আদিল মাহমুদ-এর দু’টি কবিতা
মুখোশ খসে পড়া আমি
মন খারাপ হলে, মুখোশ পরে থাকি। ভালো কিংবা সুখে থাকার মুখোশ। কিন্তু আম্মার কাছে আসলেই মুখোশ খসে পড়ে। কিভাবে যেন আম্মা বুঝেন এবং অবলীলায় বলে দেন, ‘কিরে, এত মন খারাপ কেন, কিছু হয়েছে তোর?’—
অথচ সারাদিন মুখোশ পরে মন খারাপ বুকে নিয়ে ঘুরি। কেউ বুঝে না। ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধাবি, পরিচিত-অপরিচিত, কেউ না। সবাই বলে, ‘কি খবর, ভালো তো?’ হাসি মুখে বলি, ‘এই তো, ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।’ কেউ বুঝে না!
এদিকে আম্মা, মোবাইলে কণ্ঠ শুনেই সোজাসুজি বলে দেন, ‘আজ সারাদিন না খেয়ে ঘোরাঘুরি করেছিস। কিছু হয়েছে তোর, মন খারাপ নাকি?’—
তারপর স্বার্থপরের মত সব বিষণ্ণতা আম্মার বুকে দিয়ে দেই। নিশ্চিন্ত মন নিয়ে মানুষের মাঝে ফিরি, কিংবা শান্তি স্বস্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি।
আম্মা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণাও নেই। মাত্র ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছেন। তবুও আমি যত পড়ালেখা করি, আম্মা তারচেয়েও বেশি জ্ঞানী কিভাবে হয়ে যান জানি।
আম্মার কাছে আসলেই মুখোশ খসে পড়া আমি দাঁড়িয়ে থাকি।—
আম্মার এঁকে দেয়া ভবিষৎ
বিষণ্ন চোখে-মুখে, শুভ্র মখলের ওম বিছানায়, শুয়ে আছি আম্মার পাশে। তিনি হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন কপালে। এঁকে দিচ্ছেন ভবিষৎ—স্বপ্নিল আলপনা। আগামীর মানচিত্র।
নিচু স্বরে বলছেন—‘অনেক বড় হও। আমি ও তোর বাবা যা পারিনি, তুই তা কর।’
আম্মার শরীরের গন্ধে গন্ধে, সবুজ শাড়ির আঁচলে, স্নেহভরা কোলে, চোখের জল মুছে—একগাল হাসি হেসে, প্রজাপতির চৌকাঠে, নিজেকে সম্রাট ভাবতে শুরু করলাম মসনদে।—