ইরান সফরের পুনরাবৃত্তি আবার যেন না ঘটে

ইরান সফরের পুনরাবৃত্তি আবার যেন না ঘটে

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

আজ বড্ড স্মরণ হচ্ছে আল্লামা কাজি মুু’তাসিম বিল্লাহ, খতিব উবায়দুল হক,  আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী, মুফতি নুরুল্লাহ (রহিমাহুমুল্লাহ)-সহ আরো কিছু দ্বীন-ইসলামের লড়াকু  সৈনিকদের, যারা বাতিল শক্তির সাথে কোন আপোস করেননি। সবচেয়ে বড় সিফাত ছিল ঐসব মনিষীদের, বাতিল যে সুরতেই আসুক না কেন; সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা চিনে ফেলতেন।  মোটেও পাত্তা দিতেন না।  তাঁদের ভুল বুঝানো সম্ভব ছিল না।

বিশেষ করে শিয়া, কাদিয়ানী, মওদুদী —এসব ভ্রান্ত মতবাদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতেন তাঁরা।  কখনই কাদিয়ানী, শিয়া, মওদুদী —এসব গোষ্ঠীর ব্যাপারে তারা নমনীয় হননি। বাংলাদেশে অনেক সময় কিছু কিছু আলেমকে কোনো কোনো বাতিল ফেরকার সাথে সাময়িক সখ্যতা গড়তে বা এদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। কিন্তু  উপরোক্ত মনীষীগণ কোনোদিন কোনো বাতিল ফেরকার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দিয়ে কথা বলেননি। বরং ‘ফেরাকে বাতেলা’—ভ্রান্ত দল ও গোষ্ঠীগুলো মুখোশ উম্মোচন করেছেন সবসময়।

আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী এবং আল্লামা কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ সাহেবদ্বয়কে বেশী চৌকান্না মনে হয়েছে আমার কাছে। এবং তারা ছিলেন সাহসী। যে কোন মজলিসে বাতিল ফেরকার অসারতা তুলে ধরতেন। কখনো ছেড়ে কথা বলতেন না।

শিয়া মতবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐসকল মনীষীদের কঠোর অবস্থান ছিল। আল্লামা শামসুদ্দিন কাসেমী সাহেব তো এব্যাপারে কিতাব রচনা করে গেছেন। শিয়া, কাদিয়ানীদের অসারতা এবং তাদের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করে গেছেন। শিয়াগণের এমন কিছু জঘন্য আকিদা রয়েছে, যেগুলো মানুষের ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়, মানুষকে ঈমানহারা করে দেয়। শিয়াদের এই ভ্রান্ত আকিদা ও বিশ্বাসের ব্যাপারে তারা সাধারণ মুসলিমদেরকে লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে সতর্ক করেছেন।

ওলামায়ে দেওবন্দ একবাক্যে শিয়াদের গোমরাহ বলে থাকেন। শিয়াদের মধ্যে অনেক উপগোষ্ঠী তো ‘কাফির’ এর পর্যায়ে। যারা দ্বীন ইসলামের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। যেটা তাদের বক্তব্য-লিখনী এবং কর্মসূচি থেকে প্রতীয়মান হয়। এজন্য কোন দেওবন্দী আলেম শিয়াদের প্রশ্রয় দেননা। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন। কেননা, ওরা এমন চতুর, দেওবন্দী আলেমদের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে কোনো ঝঞ্ঝাট সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে দেওবন্দী আলেগণ তাদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক।

সৌদি আরবের আলেমগণ শিয়াদের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। শিয়ারা ফেরাকে বাতেলা এবং ইসলামের দুশমন, সেটা তারা ভাল করেই জানেন। বেশ কয়েকবছর আগে  ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আকবার হাসেমী রাফসানজানি মদিনাতে এসেছিলেন। যেহেতু তিনি রাষ্ট্রীয় মেহমান তাই তাকে মসজিদে নববীর ইমাম হুজাইফি সাহেব নিজে সাথে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজাতে সালাম পেশ করার জন্য নিয়ে যান। জনাব রাফসানজানি সাহেব নবীজীর রওজাতে সালাম প্রেরণ করলেন। এরপর যথাস্থানে পৌঁছে তাকে বলা হল, এখানে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর রয়েছে, এখানে সালাম দিন।  সে তাদের দুজনের কবরে সালাম দিতে অস্বীকৃতি জানাল। শুধু তাই নয়, তাদেরকে সে দুশমন মনে করে (নাঊজুবিল্লাহ)।  পরেরদিন মসজিদে নববীর ইমাম সাহেব এব্যাপারে খুতবা প্রদান করেন এবং শিয়াদের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করে দেন।

শিয়াদের আকিদা বিশ্বাস অত্যন্ত জঘন্য। তারা যেসব চিন্তা-চেতনা লালন করে, এর দ্বারা ঈমান থাকেনা। ফলে ওলামায়ে হক্কানী শিয়াদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার সচেষ্ট থাকেন এবং মানুষকেও দূরে রাখতে চেষ্টা করেন।

তবে শিয়াগণ অত্যন্ত ধূর্ত। ওরা হকপন্হী আলেমদের কাবু করার নানান ফন্দী-ফিকির করে থাকে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর জীবদ্দশায় শিয়াগণ কিছুটা সফল হয়েছিল। তারা তৎকালিন বাংলাদেশের কিছু আলেমদের দাওয়াত দিয়ে ইরান পর্যন্ত নিতে সক্ষম হয়। যে সফরের কারণে ওলামায়ে হক্কানী এর মধ্যে বিভাজন তৈরী হয়। ভুল বোঝাবুঝি হয় অনেক। ওরা আলেমদের সমর্থন আদায় করতে না পারলেও কিছু আলেমদের মুখ বন্ধ করতে পেরেছিল। ইরান সফরের পরে কিছু আলেম শিয়াদের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এটে দেন। আর এটাই ছিল তাদের বড় পাওনা।

ইরান সফরের রেশ কিন্তু অনেকদিন ছিল আমাদের দেশে। বহু তর্ক-বিতর্ক এবং ঝগড়া-ফাসাদ ভরে গিয়েছিল আলেম সমাজের মাঝে। কেউ শিয়াদের সাধু বলতে ভুল করেননি। যেখানে আলেমগণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে কাজ করছিল। সেখানে মাত্র একটা ইরান সফর সবকিছু মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়।

হাফেজ্জী হুযুর (রহ.)-এর জামানা খতম হয়ে গেছে অনেক আগে। তবে ওলামায়ে দেওবন্দের সূর্যসন্তানদের দাপটে আর কিন্তু শিয়াগণ আলেমদের মাঝে প্রবেশ করার সাহস পায়নি। বা কোন ধরনের প্রণোদনা বা আনুকুল্যে কাউকে কাবু করতে পারেনি। যদিও কখনো কোথাও আসার চেষ্টা করেছে, সেটা বাতিল পরিচয়ে এসেছে। শিয়াগণ বাতিল এবং প্রত্যাখ্যাত —সে হিসাবেই তাদের আগমণ ঘটেছে।

অনেকবছর পর আবার আমাদের দেশের কিছু শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে এখন শিয়া আলেমদের পদচারণা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ কী উদ্দেশ্যে তাদের আগমন সেটা বলা মুশকিল। বিশেষ করে উম্মুল মাদারিস হাটহাজারীতে তাদের অনুপ্রবেশ বড় চিন্তার বিষয়। তবে যে সুরতেই আসুক, বাতিল তো বাতিল। তাদের ভ্রান্ত আকিদার ব্যাপারে আমাদের সবার সজাগ থাকা উচিত।

হাটহাজারী, পটিয়া, জিরি, এগুলো বড় বড় মাদ্রাসা। নিঃসন্দেহে সেখানে অনেক চিন্তাশীল আলেম রয়েছেন। ফেরাকে বাতেলার সাথে লড়াই করার মত ব্যক্তিগণ সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ আছে। এজন্য ঐসকল প্রতিষ্ঠানের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। কিন্তু এই হাটহাজারী, পটিয়ার মত বাংলাদেশের সব জায়গাতে ইলমী ব্যক্তিত্ব এবং বিতর্ক করার মত মানুষ নেই। এখন শিয়া আলেমগণ যদি বাংলাদেশে সকল মাদ্রাসাতে সফর শুরু করেন, তখন কিন্তু বিষয়টা খতরনাক হয়ে দাঁড়াবে। কেননা, ওরা সুকৌশলে তাদের মতবাদে কোন সরলপ্রাণ আলেমকে কাবু করে ফেলতে পারে।

আরও পড়ুনঃ মানুষ ভালো কাজ করলে আল্লাহ দুনিয়ার সবকিছুকে তার অনুকূল করে দেন : আল্লামা মাসঊদ

এজন্য শিয়াদের বিশ্বাস করা যায় না। সাহাবাদের গালি দেয়, পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারেও কথা বলে, এমন শিয়াও আছে। এজন্য ওরা যে কোন সময় ক্ষতি করতে পারে। সেই আশির দশকে মক্কা মোক্কাররমার মত পবিত্র জায়গাতে অঘটন ঘটিয়েছিল। সুতরাং ওদেরকে আর কারা বিস্বাস করবে? তাই তো আলেমদের সজাগ থাকার দরকার।

এবার যেন আবার ইরান সফরের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। একবার ইরান সফরের দ্বারা আলেমগণের মাঝে যে ক্ষত তৈরী হয়েছিল।সেটা শুকাতে দেরী হয়েছিল অনেক। আবার যদি তেমন কোন সফর এবার ঘটে তাহলে এবার ক্ষতটা সহজে শুকাবে বলে মনে হয় না। কেননা, বর্তমান বাংলাদেশে দেওবন্দী হালকার মাঝে মুরুব্বী শুন্যতা বিরাজ করছে। তাছাড়া সেই কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ এবং শামসুদ্দিন কাসেমী ও খতীব উবায়দুল হকের মত সাহসী আলেমের বড্ড অভাব। বর্তমানে দু-একজন কাজি সাহেবের হাতেগড়া শাগরেদ আছেন, তাঁরাও কোনঠাসা অবস্হানে। তারা বাতিলের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক। কিন্তু নানান ভাবে তাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়।

ওরা এসেছে, ভালকথা। কিন্তু তাই বলে আমরা কিন্তু এবার তেহরান যাবনা। তেহরান গিয়ে আলেমদের মাঝে আর কোন বিভেদ তৈরী করতে চাইনা। ওরা যতই প্রণোদনা আর আনুকুল্যে ভাসিয়ে দিক, আমরা ভেসে যাবনা।এমন প্রতিজ্ঞাই সবার হওয়া চাই।

আল্লাহ তাআলা সকলকে সহী বুঝ দান করুন। আমিন।

লেখকঃ শিক্ষক ও কলামিষ্ট

মতামত বিভাগে প্রকাশিত লেখার দায় লেখকের

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *