ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার | মাসউদুল কাদির

ইসলামে প্রতিবেশীর অধিকার | মাসউদুল কাদির

প্রতিবেশী প্রতি যে মমত্ববোধটুকু এখনো অটুট আছে সেটা একান্তই গ্রামকেন্দ্রীক। শহুরে জীবনে যেটা অনভিপ্রেত, আশা করা যায় না। ডানে-বামে বেশ ক’টা ফ্লাট থাকলেও কেউ কাউকে চিনে না, জানে না। চেনার বা জানার চেষ্টাও নেই আমাদের মধ্যে। ভিনদেশী আজনবি বা অপরিচিতের মতোই আমরা শহরে বেড়ে উঠছি। এটা যে আমাদের সামাজিক সম্পর্কের জগতকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।

মূলত প্রতিবেশী মানে নিজের ঘরের আশপাশের লোকজনকেই আমরা বলে থাকি। প্রতিবেশীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ইসলামের আরেকটি সৌন্দর্য। ইসলাম কেবল নিজেকেই উদরভর্তি খেতে উৎসাহিত করে না। প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়াকেও ইসলাম গুরুত্ব দেয়। জমি বিক্রি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিবেশীকে আগে জিজ্ঞেস করার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম তো একজন মুমিনকে আরেকজন মুমিনের ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছে। হাদীসেও আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানগণ ভাই ভাই। [মুসলিম]

এখানে তো সারা দুনিয়ার মানুষই শামিল, অন্তর্ভুক্ত। নবীজীর এ বক্তব্য মূলত মানুষের সম্মানই বৃদ্ধি করেছে। আর মানুষই তো প্রতিবেশী। তাই প্রতিবেশির অধিকার সবার আগে। প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে নিজের মুখে খাবার গ্রহণও ঠিক নয়। ইসলাম প্রতিবেশির মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবেশিকে মূল্যায়ন করেছে। ঘরের চতুর্দিকের চল্লিশ ঘরের লোকদেরকেই হাদীসের আলোকে প্রতিবেশি বলে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ইবাদত করো আল্লাহর তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার করো এবং নিকটাত্মীয় এতিম, মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাসদাসীর প্রতিও। [সূরা নিসা : আয়অত ৩৬]। প্রতিবেশীকে যে নিরাপত্তা দেয় না সে নবীজীর পছন্দের মানুষ নয়। সে মুমিন নয়। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়, জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে ব্যক্তি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যার অনিষ্ঠ থেকে প্রতিবেশীগণ নিরাপদ নয়। [বুখারি ও মুসলিম]

ইসলামে সৎ ও আদর্শ প্রতিবেশীকে জীবনের সৌভাগ্যের নিদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিনটি জিনিসকে ব্যক্তির সৌভাগ্যের নিদর্শন Ñ প্রশস্ত বাসস্থান, সৎপ্রতিবেশী ও রুচিসম্মত বাহন। [ আদাবুল মুফরাদ]

প্রতিবেশীর মাধ্যমেই পরিচয় পাওয়া যায় আসলেই মানুষটি কেমন? সেটাই নবীজীর ভাষ্যে উঠে এসেছে, হযরত ইবন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিভাবে জানবো যে, আমি ভালো কাজ করছি না মন্দ কাজ করছি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে, তুমি ভালো কাজ করছো তখন তুমি মূলতই ভালোকাজ করছো। আর যখন তাদের বলতে শুনবে যে, তুমি খারাপ কাজ করছো তখন তুমি মূলতই খারাপ কাজ করছো। [ইবন মাযা]

তাই প্রতিবেশির অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় একজন মুমিন সবসময় তৎপর থাকেন। আর এই সুন্দর আচরণিক ক্ষমতার উপর ভর করেই তো সমগ্র বিশ্বজুড়ে ইসলামী সমাজ ও পরিবার গড়ে ওঠেছে। গড়ে উঠেছে বিশ্বভ্রাতৃত্বের এই সুরম্য প্রাসাদ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিবেশীর হক আদাইয়ের তাওফিক দিন। আমীন।

লেখক : আলেম সাংবাদিক ও ছড়াকার
mkadir1983@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *