এবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠ চায় বিএনপি

এবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠ চায় বিএনপি

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে সোমবার হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। এ মাঠ ব্যবহারে পুলিশের অনুমতির আশ্বাস পেলে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেবে দলটি।

রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তারা আর পুলিশ কিংবা সরকারের কাছে বিকল্প মাঠ ব্যবহারের প্রস্তাব নিয়ে যাবে না। সরকার অনুমতি না দিলে তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। সভায় নেতারা বলেন, নয়াপল্টনের বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি উদারতা দেখিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া না দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এর আগে নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে বিএনপি রাজধানীর আরামবাগ মোড় ব্যবহারের মৌখিক অনুমতি চেয়েছিল। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত মাঠ ছাড়া কোনো সড়ক ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর পরই গতকাল সন্ধ্যায় মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খানের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। বৈঠকে ঈদগাহ মাঠের মৌখিক অনুমতি চান তিনি।

এ বিষয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে আরামবাগ মোড় ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। পরে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে হাইকোর্টসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে পুলিশ কাল (আজ) জানাবে।’

তবে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, সমাবেশস্থলের অনুমতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ঈদগাহ মাঠ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।

ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের চার দিন বাকি থাকলেও সমাবেশস্থল নিয়ে সংকট এখনো কাটেনি। সমাবেশের স্থান নিয়ে সরকারের কঠোর মনোভাবের মধ্যে রবিবার বিকল্প স্থানে সমাবেশ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দলটির নেতারা। গতকালও এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা গতকালও বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহার করবেন না তাঁরা। নয়াপল্টনের আশপাশে উপযুক্ত কোনো স্থানের অনুমতি দিলে তাঁদের আপত্তি নেই। তাঁরা বলেন, সরকার উন্মুক্ত মাঠ ব্যবহারের কথা বলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উন্মুক্ত কোনো মাঠ নয়। এটি পার্ক।

স্থান নিয়ে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিএনপি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার এবং নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও দূরের জেলা থেকে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আরো নেতাকর্মী ঢাকামুখী হবেন বলে নেতারা জানান।

এসব বিষয়ে গতকাল রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়। সেখানেও কমিটির সদস্যরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে তাঁদের পরামর্শ তুলে ধরেন।

জানতে চাইলে ঢাকার সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা সরকার পতনের সমাবেশ নয়। তাহলে কেন সমাবেশের মাঠ নিয়ে সরকারের এত ভয়? আমরা বিকল্প উপযুক্ত স্থানেরও কথা বলেছি। তাতেও সরকার সাড়া দিচ্ছে না।’

বিএনপি নেতারা জানান, ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী জমায়েত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলা থেকে নেতাকর্মীদের আসার ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। তবে জেলা কমিটি, স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে রাজধানীতে আসছেন। যাঁরা ঢাকায় আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগ নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্বজনদের বাসায় থাকছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা ঢাকার আবাসিক হোটেলে থাকছেন না।

দলের সূত্র জানায়, সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত নির্বাচনে ঢাকা বিভাগ থেকে যাঁরা জাতীয় নির্বাচন করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। মূলত ঢাকার পাশের জেলা থেকে যেন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আসেন, সেই নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পেশাজীবীদের এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। এই সমাবেশকে আমাদের যেকোনো মূল্যে সফল করতে হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *