একাদশকে ছাপিয়ে যাবে দ্বাদশ ভোটের ব্যয়

একাদশকে ছাপিয়ে যাবে দ্বাদশ ভোটের ব্যয়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি হবে। নচলতি অর্থবছরে কমিশনের জন্য পরিচালন ব্যয় গত অর্থবছরের চেয়ে তিন গুণের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এতেও নির্বাচন পরিচালন ব্যয় মেটানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন বলছে, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে নির্বাচন খাতে অর্থ বাড়াতে হবে।

গত ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আন্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় নির্বাচন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেছে কমিশন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে নির্বাচন খাতে অর্থ বাড়াতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সভায় পররাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার, শিক্ষা, নৌপরিবহন, বিদ্যুৎ, মন্ত্রিপরিষদ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, সড়ক পরিবহন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য দুই হাজার ৪০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় দুই হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২৮২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমিশনের জন্য এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ কমিয়ে এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা করা হয়। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে পরিচালন ব্যয় ৬৭৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ৭৪৯ কোটি টাকা ধরা হয়।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে নির্বাচনী ব্যয় বরাদ্দের চেয়ে বেশি হবে।

যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাক্কলিত সম্ভাব্য ব্যয় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি হবে। কমিশন নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব করে এই তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরেছে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং উপজেলা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উপনির্বাচনের ব্যয় রয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন বিবেচনা করেই গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর পরও আরো বরাদ্দের প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন থেকে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব এলে বিবেচনা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সম্প্রতি প্রাক্কলিত এই অর্থ ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মোট ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৪১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে নির্বাচনী অর্থবছরে কমিশনের ব্যয় বেড়েছিল দুই হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় এক হাজার ৬৮৫ কোটি ও উন্নয়ন ব্যয় ২১০ কোটি টাকা ছিল। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে চার হাজার ৩৪২ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় দুই হাজার ৩২২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই হাজার ২০ কোটি টাকা রাখা হয়। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বছরে কমিশনের বাস্তবে পরিচালন ব্যয় এক হাজার ৬৯৪ কোটি এবং উন্নয়ন ব্যয় হয়েছিল এক হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।

সভায় নির্বাচন উপলক্ষে ব্যয় নির্বাহে আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরেছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, বিভিন্ন দ্রব্যের উচ্চমূল্যের নিরিখে কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত কয়েকটি খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পরিচালনামূলক কাজে ব্যয়ের জন্য অর্থের হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি করারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

কমিশন জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ-উপনির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় বরাদ্দের হার ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সভার তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে।

জনবল, যানবাহন ও আনুষঙ্গিক সহায়তা

সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদনে চাহিদা অনুসারে জনবল প্রদান করতে হবে। যানবাহনের জন্য বাজেট বরাদ্দে অর্থের সংস্থান প্রয়োজন হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর থেকে নির্বাচনকালীন জনবল, যানবাহন ও আনুষঙ্গিক সহায়তা আবশ্যিকভাবে দিতে হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রস্তুতি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারির পর থেকে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি প্রতিপালন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।

সভার সিদ্ধান্ত মতে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার চাহিদা বিবেচনা করে কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *