উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করলেন কিম

উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধারী রাষ্ট্র ঘোষণা করলেন কিম

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : উত্তর কোরিয়া নিজেকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে শুক্রবার একটি আইন পাস করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং-উন এই সিদ্ধান্তকে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা এএফপি।

সরকারী কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) বলেছে , আইনটি উত্তর কোরিয়াকে “স্বয়ংক্রিয়ভাবে” এবং “অবিলম্বে শত্রু বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য” একটি প্রতিরোধমূলক পারমাণবিক হামলা চালানোর অনুমতি দেবে।

কেসিএনএ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পাস করা এই আইনটিতে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক হামলার অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে উত্তর কোরিয়া।

কেসিএনএ আরও জানায়, কিম জং উন বলেছেন, নতুন প্রণীত আইনের মাধ্যমে, পরমাণু অস্ত্রের রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের দেশের মর্যাদা অপরিবর্তনীয় হয়ে উঠেছে।

এর আগে জুলাই মাসে কিম বলেছিলেন যে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণের সাথে যে কোনও যুদ্ধে তার পারমাণবিক সক্ষমতা সচল করতে প্রস্তুত। তিনি তার বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, পিয়ংইয়ং কখনই ওয়াশিংটনের শত্রুতা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সাত দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।

২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দুই দফায় হওয়া সিদ্ধান্তহীন শীর্ষ বৈঠকের পরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিলেন কিম জং উন। এরপর থেকে এই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা থমকে গেছে। তবে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে বাইডেন প্রশাসন ইচ্ছুক বলে জানানো হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের সঙ্গে দেখা করবেন কি না তা বলা হয়নি।

হোয়াইট হাউস আরও বলছে, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রচেষ্টা এবং দেশটির কোভিড প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সহায়তার বিষয়ে দেওয়া প্রস্তাবগুলোরও এখনো পর্যন্ত উত্তর পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্র গত বছর তার উত্তর কোরিয়া নীতি পর্যালোচনা করে বলেছে যে- কোরীয় উপদ্বীপের ‘সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ’ তাদের লক্ষ্য। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, কূটনীতি এবং ‘কঠোর প্রতিরোধ’ এর মিশ্রণের মাধ্যমে এই নীতি অনুসরণ করবেন তিনি।

তবে এর প্রতিক্রিয়ায় কিম বলেছিলেন, তার দেশকে অবশ্যই ‘সংলাপ ও সংঘর্ষের’ জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

এদিকে, পিয়ংইয়ং রেকর্ড সংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সাথে এই বছর কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বেড়েছে। চলতি বছর কিম রেকর্ডসংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছেন এবং ২০১৭ সালের পর থেকে দেশটি হয়তো প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় উত্তর কোরিয়া তার বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)-সহ একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে মে মাসের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য দেশটির ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওয়াশিংটনের সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয় চীন ও রাশিয়া।

এদিকে সিউল গত মাসে পিয়ংইয়ংকে একটি সহায়তা পরিকল্পনার প্রস্তাব দিয়েছে যাতে উত্তরের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করার বিনিময়ে খাদ্য, শক্তি এবং অবকাঠামোগত সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

কিন্তু পিয়ংইয়ং এই প্রস্তাবটিকে উপহাস করেছে, এটিকে ‘অযৌক্তিকতার উচ্চতা’ বলে অভিহিত করেছে এবং এই চুক্তি পিয়ংইয়ং কখনই গ্রহণ করবে না।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল গত মাসে বলেছিলেন, তার প্রশাসনের নিজস্ব পারমাণবিক প্রতিরোধের জন্য কোন পরিকল্পনা নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *