আমাদের কোরবানি ও চামড়া নিয়ে চামাড়ি

আমাদের কোরবানি ও চামড়া নিয়ে চামাড়ি

অসময়ের হালখাতা । আব্দুল কাদির চৌধুরী বাবুল

আমাদের কোরবানি ও চামড়া নিয়ে চামাড়ি

ছোটবেলা দেখতাম কোরবানির চামড়া নিয়ে টানাটানি। কার বাড়ি/বাসায় কোরবানি হচ্ছে আগে থেকেই ফড়িয়াদের নজরে চলে আসতো। কোরবানির দু’দিন পূর্বে থেকেই দু’তিনবার করে একেকজন করে ফড়িয়া আসতো, দরদাম আগে থেকেই চলতো। কার আগে কে ক্রয় করবে, দামের প্রতিযোগিতা চলতো।

বলছি মাত্র দেড় যুগ আগের কথা। মনে আছে তখন একটি সাধারণ গরুর দাম মাত্র ছিল ৮/১০ হাজার টাকা৷ বর্তমানে যেটি বাজারে ৪০/৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এমন একটি গরুর চামড়াও হাজার হতে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হতো। এমন কী— আজকের লাখ টাকার গরুর দাম ছিল বড়জোড় ২৫/৩০ হাজার টাকা। এমন একটি গরুর চামড়া দুই থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো। ছাগলের চামড়াও হারমতো বিক্রি হতো।

আমরা ছোটবেলা দেখতাম— আমাদের মুরব্বিরা বেশ যাচাই করে চামড়া বিক্রি করতেন। সেই চামড়ার টাকা গ্রামের বা আশপাশের গরিব মানুষদের মাঝে বন্টন করে দিতেন।

আমার বোধগম্য হচ্ছে না, আগেকার দিনে মানুষ চামড়াজাত পণ্য তেমন ব্যবহারও করতো না। কিন্তু কাচা চামড়ার যথেষ্ট মূল্য ছিলো।

এখন এমন কী হলো! দিনদিন চামড়া জাত পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি ব্যবহারও বেড়েছে। কিন্তু বড় একটি ধর্মীয় উৎসব কোরবানির কাচা চামড়ার দাম বলতে নেই। নেই কোনো তৎপরতা। বেশ কত বছর ধরেই দেখছি — বৃহৎ উৎসব কোরবানির চামড়া ক্রয় করার জন্য কোনো ক্রেতা নেই। কোনও প্রকার দাম পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়ার দাম না পেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে, সাগরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চামড়া নিয়ে এতো চামাড়ি হচ্ছে কেনো?

এদেশে কত বড় সিন্ডিকেট হয়েছে জানি না। ক্ষুদে ব্যবসায়িরা চামড়া ক্রয় করে ক’বৎসর ধরেই বিপাকে পড়ছেন। লোকশান গুণতে গুণতে কোরবানির কাচা চামড়া ক্রয় করতে তাদের কোনও আগ্রহ নেই। কোরবানি দাতারা অসহায় হয়ে এতিমখানা ও মাদরাসায় চামড়া দিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ওই চামড়া নিয়ে গ্রহীতারাও পড়েন বিপাকে। এতিম শিশুদের কল্যাণে চামড়া সংগ্রহ করলেও প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রয় করতে না পেরে তাদেরও লোকশান গুণতে হয়। অবশেষে স্তুপের স্তুপ চামড়া ফেলে দিতে হচ্ছে।

বর্তমানে একটি সাধারণ গরু চল্লিশ/পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়া কোরবানির জন্য ক্রয় করা যায় না। কিন্তু একটি গরুর চামড়া নাকি মাত্র ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এমন একটি নিউজও ফেসবুকে বাইরাল হয়েছে। আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন নিউজে দেখলাম স্তুপের স্তুপ চামড়া সাগরে ছুড়ে ফেলছে কিছু ব্যবসায়ী। নিশ্চয় এটা কোনো সুখকর খবর নয়। কোরবানির গরুর চামড়া প্রতিবছর এভাবেই বিক্রয় করতে না পেরে হয় মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে, নতুবা সাগরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। একি আলামত!

এদেশে চামড়াশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। চামড়া শিল্পের কদর বেড়েছে। চামড়াজাত পণ্যের আকাশচুম্বী দামও হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের বাড়াবাড়ি দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। কিন্তু অবাক হই যে, সকল কারণে প্রতি বছর কোরবানির কাচা চামড়া নষ্ট করে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে যদি ওই সকল কাচা চামড়া, চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার হতো, চামড়াশিল্প মালিকগণ ওই সকল চামড়া প্রক্রিয়া করে চামড়াজাত পণ্য তৈরি করতো তাহলে আমার বিশ্বাস চামড়াজাত পণ্যের দাম কমে আসতো। সাধারণ মানুষ চামড়াজাত পণ্য ক্রয় করে ব্যবহার করতে পারতো।

আমাদের দেশে ধনীরা লক্ষ টাকা দিয়ে জুতো ক্রয় করেন। গায়ে চামড়ার ব্লেজার পরে। চামড়ার পণ্যে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন যারা, তাদের চোখ নিচের দিকে নেই। তাদের অর্থের অভাব নেই। কিন্তু এদেশে অতি সাধারণ মানুষদের জন্য বিবেচনা করার কেউ নেই৷

এদেশে কোরবানিরমতো একটি বড় উৎসবে কাচা চামড়ার বাজার কেনো পড়ে যায় আমার বোধগম্য হচ্ছে না।

এদেশটায় এতো সিন্ডিকেট! সকল ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট! লুটপাট কেনো হচ্ছে! চামড়া নিয়ে চামাড়ি কেনো হচ্ছে? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির জনকের কন্যা। এদেশের গরিব মানুষের হক রক্ষা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

লেখক : শিক্ষক ও সমাজকর্মী

০২/০৮/২০২০

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *