পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নতুন বছরের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। আর এই শেষ দিনকে মাথায় রেখে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলটির দফতর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মনোনয়ন বিতরণের প্রথম দিনেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে দুজন ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৪ জন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ ওসমানী ও বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মেয়র আতিকের পক্ষে তার রাজনৈতিক সচিব সাইফুদ্দিন ইমন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ, বঙ্গবন্ধু একাডেমির সভাপতি মো. নাজমুল হক, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
হাজী মোহাম্মদ সেলিমের পক্ষে তার একান্ত সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বেলাল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ কামাল।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে ডেঙ্গু ইস্যুতে অনেকটাই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ঢাকার দুই সিটি কপোরেশনের মেয়র। আর এতে করে সরকারের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর সকলেই দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন, যাতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে নানামুখী বিরোধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ঢাকা দুই মেয়রের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা উচিত। কেননা তাদের পারফরমেন্স (কার্যক্রম) প্রশ্নবিদ্ধ। সবাই তো মনে করে দল যখন ক্ষমতায় তখন এমনি এমনি পার পেয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন নবনির্বাচিত সদস্য বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামই পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। কারণ তিনি অল্প সময় পেয়েছেন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। সেই দিক বিবেচনায় পুনরায় তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত। যেহেতু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন, সেহেতু তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে আমার ধারণা।
আগামী শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
রাজধানীবাসীর সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এর প্রায় ৪ বছর পর দুই সিটিতে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক ও মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক।
চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে বিজয়ী হন ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম। ৭ মার্চ শপথ নেন তিনি। তবে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ একসঙ্গে আগামী বছরের মে মাসেই শেষ হবে।