ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, নাকি প্রতিশোধ

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, নাকি প্রতিশোধ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : সালটা ২০২২। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষটা যেভাবে হচ্ছে তাতে ১৯৯২ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের দৃশ্যপট মঞ্চায়িত হওয়ার অপেক্ষায় অস্ট্রেলিয়ায় মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ফরম্যাট ভিন্ন হলেও ৩০ বছর পর একই রূপকথার ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে বাবর আজমরা। ইমরান খানরা মেলবোর্নেই ইংলিশদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল। এবার সেই মেলবোর্নে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরও একটি বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি।

অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সামনে সুযোগ বদলা নেওয়ার। ৩০ বছর আগে জশ বাটলারদের পূর্বসূরীরা যা পারেননি, সেটাই মেলবোর্নে করার সুযোগ বতর্মান দলটির। এখন অপেক্ষা মেলবোর্নে বৃষ্টিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাকিস্তান ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে নাকি ইংল্যান্ড ৩০ বছর আগের প্রতিশোধ নেয়।

১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ মেলবোর্নে বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁয়েছিলেন ইমরান খান। গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে পাকিস্তান প্রথমবার বিশ্বসেরা হয়েছিল। এবারের মতো সেবারও মার্টিন ক্রোর নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে পাকিস্তান ফাইনালের টিকিট কেটেছিল। সবমিলিয়ে ইমরান খানের সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটির সঙ্গে বাবর আজমের পাকিস্তানের বেশ মিল রয়েছে। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলেন বাবর আজম ঘোষণাও দিয়েছেন ’৯২ ফিরিয়ে আনবেন তারা। এদিকে, ৩০ বছর আগের পূর্বসূরী গ্রাহাম গুচ, ইয়ান বোথাম, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, নেইল ফেয়ারব্রাদার, ক্রিস লুইসদের হারের বদলা নেওয়ার সুযোগ জশ বাটলার, অ্যালেক্স হেলস, ফিল সল্ট, মইন আলীদের।

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়। টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভিতে ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। এই ম্যাচ দিয়েই পর্দা নামবে চলতি বিশ্বকাপের। বাবর আজমের পাকিস্তান কিংবা জশ বাটলারের যারাই ট্রফি জিতুক, দ্বিতীয়বারের মতো ট্রফিতে ‍চুমু খাওয়ার সুযোগ পাবে দুই দল। এর আগে ২০০৯ সালে পাকিস্তান এবং ২০১০ সালে ইংল্যান্ড ট্রফি জিতেছিল।

তবে ফাইনালের জমজমাট লড়াইয়ে আগে আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে! আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে আগামী দুইদিন মেলবোর্নে বজ্রপাতের সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ফাইনাল ঠিকঠাক মতো মাঠে গড়ানো নিয়ে শঙ্কায় আয়োজকরা। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবিবার টস করা সম্ভব না হলে রিজার্ভ ডেতে সোমবার পুরো ২০ ওভারের খেলা চালানোর চেষ্টা করা হবে। যদি দুদিনেও ন্যূনতম ওভার খেলা সম্ভব না হয়, তাহলে দুই দলকে ট্রফি ভাগ করে দেওয়া হবে। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সেমি-ফাইনাল দুই দিন ধরে হয়েছিল।

এদিকে, দুই দলের ফাইনাল ম্যাচটিতে উপভোগ্য লড়াইয়ের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড দারুণ ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট খেলেছে। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে বাজে ক্রিকেটের পর শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেই বাবর আজমের দল ফাইনালে উঠেছে। অবশ্য সেখানে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়াও ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপে এই দুই দলের লড়াই হয়নি যদিও। ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দল দুটির। ২০০৯ এবং ২০১০ আসরে দুইবার একে অপরের বিপক্ষে খেলেছিল। দুই ম্যাচেই জিতেছিল ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়েও ইংলিশরা এগিয়ে। ২৮টি ম্যাচের মধ্যে ১৮ বার জিতেছে তারা। পাকিস্তান ৯টি ম্যাচ জিতেছে। সবকিছু মিলিয়ে ফাইনালে ফেভারিট হিসেবেই ইংলিশরা মাঠে নামছে।

ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলারও ফাইনাল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। সেমিফাইনালে তারা ভারতকে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে। এমন জয়ের পর যে কোন অধিনায়কের কণ্ঠেই আত্মবিশ্বাসের সুর শোভা পাওয়ার কথা। যেমনটা দেখা গেলো বাটলারের কথায়, ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পারফরম্যান্স আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তবে এটা ভেবে কিংবা এটার আত্মতুষ্টি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কালকে আমরা কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নতুন করে শুরু করবো। আপনি যখন শিরোপার জন্য লড়াই করবেন, তখন বুঝতে হবে কোন কিছুই সহজ হবে না। সুতরাং তাদের ওপর ও আমাদের ওপর ফোকাস রাখবো। এখন যেটা প্রয়োজন সেটা হলো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে প্রয়োগ করা। কীভাবে সেরাটা দেওয়া যায় সেটার চেষ্টা করা।’

এদিকে নিজেদের পরিকল্পনায় অনড় থেকে সাফল্য তুলে নিতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তান। দলটির অধিনায়ক বাবর আজম বলেছেন, ‘আমি নার্ভাসের চেয়ে বেশি উচ্ছ্বসিত। অবশ্যই চাপ আছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আত্মবিশ্বাস ও বিশ্বাসের মাধ্যমে চাপকে অতিক্রম করা সম্ভব। আর ভালো ফল পেতে হলে আপনাকে এটা করতেই হবে।’

আরও যোগ করে বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল। আমরা বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছিলাম। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ চার ম্যাচ জিতে ফাইনালে এসেছি। আমরাও কিন্তু ভালো পারফরম্যান্স করেছি। আমাদের স্ট্রাটেজি হলো পরিকল্পনায় অনড় থাকা এবং শক্তিমত্তার দিক পেস বোলিং ব্যবহার করে ফাইনাল জেতা।’

পাকিস্তানের ফাইনালের মঞ্চে যাওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। ভারত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারের পর কঠিন সমীকরণে পড়ে যায় বাবর আজমরা। ফলে গ্রুপের শেষ তিন ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি অন্য দলগুলোর জয়-পরাজয়েও চোখ রাখতে হয়েছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেদারল্যান্ড হারালে পাকিস্তানের পথটা সহজ হয়ে গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ঠিক ৩০ বছর আগেও একই সমীকরণ ছিল ইমরান খানদের। যা ক্রিকেট ইতিহাসে মিরাকল অব নাইন্টি টু হয়ে অমর হয়ে আছে। এবার কি বাবর আজম পারবেন ‘মিরাকল অব টুয়েন্টি টু’ উপহার দিতে? নাকি ৩০ বছর আগের প্রতিশোধ নিয়ে অধিনায়ক জশ বাটলার নতুন গল্প লিখবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *