নিজস্ব প্রতিবেদক : পাইপলাইনে ছিদ্র দেখা দেওয়ায় আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ আরেক দফা পিছিয়ে গেছে। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামান বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সময়মতো পাইপলাইনের সংস্কার কাজ করতে পারেননি তারা। এখন কাজ শেষ করে জুনের প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, এলএনজি সরবরাহ শুরু না হলে ঢাকায় গ্যাস সংকটের সুরাহার কোনো পথ দেখছেন না তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, রোজায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিরাজমান গ্যাস সংকট আরও তীব্র হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সারাদিনেও চুলা জ্বলছে না। এতে সেহরি-ইফতারের ব্যবস্থা করতে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়ার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এই সমস্যার সমাধানে তিতাসের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অপারেশনস) এম এইচ আশরাফ আলী গত শনিবার বলেন, চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস পাওয়ায় ঢাকার অনেক জায়গায় গ্যাসের এই সমস্যা। এলএনজি সরবরাহ শুরু না হলে এই সংকটের সুরাহা হবে না।
গত ২৪ এপ্রিল এক লাখ ৩৩ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে মহেশখালী দ্বীপের কাছে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছায় এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশের বিশেষায়িত ভেসেল ‘এক্সেলেন্স’।
ভাসমান ওই বন্দর (এফএসআরইউ) থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
তবে দুই দিন পরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়, সব প্রস্তুতি শেষে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে এলএনজি যুক্ত হতে মে মাসের ২৫ কিংবা ২৬ তারিখ হবে।
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এর আগে জানিয়েছিলেন, এফএসআরইউ কাজ শুরু করলে আমদানি করা গ্যাস মহেশখালী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে যাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। পরে তা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে পাঠানো হবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে।
কিন্তু সবশেষ নির্ধারিত তারিখের দুই দিন আগেও গ্যাস সরবরাহের কোনো লক্ষণ দেখা না যাওয়ায় যোগাযোগ করা হয় সরকারি সংস্থা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড- জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, জিটিসিএলের অধীনে থাকা মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩০ ইঞ্চি পাইপলাইনটি প্রস্তুত। কিন্তু সমুদ্র থেকে মহেশখালী পর্যন্ত লাইনের কাজটি দেখছে আরপিজিসিএল। তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বলতে পারব না। তাই কবে নাগাদ এলএনজি সংযোগ শুরু হবে সেটা বলা যাচ্ছে না, বিষয়টি আরপিজিসিএলের কাজের ওপর নির্ভর করছে।
পরে এ বিষয়ে আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাইপলাইনের কানেকশনে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেই সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতেও কিছুটা সময় লাগছে। এসব মিলিয়ে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এলএনজি সংযোগের তারিখ পিছিয়ে গেছে।
ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে মহেশখালী পর্যন্ত এলাকার পাইপলাইনে সম্প্রতি কিছু ছিদ্র দেখা দেওয়ার কথা জানান কর্মকর্তারা।
বিষয়টি স্বীকার করে কামরুজ্জামান বলেন, ওই বিষয়টার কারণেই গ্যাস সংযোগ বিলম্বিত হচ্ছে। আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে এর সংস্কার কাজও হচ্ছে ধীরগতিতে। আশা করছি, জুনের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছু ঠিকঠাক হবে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনালের ধারণক্ষমতা প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। ওই টার্মিনালের রিগ্যাসিফিকেশন বা তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরের ক্ষমতা রয়েছে দিনে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল নির্মাণ ও অন্যান্য খরচ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য তাদের ৪৯ সেন্ট করে দিতে হবে। অন্যান্য খরচ যোগ হওয়ার পর তা ৫৯ সেন্টের মত হবে। ১৫ বছর পর মহেশখালীর টার্মিনাল ও এফএসআরইউ কোনো বিনিময়মূল্য ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
____________
patheo24,/105/sl