এক দিনের ভ্রমণ বিল লাখ টাকা

এক দিনের ভ্রমণ বিল লাখ টাকা

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদের বিরুদ্ধে ভুয়া ভাউচারে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, উৎকোচ দাবি, সহকর্মীদের হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির সংবাদ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ৫ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেন। সেখানে হাসপাতাল স্টাফ ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন, যা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রংপুর জেলায় ১ কোটি করোনার টিকা প্রদানের পারিশ্রমিক বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৫ লাখ টাকা। ব্যাংক থেকে এ বরাদ্দ তুলে সংশ্লিষ্টদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেন শামিম আহমেদ। এ ঘটনায় তাঁকে চলতি বছরের ৭ মার্চ রংপুর সিভিল সার্জন পদ থেকে বদলি করে ঝালকাঠিতে পাঠানো হয়।

ঝালকাঠি আসতে না আসতেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন ডা. শামিম আহমেদ। বদলি ভ্রমণ বিল বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ দেখান, যা অবিশ্বাস্য ঘটনা। ডক্টরস কোয়ার্টারে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকলেও ৩৫ শতাংশ ভাড়ার স্থলে মাত্র ১০ শতাংশ কাটেন। জরুরি বিভাগের এসি এনে নিজ বাসভবনে ব্যবহার করছেন। জেনারেটর অচল থাকলেও তাঁর জ্বালানি বাবদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। ব্যক্তিগত কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ জন ভুয়া রোগী বহন দেখিয়ে জ্বালানি বাবদ ভাউচার করেন। জেনারেটর মেরামতের চিঠি ইস্যু করে আবার জেনারেটরের তেল কেনা বাবদ ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে টাকা তোলেন। চিকিৎকদের আবাসিক ভবনে চুক্তিভিত্তিক গাড়িচালক মো. শাহাদাৎকে রেখে তাঁর মাধ্যমে অপকর্ম করিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন তত্ত্বাবধায়ক। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়েও রেকর্ড গড়েছেন। চলতি বছরের ১১ মার্চ যোগদান করে এ পর্যন্ত ৮০ দিন অবৈধ ছুটি ভোগ করেন।

তত্ত্বাবধায়ক শামিম আহমেদ হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রয় কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেন না। পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ওষুধ, যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে দরপত্রের জন্য স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেননি। চলতি অর্থবছরে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট কেনেন। অতিরিক্ত এ কিট পরে রাজাপুর ও নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। একই অর্থবছরে কাগজে-কলমে ৫০টি জানালার রঙিন কাচের টাকা বরাদ্দ নিলেও লাগিয়েছেন ২০টি। সংস্কারের নামেও ভুয়া বিল-ভাউচার করেন। ভাউচারে তত্ত্বাবধায়ক নিজেই পরিশোধকারী, মঞ্জুরকারী ও গ্রহণকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেন। রোগীদের খাবার সরবরাহেও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

হাসপাতালে রোগীর খাবার সরবরাহের ঠিকাদার মো. স্বপন জানান, রোগীর খাবার বাবদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৭৫ টাকা বরাদ্দের নির্দেশনা দেওয়া হয় এক বছর আগে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সে নির্দেশনা না মানায় উচ্চ আদালতে রিট করেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। বিল-ভাউচার খতিয়ে দেখে তদন্ত হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে জানান এ ঠিকাদারসহ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

শামিম আহমেদ উৎকোচ না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো. মোহসীনের বিরুদ্ধে জ্বালানি বাবদ ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কমিটি করেন তত্ত্বাবধায়ক। কিন্তু প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই চালক মোহসীনের কাছে শোকজের জবাব চান।
চালক মোহসীন জানান, উৎকোচ না দেওয়ায় তদন্তের নামে তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে।

হাসপাতালে ওষুধ সংকট থাকা সত্ত্বেও তিনি যথাসময়ে ওষুধ কেনেননি। এ কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি ওষুধ সরবরাহ খাতের ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ফেরত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. শামিম আহমেদ। তিনি জানান, বদলি ভ্রমণ বিল, বাসা ভাড়াসহ সবকিছুই সরকারি নিয়ম মেনে নেওয়া হয়েছে। অহেতুক কোনো কর্মচারীকেও শোকজ করা হয়নি। তাঁকে হেনস্থা করতে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *