উস্তাদ- ছাত্রের হৃদয়ছোঁয়া ভালবাসা

উস্তাদ- ছাত্রের হৃদয়ছোঁয়া ভালবাসা

উস্তাদ- ছাত্রের হৃদয়ছোঁয়া ভালবাসা

মাওলানা আমিনুল ইসলাম : আলেমকুল শিরোমণি আল্লামা আশরাফ আলী ( কুমিল্লার হুজুর) এদেশের আলেম সমাজের মাথার মুকুট। হাজার হাজার আলেম তাঁর ছাত্র। বহু মুহাদ্দিস, শায়খুল হাদীস, মুফতী, মুহতামিম, আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। এদেশের অনেক খ্যাতিমান আলেম আছেন, তাঁরাও আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবের সরাসরি ছাত্র।

আমাদের বাংলাদেশের একজন শীর্ষ আলেম, যিনি নিজ দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন, এবং আওলাদে রাসুল, ফেদায়ে মিল্লাতের অন্যতম খলিফা, তিনি হলেন, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। সেই মহান ব্যক্তিও আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবের অন্যতম ছাত্র।

উস্তাদ শাগরেদ দুজনই এবার এক সঙ্গে হজ্জের সফর করেছেন। আবার হজব্রত পালন শেষে দুজন এক সঙ্গে দেশে ফিরেছেন।

দেশে ফিরে ঢাকা এয়ার পোর্টে উস্তাদ শাগরেদকে এক সঙ্গে দেখা গেল। আল্লামা আশরাফ আলী সাহেব কে অত্যান্ত আদবের সাথে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন আল্লামা মাসঊদ সাহেব। অথচ আল্লামা মাসঊদ সাহেব নিজেই অসুস্হ। তাঁরও চলতে হয় আরেক জনের সহযোগিতা নিয়ে। কিন্তু উস্তাদের প্রতি ভক্তি- ভালবাসায় তিনি নিজের অসুস্হতার কথা ভুলে গেলেন। আপন উস্তাদের খেদমতের জন্য নিজেকে সঁপে দিলেন।
আসলে আল্লামা মাসঊদ সাহেব এমনই। উস্তাদের প্রতি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা- ভালবাসা সব সময়। আমার মনে হয়, উস্তাদগণের দোয়ার বরকতে তিনি অনেক উর্ধে চলে গেছে।

আল্লামা কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ( রহঃ) তিনিও ফরীদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবের উস্তাদ। যত দিন কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ সাহেব বেঁচে ছিলেন, ফরীদ উদ্দিন মাসউদ সাহেবকে দেখতাম, উস্তাদের জন্য ফেদা ছিলেন। ফরীদ সাহেব তিনি কাজি সাহেবকে এমন ভাবে শ্রদ্ধা করতেন, যা কল্পনা করা যায় না।

ঠিক কাজি মু’তাসিম বিল্লাহ সাহেবকে দেখেছি, তাঁর উস্তাদ আল্লামা শায়েখ তাজাম্মুল আলী সাহেবের জন্য পাগল পারা ছিলেন। এত ভক্তি আর ইজ্জত দেখাতেন, যা আজো স্মরনীয় হয়ে আছে। প্রতিটি কাজে কর্মে নিজের উস্তাদের পরামর্শ নিতেন। উস্তাদের পরামর্শ বিহীন কোন কাজ করেছেন বলে মনে হয় না।

এমনি ভাবে কাজি সাহেব ছিলেন, কুতুবুল আলম সাইয়্যেদ হোসাইন আহমাদ মাদানীর শাগরেদ। আমরাতো আর মাদানীকে দেখিনি। তবে কাজি সাহেবের বয়ান বক্তৃতায় হুসাইন আহমাদ মাদানীর নাম শুনতাম। এমন ভক্তি আর ভালবাসা নিয়ে মাদানী সাহেবের নাম তাঁর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হত, তাতে বোঝা যেত, কাজি সাহেব হুজুর, হযরত মাদানীর জবরদস্ত একজন আশেক।

আবার সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী( রহঃ) তিনি ছিলেন, শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান ( রহঃ) এর শাগরেদ। হযরত মাদানী তিনি তাঁর প্রিয় উস্তাদ শায়খুল হিন্দের প্রতি এমন ভক্তি- ভালবাসা দেখায়ে ছিলেন, যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

নিজের উস্তাদকে যখন মাল্টার জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়, হুসাইন আহমাদ মাদানী ( রহঃ) উস্তাদের খেদমতের জন্য স্বেচ্ছা কারাবরণ করে ছিলেন। উস্তাদের প্রতি ভালবাসার টানে জেল খেটে ছিলেন বহু বছর।

এভাবেই চলে আসছে আমাদের পুর্বসুরীদের উস্তাদের ভক্তি- ভালবাসার দৃষ্টান্ত। যত বড় বড় হাস্তি দেখা যায়, সকলেই স্বীয় উস্তাদের প্রতি ভক্তি – শ্রদ্ধা ছিল প্রগাঢ়।
সে সব ইতিহাস পড়লে, সে ঘটনা গুলো জানলে, হৃদয় ভরে ওঠে।

আল্লামা মাসঊদ সাহেব আপন উস্তাদ আল্লামা আশরাফ আলী সাহেবের প্রতি যে ভালবাসা দেখালেন, এগুলো থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। নিজের অসুস্থতা হওয়ার পরেও উস্তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিজের যতটুকু সক্ষমতা আছে, তা দিয়ে উস্তাদের খেদমতে এগিয়ে গেলেন।

এ দৃশ্যটা হৃদয় ছুঁয়ে গেল সকলের। আল্লাহ তায়ালা উস্তাদ শাগরেদ দুজনকে কবুল করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষক ও সমাজ বিশ্লেষক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *