কৃষিচিন্তা । মাসউদুল কাদির
আলু যেনো সোনায় মোড়ানো ডিম
আলু খেলে তালু গরম নয়, গ্যাস হয়। ডাক্তার খাবারে আলু কমিয়ে দিতে বলেছিলেন। আমি তাই করেছি। কিš আলু ছাড়াতো সংসার চলে না, বার বারই ঘর থেকে আলুর তাকাজা আসে, আমি কিনি না। ভেতরে ভেতরে দাম যে বেড়ে যাচ্ছে আলুর সে রহস্য ঘরে জানাই না। আলুর হাফ সেঞ্চুরি হওয়ার পরে আর জানানোর দরকার হয়নি। আলুর উত্তাপে এখন বাজার নয় বাসা বাড়ি পাড়া মহল্লা সবই সরগরম। তাহলে কি শিশুখাদ্য চিপসের দাম বাড়বে? শিশুখাদ্যে এমনিতেই বিষ মেশানো থাকে। গাঁ গেরামে নকলপণ্যের রাজত্ব দেখে এলাম। ৩ টাকার ওষুধ বিক্রেতাও সেখানে ডাক্তার। কথাটা ঠিক এভাবে হয়তো অনেকেই নিতে পারবেন না। কিন্তু মুদি দোকান্দারকে কোনোভাবেই ওষুধ বিক্রি করা উচিত নয়। গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। কোল্ড ড্রিংকসে কী অসামান্য ভাউতাবাজি হচ্ছে তা চর্মচোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। দামি ব্রান্ডের নামের সঙ্গে মিল রেখে নকল কোম্পানীগুলোও সরব।
আগে আমরা বলতাম, আহ্হা, গাঁয়ের খাবার দাবার কত্ত পিওর। যা শহর থেকে যায় তাই মূলত দুই নম্বর। গ্রাম এখনও পিওর। শহরের মানুষেরা গ্রামে নকলের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। শহরের স্যুটেডবুটেড মানুষদের চালাকির শিকার হয়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে গাঁয়ের মানুষদের কান্না থামে না। আশপাশে কলকারখানা বসিয়ে এ-ই শহরের মানুষেরাই গ্রামের খালে খালে ছড়িয়ে দিয়েছে বিষ পানি। পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে মাছের স্বাদও। মনখোলে বাতাস গ্রহণের সুযোগ নেই। একবার সেই খালের দিকে তাকালে মরা বুড়িগঙ্গার মতো বমি বমি ভাব হয়। যেনো চিতায় জ্বলছে মরা মানুষের লাশ। দিন দিন গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে অমানুষদের দখলে।
আলুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। তবু সামান্য আলোচনা এখানে করে রাখলাম।
আলুর পুষ্টি উপাদান : আলু কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে উচ্চমানের ক্যালরি আছে প্রায় ৯৬ কিলোক্যালরি। ৬০ গ্রাম আলু ভাজিতে প্রায় ২৩৫ কিলোক্যালরি এবং ৪০ গ্রাম আলুর চিপসে প্রায় ২০৫ কিলোক্যালরি পাওয়া যায়। আলুতে স্বল্প পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। আলুর খোসায় খাদ্য আঁশ আছে ১০০ ভাগ।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : ব্লাড প্রেসারকে (রক্তচাপ) ঠিক রাখতে ভীষণভাবে সাহায্য করে আলু। কারণ আলুতে আছে কুকোয়া-মাইনাস নামের এক ধরনের কেমিক্যাল। তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত আলু খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে।
হজমে সহায়ক : হজমের পক্ষে আলু খুব ভাল। কারণ আলুতে হাই ফাইভার থাকে। আলুকে বলা হয় এসিডিটি প্রতিরোধক।
ত্বকের পক্ষে উপকারি : আলু, বেটে কিংবা আলুর রস ত্বকে লাগালে বিভিন্ন দাগ, র্যাশ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আলুতে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে যা ত্বকের জন্য জরুরি।
রোগ প্রতিরোধ : আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। একটি মধ্যম আকৃতির (১৫০ গ্রাম) আলুতে প্রায় ২৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে।
মানসিক চাপ কমায় : আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ রয়েছে, যা মন ভালো রাখার জন্য কার্যকরী দুটি উপাদান সেরেটোনিন ও ডোপামিন নামক নিওট্রান্সমিটার গঠনে সহায়তা করে। নিওট্রান্সমিটার মস্তিষ্কে অনুভূতি আদান প্রদান করে থাকে এবং মানসিক চাপ কমিয়ে মন ভালো করতে সহায়তা করে।
মস্তিষ্ক সচল ও কর্মক্ষম রাখে : আলুতে গ্লুকোজ, অক্সিজেন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এমিনো এসিড, ওমেগা-৩ ও অন্যান্য ফ্যাটি এসিড আছে, যা মস্তিষ্ক সচল ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। আমি মূলত কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষিকাজ দেখে দেখে বড়ো হয়েছি। জমিতে চাষ করা মানুষটির জন্য খাবার বয়ে নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তখন আমার মা পীড়াপীড়ি করে পাঠাতেন। আজ মনে হয়, কতই না মধুর ছিল সেই দিনগুলো।
একবার বাবা একটা বড়ো জমিতে আলু খেত করেছিলেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে প্রচুর আলু উৎপন্ন হলো। ঘরে ও-ই পরিমাণ জায়গা ছিলো না। তখন আধেক জমির আলু তোলে বাবা দুটো কাজ করলেন,
এক. যারা পেছনে পেছনে আলু টোকাচ্ছিল, তাদেরকে থলে ভরে আলু দিয়ে দিলেন।
দুই. জমি থেকেই বাবা ১ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করে দিলেন। ফলে যারা আলুর জমি করেনি তারা সবাই একমণ, দুই মণ করে আলু সংগ্রহ করে নিলো।
জমির আইলে বসে অল্প দামে আলু বিক্রির সেই চিত্র চোখে ভাসে আজও। আজ আলু যেনো সোনায় মোড়ানো ডিম।
লেখক : কথাসাহিত্যিক