উদ্ভাসিত রেখায়িত চিত্রের সমক্ষে

উদ্ভাসিত রেখায়িত চিত্রের সমক্ষে

  • ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

মানুষের জীবনটাও তো একটা চিত্রকর্মের মতন। জীবনব্যাপী ক্যানভাসে নানাচিত্র মূর্ত হয় সর্বক্ষণ। কখনও সবুজ শ্যামলিমায় ভরে ওঠে। সেই ক্যানভাস আর কখনোবা দুঃখের ক্লেশের বেদনার নীল কষ্টগুলো ফুটে ওঠে তাতে। কখনও কখনও একই পেলবতায় পূর্ণতা পায় তা। কোনো কোনো সময় দেখা যায় সূর্যের উদিত ক্ষণের রঙিন রঙের মালা। কোনো কোনো সময় পরিদৃষ্ট হয় অস্তাচলের আবছায়া। সে যে কত রঙ, সে যে কত বর্ণ, ইয়ত্তা নেই তার। ভালো মন্দ, সবল দুর্বল, সতেজ নিস্তেজ, ন্যায় অন্যায় কত ধরনের চিত্র।

প্রত্যেক চিত্রশিল্পীরই এক একটা বিষয় চিত্রনের জন্য মডিউলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেবল কাল্পনিকতার মাঝে কখনও জীবচিত্ররূপায়ণ সম্ভব নয়। মডেলকে সামনে রেখেই স্থিরনেত্রে শিল্পীর অঙ্কন এগিয়ে যায়। স্থিরনেত্র না হলে সব আবেগ, সব রেখার স্ফুটন যথার্থতা পায় না। সৃষ্টির স্রোতস্বিনী মরুবালুকায় স্রোত হারায়।

মানুষ সে তার জীবনচিত্রকর্মে নিজেই চিত্রশিল্পী। সে জানে তার জীবন সামপ্তি অবধারিত। কিন্তু কখন, কবে, কোথায়? এ প্রশ্নগুলো হামেশাই তার কাছে অজ্ঞাত। সুতরাং তার জন্য একটা পরিসমাপ্ত পরিপূর্ণ মডেল চিত্রের প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। নইলে হাজারো বাঁকে, হাজারো রঙের সাজে দিশেহারা হয়ে পড়ে। শুরু থেকে সমাপ্তিতে পরিপূর্ণ সেই মডেলের আলোকেই তার জীবন রেখাসমূহ স্ফুটন সম্ভাবনায় আপ্লুত হতে হয়। দীপ্ত হতে হয়। তখন রেখায়িত অঙ্কনের ধারায় আরেক চিত্র রেখায়িত হয়।

প্রশ্ন হতে পারে, পূর্ণতায় সুষমামণ্ডিত রেখায়িত চিত্রটি কোথায়? যাকে ঘিরে আমার জীবন চিত্রকেও পরিপূর্ণতায় সুষমাময় করবো? আজন্ম উৎসারিত এই ব্যাকুলতার সন্ধানপ্রাপ্তি মানবপ্রাণের এক পরম প্রত্যাশা। এরই বাস্তবায়নে মহান মালিক রাহনুমানুর রহীম সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রেরণ করেন মনুষ্যজাতির প্রতি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাদান এক ‘উসওয়াতুন হাসানা’ সুন্দর সুন্দরম মহান জীবনচিত্র-গঠন-শৈলীকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সমাপ্তির পূর্ণতায় উদ্ভাসিত তিনিই মডেল। তিনিই সর্বযুগের সর্ব অনুকরণীয় মডিউল।

পরিপূর্ণতার পরম রূপ ছিলেন তিনি। মানব জীবনের হেন পরিপূর্ণতা নেই, হেন মাধুরিমা নেই, হেন উচ্চতা নেই যা তাঁর মহান জীবনাদর্শে মূর্ত হয়নি, প্রতিফলিত হয়নি। সব ধরনের অপূর্ণতা, অশুভতা ও অকল্যাণ থেকে মুক্ত ছিল তাঁর রূপায়িত জীবন। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সব নেয়ামতে ভূষিত ছিল তার যাপিত জীবন। সীরাতাল্লাযীনা আনআমতা আলাইহিম- ‘প্রভু দেখাও মোদের সে পথ, যে পথ তাদের, যারা ছিলেন তোমার নেয়ামত সুধায় সুষমামণ্ডিত’ এই প্রার্থনায় উল্লেখিত আনআমতা আলাইহিম-এর পরম শ্রেষ্ঠ মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি। তিনিই হলেন জীবনের শুভ অশুভ, সত্য ও মিথ্যার মাপকাঠি। এই তুলনাদণ্ডেই নির্মিত হবে সব মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সাফল্য এবং অসাফল্য।

আজকের আমরা, আজকের তামাম বিশ্ব জাহানের সমুখ থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ইনসান-ই কামিলের রূপময় মডিউল। দিশেহারা নোঙরবিহীন জীবনতরী গন্তব্যমুখী নয় আজ। আমাদের যদি আজ সাফল্য লাভের বিন্দুবাসনাও থেকে থাকে তবে নিজেকে, নিজের জীবনের রূপকল্পকে দাঁড় করাতে হবে এই উসওয়াতুন হাসানার সমক্ষে, জীবন সুন্দরমের চিত্র মডিউলের সামনে। সেই চিত্রের রেখায় রেখায় সেই চিত্রের টানে টানে আমার জীবন চিত্রকে রেখায়িত করতে হবে, অঙ্কিত করতে হবে।

হামেশার এই পৃথিবী বার বার দেখেছে এ ছাড়া স্বজীবনচিত্রকে সুডৌল করার দুসরা কোঈ পথ নেহী, কোনো পথ নেই ।

আরও পড়ুন: সতত আধুনিকতায় প্রাসঙ্গিক

নবীজির শানে গাওয়া মাহমুদুল হাসান আশরাফী-এর প্রাণ জুড়ানো ‘ইয়া মুহাম্মাদ নূরে মুজাসসাম’ নাতটি শুনুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *