে একই সময় আসতে পারেনা। তুমি লিয়াকত অনেক বড় পীরের মুরিদ, সমাজে তোমার দানের পাল্লা ভারি, মসজিদ মাদ্রাসার বড় বড় অংক তোমার সম্পদ থেকে, মাসের ত্রিশ দিনের চল্লিশ দিনই তোমার চুলায় ডেগচি উথলায় তাতে কি সবই নাপাকি আর সহজ বাংলায় গু তো গু-ই।

মোনাজাতের পরিবেশে হাসা যায়না তবে বাহিরে এসে ঠিকই আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।

মসজিদ খুলে দেওয়ার জন্য যখন তোমরা লিয়াকত মিয়ারা বড় বড় বুলি কপচাও, খতিব সাহেবের নাক বরাবর যেয়ে মুখ হা করে বয়ান শুন আর মোনাজাতে মৃত ব্যক্তির বোনের মত হাউমাউ করে কেঁদে উঠ তখন আমাদের হাসি পায়, যেনতেন হাসি নয় একদম অট্টহাসি। মোনাজাতের পরিবেশে হাসা যায়না তবে বাহিরে এসে ঠিকই আমরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি। তোমাদের কান্নায় আমাদের হাসি পায়। লিয়াকইত্যারা শুন, তোমাদের শুক্র কেন্দ্রিক এ কান্নায় শুধু তোমাদের চাপা ব্যথা হবে আর আমাদের হাসি বাড়াবে এ ছাড়া বোধহয় আর কোন কাজে আসবেনা এ নেকামি কান্না।

মাগফিরাতের দশক চলে যাচ্ছে সবাই মাফ পেলেও তোমরা দানবীর,সদকাবীররা মাফ পাবেনা নিশ্চয়ই। সুতরাং আগে মায়ের সাথে ব্যভিচারের মত জঘন্য কাজ ছাড়,গু গিলার মত নোংরা কাজ পরিত্যাগ কর তারপর যত মন চায় হাউমাউ কর। তবেই তুমি,তোমরা মাগফিরাতের আশা করতে পার। পরিশেষে করজোড় অনুরোধ, আমাদের আর হাসাইয়োনা।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *