- আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
দীর্ঘ নয় মাসের তীব্র আহব ও যুদ্ধের পর লাখো মানুষের সাগর সাগর রক্তের ঢল বেয়ে মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের দামাল ছেলেরা এই দিনে। বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা বাধ্য হয় আত্মসমর্পণ করতে। সারা পৃথিবী নতুন করে জানান পেল বাংলার কাদা মাটি সে যে কত দুর্জয়, কত কঠিন। স্বাধীনতা মানুষের মধুরতম আবেগ, জন্মগত অধিকার। বহু স্বপ্ন নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের তাড়িয়েছিল এই দেশের কৃষক মজুর আম জনতা। সংগ্রামে ভাই বলে ভেবেছিল পাঞ্জাবী পাকীদের। কিন্তু অচিরেই টের পেল এরা তো ভাই নয় ছুরিকাঘাতকারী অধম দুশমন। মুখের ভাষাই এরা কেড়ে নিতে উদ্যত। ভাষা আন্দোলন থেকে নিয়ে স্বাধিকার আন্দোলনের কাল বেয়ে ৬৯-এ গণ অভুত্থানে রূপ নিলো বাঙ্গালীর সংগ্রাম। পরিষ্কার হয়ে গেল স্বাধীনতা অর্জন ভিন্ন আর কোনো উপায় নেই পাঞ্জাবী পাকীদের নিপীড়ন নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় দীর্ঘ আহবে জয়ী হলো এ দেশের আম মানুষ। অর্জিত হলো স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা মানুষের মধুরতম আবেগ, জন্মগত অধিকার
রাজনৈতিকভাবে আমরা স্বাধীন, সন্দেহ নেই। কিন্তু আসলেই কি স্বাধীনতার মধুর ফল ভোগ করতে পারছি আমরা আম জনতা? দীর্ঘদিন পার হলেও আজকে বিরাট এই প্রশ্ন মানুষের মাঝে। বৃটিশ বেনিয়া প্রভুরা আমাদের ডিগ্রিধারী তথাকথিত শিক্ষিতদের মন মগজে যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গোলামীর বীজ বপন করেছিল আজ দীর্ঘ দিনেও আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। অস্বীকার করার উপায় নেই সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভিন্ন রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক স্বাধীনতা অনেক সময়ই পরাধীনতার আবিলতায় নিমজ্জিত। প্রভুদের থেকে যা আসবে সবই ভালো, আমার যা আছে তা খারাপ এই গোলামী মানসিকতা কখনই একটা জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। সুতরাং সত্যিকার স্বাধীন হতে হলে মন মগজের দিক থেকে স্বাধীন হতে হবে আগে। ভৃত্য-সুলভ মানসিকতা পরিহার করতে না পারলে স্বাধীনতার উন্মুক্ত আকাশচারী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ভৃত্য-সুলভ মানসিকতা পরিহার করতে না পারলে স্বাধীনতার উন্মুক্ত আকাশচারী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই
আজকের এই দিবসে কুসংস্কৃতির ওপর নিজেদের বিজয় প্রত্যয় দৃঢ় হতে হবে। দুনিয়ার আবিলতা থেকে মুক্ত করতে হবে নিজেকে। তাওহীদের ঈমান ভিন্ন মানুষের মানসিক মুক্তি অর্জিত হতে পারে না কখনো। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৃত্তপনার ওপর বিজয় অর্জন করতে হবে আমাদের। স্বীয় অপপ্রবৃত্তির ওপর যে বিজয় হতে পারে সে-ই তো আসল বীর, আসল বিজয়ী। আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বকে সে আলোকে বিচার করতে হবে আমাদের। মানসিক দেওলিয়াপনার শিকার সকলেই। এ থেকে বাঁচতে না পারলে হাজারো বিজয় দিবস হয়তো পালন করতে পারব কিন্তু বিজয়য়ের স্বাদ রয়ে যাবে দূর থেকে দূরে। তাই দিল্লী বহুত দূর আস্ত, প্রকৃত বিজয় অর্জন এখনো দূরে। আর মন না বদলালে দূর থেকে দূরেই রয়ে যাবে তা। আমাদের বিজয়ী উপলব্ধি শাণিত হোক। এই কামনা।
সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ‘২০০৯