আলোকিত এক সীরাত সম্মেলন

আলোকিত এক সীরাত সম্মেলন

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

কাল সন্ধ্যা থেকে একটি ছবি বারবার চোখে পড়ছে। ছবিতে একজন হলেন আলেমকুল শিরোমণি, লাখো আলেমের উস্তাদ, দারুল উলুম দেওবন্দের সূর্যসন্তান, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ (দামাত বারাকাতুহুম), আরেকজন হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিপাহসালার, ‘ময়দানের বীর ও খানকাহর পীর’ সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সাহেব ( দামাত বারাকাতুহুম)। বড় চমৎকার দৃশ্য। নয়ন জুড়িয়ে যায়।

অনুষ্ঠানটিও অনেক মোবারক— ‘কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় সীরাত সম্মেলন। বরকতময় অনুষ্ঠান এটা। যেখানে পেয়ারা হাবীবের সীরাত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটা অনেক মুল্যবান প্রোগ্রাম।

সবচেয়ে বড় বিষয়, এই মোবারক অনুষ্ঠানের মধ্যমণি হিসাবে যাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে, তিনি একজন উঁচুমানের সীরাত গবেষক। প্রথিতযশা আলেম এবং প্রাজ্ঞ হাদীস বিশারদ। যার লিখনী মানুষকে আন্দোলিত করে, যার বক্তৃতা শ্রোতাকে মোহগ্রস্ত করে ফেলে, যিনি নববী আদর্শে উজ্জীবিত এক সত্তা, সেই আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ  সাহেব যেন পুরো অনুষ্ঠানকে আলোকিত করে ফেলেছেন।

আমি মনে করি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এটা বড় পাওনা। এরকম মেধাবী আলেম, দেওবন্দী চিন্তাধারার প্রবাদপুরুষ এবং শাইখুল ইসলাম মাদানী এর সাহেবজাদা ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহ. এর খলীফা, আল্লামা মাসঊদ সাহেবের মতো মানুষ পীর সাহেবদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা, এটা তাদের এগিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে।

ইসলামী আন্দোলন তথা চরমোনাই ওয়ালাদের কাজগুলো আল্লাহ কবুল করুন। যে প্রোগ্রামে শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের মতো ব্যক্তি আগমন করেন, নিঃসন্দেহে সে প্রোগ্রাম অনেক গুরুত্ব বহন করে। সেটার ভারত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়।

আমাদের হয়ত অনেকের জানা নেই শাইখুল ইসলাম আল্লামা মাসঊদ কত বড় ব্যক্তিত্ব। তাঁর ওজন বা ব্যক্তিত্ব কত ঊর্ধ্বের। তাঁর ইলমী যোগ্যতা, আত্মশুদ্ধির মাকাম, তাঁর লিখনী —এগুলোর পরিধি কত যে সীমাহীন; বর্ননার ভাষাও যেন আমার নেই।

কদিন আগে তাঁর একটি সীরাতগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। যেটার ১ম খণ্ডটি চারশত পৃষ্ঠা। এক অতুলনীয় গ্রন্থ। ইতিমধ্যে সেটার সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম প্রায় শখানেক বিভিন্ন বিষয়ের উপর তাঁর লিখনী রয়েছে। এক ব্যতিক্রমধর্মী লেখক তিনি। আকর্ষণীয় শব্দচয়ন, বর্ণনাশৈলী আর উপস্থাপনা পাঠকের মন কেড়ে নেয়। যেমন তিনি সুযোগ্য আলেম, আবার সেরকম প্রতিভাবান লেখক। এরূপ ব্যক্তি মেলা ভার।

বুখারীর দরসে প্রায় পঞ্চাশবছর হয়ে গেল। একাধারে বুখারী শরীফের দরস দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দরসগুলো অসম্ভব জনপ্রিয়। একেবারে পূর্বসূরী আলেমদের অনুকরণে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি সুলুকের লাইনের একজন মহান সাধক। অতি উচ্চমার্গে তিনি আসীন হয়ে আছেন। সেরকম ব্যক্তি কোনো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা মানে সেটার মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাওয়া। তাছাড়া একজন সীরাত গবেষক যদি কোনো সীরাত সন্মেলন যোগদান করেন, তাহলে সে অনুষ্ঠান যেন আলোকিত হয়ে যায়।

আজকাল বহু জায়গাতে সীরাত বিষয়ক প্রোগ্রাম হয়, কিন্তু উক্ত বিষয়ের উপর জাঁদরেল গবেষক পাওয়া দুষ্কর। অনেকেই অনির্ভরযোগ্য কথা টেনে আনেন। যে বিষয়াদির কোন ভিত্তি নেই, সেসব তুলে ধরেন। কিন্তু পীর সাহেবদের অনুষ্ঠান যেন ব্যতিক্রম, বিজ্ঞ সীরাত গবেষকই হলেন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি। যাতে আলোকিত হয়ে উঠল পুরো মাহফিল।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ, পীর সাহেব চরমোনাই এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে মোবারকবাদ জানাই। আপনাদের সকল কর্ম আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমীন।

লেখকঃ শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *