আল-আকসা থেকে অন্তত ৩৫০ জন গ্রেপ্তার

আল-আকসা থেকে অন্তত ৩৫০ জন গ্রেপ্তার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে বুধবার ভোরে সংঘর্ষের পর ইসরায়েলের পুলিশ ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, তারা ‘৩৫০ জনের বেশি ব্যক্তি, যারা নিজেদের সহিংসভাবে মসজিদের ভেতর ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল, তাদের গ্রেপ্তার ও সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন’। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ‘মুখোশ পরা ব্যক্তি, পাথর নিক্ষেপ করা ব্যক্তি এবং মসজিদকে অপবিত্র করা ব্যক্তিরা আছেন’ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ রয়েছে।

পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, ‘মুখোশধারী আন্দোলনকারীরা’ মসজিদের ভেতর নিজেদের ব্যারিকেড দেওয়ায় পুলিশ মসজিদে ঢুকেছিল। কিছু মুসল্লিরা তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং আতশবাজি পোড়ায়।

ফিলিস্তিনের বার্তা সংস্থা ওয়াফা ‘কয়েক ডজন’ মুসল্লির আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। আর রাবার বুলেটের আঘাতে সাতজন ফিলিস্তিনির আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট।

মুসলমানদের এখন রোজা চলছে। এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা থেকে ইহুদিদের ‘পাসওভার’ শুরু হচ্ছে, যা চলবে আটদিন।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে ইসরায়েলি বাহিনীকে রাইফেলের বাট ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর মুসল্লিদের মারতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের হারেৎস পত্রিকা জানিয়েছে, ‘রোজার নামাজের পর কয়েকশ মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে নিজেদের ব্যারিকেড দেওয়ার পর সংঘর্ষ হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে মুসল্লিদের সরাতে থাকে। কিন্তু এক ডজনের মতো মুখোশ পরা মুসল্লি মসজিদের ভেতর থেকে যান। তাদের সরাতে দাঙ্গা পুলিশ স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’

হারেৎস বলছে, বুধবার পাসওভার শুরুকে ঘিরে কিছু ইহুদি অ্যাক্টিভিস্ট মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি পশু জবাই করতে চাইলে উত্তেজনা বেড়ে যায়।

ফিলিস্তিনিরা সম্ভাব্য পশু জবাইয়ের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ এটা মসজিদ কমপ্লেক্সের ভেতর ইহুদিদের প্রার্থনা বলে বিবেচিত হবে। মঙ্গলবার একজন শীর্ষস্থানীয় ইসরায়েলি রাব্বি পশু জবাই ঠেকাতে স্থানীয় এলাকা থেকে পশু বিক্রিতে বাধা দেন।

মসজিদ কমপ্লেক্সে সংঘাতের পর গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়। ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স মোট ৯টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে চারটি আটকে দেওয়া হয়, আর চারটি ‘খোলা জায়গায়’ পড়েছে বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পিএ আল-আকসা মসজিদে সংঘাতের সমালোচনা করেছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনেহ বলেছেন, ‘আমরা পবিত্র স্থানগুলোতে লাল রেখা অতিক্রম করার বিরুদ্ধে দখলদারদের সতর্ক করছি, যা একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটাবে।’

সৌদি আরব, জর্দান ও মিসরও মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

এদিকে গাজার নিয়ন্ত্রক হামাসের সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের ‘আল-আকসা মসজিদ রক্ষায়’ সেখানে যেতে বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও আরো কয়েকটি দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।

সম্প্রতি দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে সংঘাত বেড়েছে। মুসলমানদের রোজা, ইহুদিদের পাসওভার ও খ্রিস্টানদের ইস্টার একই সময়ে পড়ায় এই মাসে উত্তেজনা থাকবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল।

জেরুজালেমের টেম্পল পাহাড় ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত। টেম্পল পাহাড়ের ‘ওয়েস্টার্ন ওয়াল’ ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান। অন্যদিকে মুসলমানদের কাছে টেম্পল পাহাড় ‘হারাম আল-শরিফ’ নামে পরিচিত, যার মধ্যে ডোম অফ দ্য রক ও আল-আকসা মসজিদ রয়েছে। স্থানটি মুসলমানরা পরিচালনা করে থাকে। আর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে ইসরায়েলি বাহিনী।

  • সূত্র : ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *