ইসলামে সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা নেই, রয়েছে উদারতা ও নমনীয়তা : মাহমুদ মাদানী

ইসলামে সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা নেই, রয়েছে উদারতা ও নমনীয়তা : মাহমুদ মাদানী

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ‘ইসলামী শরীয়তে সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা নেই’ বলে উল্লেখ করেছেন জানেশীনে ফিদায়ে মিল্লাত, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আধ্যাত্মিক রাহবার, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি, আওলাদে রাসূল মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ আসআদ মাদানী।

তিনি বলেন, ইসলামী শরীয়তের মাঝে এমন অন্তর্নিহিত শক্তি রয়েছে, যেকোনো পরিবর্তনশীল সমাজ ও সময়কে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সে রাখে। ইসলামী শরীয়তের মাঝে কোন সংকীর্ণতা ও স্থবিরতা নেই। বরং ইসলাম তো সহজ, সরল ও উদার একটি ধর্ম।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের ফিকহি গবেষণা পরিষদের ১৮তম ফিকহি সেমিনারে এই আধ্যাত্মিক রাহবার এসব কথা বলেন।

শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর প্রথম ও উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হযরত মাওলানা রহমতুল্লাহ সাহেব মীর সাহেব। সেমিনারে ‘সম্মিলিত কুরবানীতে হারাম উপার্জনের সংমিশ্রণ’ সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলায় ১৭৯টি নিবন্ধের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে দেশের স্বনামধন্য সব প্রতিষ্ঠানের উলামায়ে কেরাম, মুফতি ও প্রাজ্ঞ আইনবিদরা উপস্থিত হয়েছিলেন।

‘ইসলামী শরিয়ত এক জীবন্ত বিধান’ মন্তব্য করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসআদ মাদানী বলেন, ইসলামী শরিয়ত একটি জীবন্ত বিধান, এক বাস্তবিক জীবন ব্যাবস্থা। বর্তমান শতাব্দীকে পথ দেখানোর জন্য তার রয়েছে পর্যাপ্ত সক্ষমতা। ইসলামী শরীয়ত এমন একটি দীপশিখা যা কখনো ম্লান হবার নয়।

‘ইসলামী শরীয়ত’কে উদার ও নমনীয় আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ইসলামী শরীয়তে এতোটা ‘ফ্লেক্সিবিলিটি’ রয়েছে, যা শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকেও প্রামাণীক জ্ঞান চর্চার অনুমিত দেয়। এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের পথ দেখাতে ইসলামের চিরন্তনতা এবং আল্লাহ তাআলার মহান প্রজ্ঞাময়তা সর্বদাই রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথম বিষয়, “সম্মিলিত কোরবানি সম্পর্কিত কিছু গবেষণামূলক মাস’আলা ” এবং এর সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো হল, অংশীদারদের দ্বারা পশু নির্দিষ্ট না করেও কোরবানি করা যাবে কিনা? যৌথ অংশীদারদের মিশ্র মাংস কীভাবে বণ্টন কররে হবে? সেইসাথে যৌথ ভাগীদারদের জন্য কীভাবে পশু কেনা হবে তা নির্ধারণ করা না করা, ইত্যাদি বিষয়ে পর্যালোচনা হয়েছে।

এই শিরোনামের অধীনে ৮০ জন মুফতি নিবন্ধ লিখেছেন, যার সারসংক্ষেপ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আসামী এবং মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ মুসআব সাহেব কাসেমী পেশ করেছেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন দারুল উলুম দেওবন্দের নায়েবে মুহতামিম, মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ রাশেদ সাহেব আযমী। এই অধিবেশনে হারাম সম্পদ সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয়।

এই শিরোনামের অধীনে ৯৯ জন মুফতি প্রবন্ধ লিখেছেন। যার সার সংক্ষেপ মুফতি আব্দুল্লাহ মারুফী এবং মুফতি আব্দুর রাজ্জাক আমরোহী এর মাধ্যমে যৌথভাবে সংকলিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ পাঠের পর মুফতি ও লেখকদের মধ্যে পর্যালোচনা ও প্রশ্নোত্তর হয়। এতে বিশেষ করে নায়েবে আমিরুল হিন্দ মুফতি মুহাম্মদ সালমান মানসুরপুরী, উস্তাদে দারুল উলূম দেওবন্দ অংশ নেন।

আলোচনার পর এ ব্যাপারে আরও আলোচনা ও প্রস্তাব প্রস্তুত করার জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়া, উক্ত অনুষ্ঠানে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ ফিকহি ও ঐতিহাসিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের শতবার্ষিকী উদযাপনের আলোকে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সাবেক সভাপতি মাওলানা ফখরুদ্দিন মুরাদাবাদী এর জীবন ও অবদানের ওপর লিখিত প্রবন্ধগুলোর সংকলন প্রকাশিত হয়।

দ্বিতীয় প্রকাশিত কিতাবটি হলো ‘দালায়েলে সুনান ওয়াল আদাব’।

তৃতীয়টি হলো ‘আসহাবে সুফফা: তাদের জীবন এবং উম্মতের জন্য খেদমত’।

অন্যান্য প্রকাশিত কিতাবগুলো হলো, ‘আওলিয়াতে সাহাবা’, ‘মারকাযুল ফতাওয়া’, ‘কিতাবুদ দু’আ, ‘যাবান মেরি অওর বাত উনকা’, ‘বায়ানাতে মাহমুদাহ’ এবং ‘কিতাবুল ফারায়েজ’।

সবশেষে লিবিয়া ও মরক্কোয় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহোযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা রহমতুল্লাহ সাহেবের দু’আর মাধ্যমে সভা সমাপ্তি হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *