ওআইসিতে কুতুবে বাঙাল  | শান্তির দেশে শান্তির ফতওয়া

ওআইসিতে কুতুবে বাঙাল | শান্তির দেশে শান্তির ফতওয়া

আরীফ উদ্দীন মারুফ ●

ওআইসিতে কুতুবে বাঙাল
চতুর্থ পর্ব
মক্কা শরীফে প্রবাসী ভাইদের সেমিনারে ইমাম ফরীদের বক্তব্য
সম্মানিত সভাপতি মহোদয়, প্রবাসী ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তাআলা আপনাদের জন্য যে সৌভাগ্যের ব্যবস্থা করেছেন হিংসা করা যদি জায়েজ থাকতো তাহলে আমি আপনাদের নিয়ে হিংসা করতাম। দুনিয়াতে রুটি রোজগারের ব্যবস্থা কত দেশে হতে পারতো। আমেরিকা, ইউরোপে কত জায়গা আছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাদের রিজিক ছড়িয়ে দিয়েছেন আরবে। আবার আরবের মধ্যে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শহরে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেছেন। একজন মুসলমানের সে পৃথিবীর যে জায়গাই বসবাস করুক তার জীবনের স্বপ্ন থাকে যে জায়গায় একবার পৌঁছারÑ সেখানে আল্লাহ তাআলা আপনাদের বসবাস করার তাওফিক দিয়েছেন। একদিকে যেমন রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হচ্ছে আবার একদিকে হামেশা আল্লাহর ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। পৃথিবীর যে কজনের চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকলে সওয়াব হয় এর মধ্যে একজন হচ্ছেন মা। যাদের মা জীবিত আছেন তারা সৌভাগ্যের অধিকারী। মার চেহারার দিকে একবার তাকালে আল্লাহ তাকে হজের সওয়াব দান করেন। আরেকজন শিক্ষক আর খোদ কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সওয়াব আছে। একজন কেউ যিকির করলো না, নামায পড়লো না, তেলাওয়াত করল না, শুধু কাবার দিকে তাকিয়ে থাকলোÑ তো এ তাকিয়ে থাকার মধ্যেও আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত বানিয়ে রেখেছেন। সব দিক থেকে আল্লাহ তাআলা আপনাদের সৌভাগ্যবান করেছেন। এই যে আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের উপর নেয়ামত এ নেয়ামতের জন্য আমাদের সকলেরই আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা দরকার। আলহামদুলিল্লাহ।

আমি আপনাদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে সারা দিন কর্ম ব্যস্ততার পরেও এ গভীর রাতে আপনারা শুধু ভালোবাসায় একত্র হয়েছেন। ইসলামে একজন আরেক জনকে ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশী। ইসলাম ভালোবাসার ধর্ম। একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেন, বল তো সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কোনটি? একজন বললেন, সালাত, আরেকজন বললেন হজ, কেউ বললেন যাকাত, কেউ বললেন, জিহাদ। এরপরও রাসূল জিজ্ঞেস করছিলেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আপনিই আমাদের বলুন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালোবাসতে পারা ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি যারা দুনিয়াতে আল্লাহর উদ্দেশে একত্র হয় কাল কেয়ামতের দিন অন্যরা সব ব্যস্ত থাকবে, পেরেশান থাকবে কিন্তু যারা এ ভালোবাসা নিয়ে যেতে পারবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা নুরের মিম্বারে বসাবেন।

আজকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভাব ভালোবাসা হারিয়ে গেছে। মানুষের হৃদয় থেকে ভালোবাসা শূন্য হয়ে গেছে। এমনকি এমন অবস্থা আজকে যে পরিবার থেকেও ভালোবাসা পাচ্ছে না, ছেলে মেয়ে থেকেও পাচ্ছে না। আমি আমাদের দেশের কথা বলছি, যে বাবার মৃত্যু সংবাদ দেয়া হয়েছে ছেলে উত্তরা থেকে বলছে লাশ আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দাও। আজকে বহু মা তার গেমের ব্যস্ততার জন্য সন্তানটার দিকে খেয়াল করতে পারছে না। সে গেম খেলবে। ইন্টারনেটে পড়ে আছে। এ সমাজে এই যে হতাশ শিশু। হতাশা নিয়ে বড় হচ্ছে। আমাদের সময়ে কী ছিল? আমরা মায়ের বুকের গন্ধ নিয়ে বড় হয়েছি। আজকে মায়ের বুকের গন্ধ কোথায়? যে দিন জন্ম হয় সেদিনই তাকে একটি পাশের খাটে শুইয়ে দেয়। যে শিশু মায়ের বুকের গন্ধে বড় হচ্ছে না সে কি করে মায়ের প্রতি ভালোবাসায় আসক্ত হবে? মাটির গন্ধ ছাড়া বড় হচ্ছে। ঢাকার গুলশানে বাড়ি থেকে বের হয় আবার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে, গাড়িতে স্কুলে যায় বাড়ির পথটাও চিনে না। মাটিও দেখে না। আপনারা কি করে বড় হয়েছেন, স্কুল থেকে বাড়িতে এসেই জাম্বুরা নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে কাদা মেখেছেন। আজকে মায়ের গন্ধ নাই। মাটির গন্ধ নাই। হৃদয়ের টান নাই। হৃদয় জাগ্রত হয় না। এমনকি মানুষ এতটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে একটি জরিপে দেখা গেছে, জাপানে তরুণরা চাহিদা মেটানোর জন্য রোবটের সেক্সিটলের দিকে ধাবিত হয়ে গেছে।
ভালোবাসা শিখিয়েছে ইসলাম। আজকে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বদনামও ইসলামের। এক বিবিসি সাংবাদিক আমার কাছে এলো, সে আবেগের সঙ্গে আমাকে বলছে, আমার নাম মুহাম্মদ অমুক। আমাকে প্রায় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। ইমেগ্রশনে যখনই দেখে সাংবাদিক আমার নামের দিকে তাকিয়ে যখন দেখে মুহাম্মদ তখন তার চেহারা বদলে যায়। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো কোন দোষ করেননি। ইহুদী নাসারা তো চক্রান্ত করবেই আমরা কেন তাদের পিছনে পড়বো। আজকে জঙ্গিবাদীরা যা করছে ইসলামের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে মুসলমানের কোন সম্পর্ক নেই। কোরআন হাদিসের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমি কিছু দিন আগে জাতিসংঘের এক মিটিং এ শরীক হয়েছি। সেখানে নরওয়ের প্রতিমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। আমি একটা পয়েন্ট তাদেরকে খুব জোরালোভাবে বলেছি, সন্ত্রাসের জন্য নির্দিষ্ট কোন জাতিগোষ্ঠীকে টার্গেট করলে সন্ত্রাস তো বন্ধ হবেই না বরং এটা সন্ত্রাসবাদকে আরও উস্কে দিবে। মিয়ানমারে কী মুসলমানরা সন্ত্রাস করছে? আমি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও বলেছি এ কথা, আপনারা বলুন, বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন হলো জীব হত্যা মহাপাপ। এ রোহিঙ্গারা কী জীবও নয়? আচ্ছা বুঝলাম এরা মানুষ না, এরা মুসলমান, সব স্বীকার করলাম কিন্তু আপনি বলেন, এরা কী জীবও নয়?

আমি ভারতে গিয়েছি আজমির শরীফে প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে মুসলমান ছিলেন, হিন্দু ছিলেন, শিখ ছিলেন, বৌদ্ধ ছিলেন। কেন? সন্ত্রাসের জন্ম কোন ধর্মের কারণে হয় না। ডাকাত তো কোন ধর্মের হয় না। এখন কেউ যদি ডাকাতিকে জিহাদী বলে তাহলে পুরো দুনিয়াতে ডাকাতি বলতে কোন জিনিসই থাকবে না। আমি জাতিসংঘে বললাম, তোমাদের সাংবাদিকরা ভুল করে এদরকে জিহাদী বলে, এতে করে সে আনন্দিত হয় যে আরও স্বীকৃতি পেয়ে গেলাম। যা আমরা চেয়েছি তা পেয়েছি। এরা তো সন্ত্রাসী। জিহাদ তো পবিত্র জিনিস। জিহাদ তো অনেক শর্তের সঙ্গে। হযরত আলী রা. অনেক বড় বীর ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে তিনি এক শত্রুকে কাবুতে আনলেন। তখন শত্রু তার মুখের দিকে থুতু মারল। কিন্তু তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। শত্রু তাকে বল্ল, তুমি এত কষ্ট করে কাবুতে এনে ছেড়ে দিলে? তিনি উত্তর দিলেন, তুমি থুতু মারলে তাই। থুতু মারার কারণে আমার মনে হিংসা জন্মালো, এখন যদি আমি তোমাকে মারি তাহলে তা আল্লাহর জন্য হবে না। ইসলামের জন্য হবে না বরং আমার হিংসার কারণে তোমাকে হত্যা করা হবে। প্রচ- যুদ্ধের সময় নিজের হৃদয় কোন জায়গায়? আমি কী আল্লাহর জন্য করছি না নিজের জন্য করছি। এরকম আল্লাহর কথা অন্তরে থাকলে তা জিহাদ হবে। না হলে সে তো ডাকাত।
আপনারা বলেনতো দেখি, মুসলমানের সংখ্যা কত? যদি হিসাব করেন, তাহলে আইএসের সংখ্যা হাজার খানেক হবে। কয়েক হাজারের জন্য সোয়াশ কোটি মানুষকে দোষারোপ করা কীভাবে সম্ভব!

আমি তো তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ। আমেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্ট-এও মিটিং করেছি। সেখানে তাদের আটটা ডিপার্টমেন্টের লোক হাযির ছিলো। তাদেরকে আমি বললাম, বাংলাদেশে কখনই সন্ত্রাসবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ হবে না। বাংলাদেশের মাটি আর বাংলাদেশের মানুষ কখনই এটা প্রশ্রয় দিবে না। এক সময় নকশালপন্থীরা বামপন্থিরা উগ্রবাদিতার মাধ্যমে তাদের রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিল। মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন ধর্মের নামে কেউ যদি উগ্রবাদিতার জš§ দিতে চায় তাও সাধারণ মানুষ গ্রহণ করবে না।
দ্বিতীয় পয়েন্ট আমি বললাম, সন্ত্রাসীদের জন্য একটা জায়গা থাকতে হয় যে জায়গায় তারা বসবে শলা পরামর্শ করবে। বাংলাদেশ আফগানিস্তান বা পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশে একেক কিলোমিটারে শত শত মানুষ বসবাস করে। তিনদিনের বেশি কোন সন্ত্রাসী আত্মগোপন করে থাকতে পারবে না। তারা আশ্রয়ই পাবে না।
তৃতীয় হলো, ধর্মের নামে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ করতে পারবে না। আপনারা জানেন, এক লাখ দশ হাজার আলেম যাদের মধ্যে দশ হাজার মহিলা আলেমাও আছেন। সকলে একত্র হয়ে দস্তখত করেছেন। অন্য কোন দেশে তো এর নজীর না-ই, সৌদি আরবেও নাই যে কোন বিষয়ের উপর একলাখ আলেম দস্তখত করেছেন। আমি জাপান সরকারের দাওয়াতে গিয়েছিলাম।

সৌদি আরবের বাংলাদেশ রিপোটার্স ইউনিটিতে বয়ান
মুহতারাম সভাপতি সাহেব এবং সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ ও ওলামায়েকেরাম।
আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সৌদিআরবের বিশেষত মক্কা ও জেদ্দায় অবস্থিত মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দেরÑ যারা আমাকে কিছু কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। সাংবাদিকরাই পারে জনমত গঠন করতে। আমি যে আজকে জঙ্গিবাদবিরোধী কাজ করছি এবং একলাখ আলেমের ফাতওয়ার কাজ করছি সারা পৃথিবীতে আজকে যার আলোড়ন শুরু হয়েছে। আমি কিছুদিনের ভিতরে জাপান থেকে নিয়ে আমেরিকা পর্যন্ত সফর করেছি, জাতিসংঘ থেকে নিয়ে ওআইসি পর্যন্ত এই নিয়ে সফর করেছিÑ সফল সফর হয়েছে আল্লাহরর মেহেরবানি। এইটার শুরুটাই হয়েছিলো আপনাদের মাধ্যমে। আমি একদিন আমার বাসায় বসে আছি, আমার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ই সাংবাদিকরা দেখা করে। একজন বিবিসিতে কাজ করে মুসলিম সাংবাদিক আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে. উনি যখনি দেখা করতে আসতেন তিনি অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে আমাকে বললেন, হুজুর আমি একজন সাংবাদিক প্রায়ই আমাকে বিদেশে যেতে হয় যখন তারা শোনে আমি সাংবাদিক তখন ইমিগ্রেশনে যে দৃষ্টিভঙ্গিটা হয় ইমিগ্রেশন অফিসারের তো যখনই আমার নামের শুরুতে দেখে মুহাম্মাদ তখনই তার দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টে যায়। [এরআগের বক্তৃতায় এ আলোচনাটা গিয়েছে।]

আমি পরিষ্কারভাবে স্বীকার করছি তার ওই সময়ের যে আবেগ আমি সে আবেগ দ্বারা প্রভাবিত হইনি আমি ওলামায়ে কেরামকে একত্র করি এবং আল্লাহর মেহেরবানিতে আপনারা জানেন এক লাখ ২৫ হাজার আলেম যার মধ্যে দশ হাজার মহিলা আলেমও আছেন। পৃথিবীতে এর কোন নযির নাই এক বিষয়ের উপরে এত সংখ্যক মানুষ ঐকমত্য হয়েছেন। বাংলাদেশেও নাই এবং বাংলাদেশের বাইরে সউদি আরবেও এর কোন নযির নাই। আমাকে একজন ফরাসি সাংবাদিক বললেন, মাওলানা আপনি বিশ্বশান্তির যে কাজ করেছেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া কেউ এমন কাজ করেনি। তাই আমি বলবো, এই বিষয়টা মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে অবদানও সাংবাদিকদের বিষয়। এমন কোন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নাই যেখানে এই সংবাদ প্রচার হয়নি। বিবিসি বলেন, দয়া চাপেলে বলেন, সিএনেন বলেন, সিনহুয়া বলেন, ভয়েস অফ এমরিকা বলেন, ইন্ডিয়ার এমটিভি বলেন, জাপান থাইল্যান্ড মালেয়শিয়া এমনকি আমি শুনে আশ্চর্য হলাম সুদুর ব্রাজিলে স্প্যানিশ ভাষায় সাংবাদিকরা এর প্রচার করেছেন। তাই আমি আপনাদেরকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানাই আজকে সময় না থাকা স্বত্ত্বেও আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত আপনাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি এখানে এসেছি। এটা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এবং আমার উচিত ছিলো আপনাদের সঙ্গে সুস্থিরভাবে বসা।

যত ধরনের প্রশ্ন হতে পারে আমি জানি না আমার প্রতি কেন সাংবাদিক ভাইদেরকে অনেক বন্ধুত্বসুলভ পেয়েছি। আর মৌলিকভাবে সাংবাদিকরা কারো শত্রু নয়। আমার অভিজ্ঞতা। কারণ অনেক সময় সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশ্ন করে শত্রুতার জন্য নয় বিদ্বেষের দৃষ্টিতে আমি কোন সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে দেখি নাই। হয়ত কোন তিক্ত কথাও বলেন, কড়া কথাও বলেছেন কিন্তু এর পিছনে কোন বিদ্বেষ থাকে না। সুতরাং আমার উচিত ছিলো আপনাদেরকে যথেষ্ট সময় দেওয়া কিন্তু আমি দুঃখিত আজকে আমার ফ্লাইটের একদম সময় হয়ে যাওয়ায় আমি পুরা সময় দিতে পারছি না। আমাদের জঙ্গিবাদের বিষয়টা নিয়া আমি কাজ শুরু করি প্রথমত যখন নাইন এলিভেনের ঘটনা ঘটে টুইনটাওয়ারে হামলা হয়। আমি এর আগেও আমেরিকা বহুবার গিয়েছি, কারণ আমার মা আমেরিকার সিটিজেন ছিলেন ১৯৯৮০ সালে। আমি অবশ্য সিটিজেনশিপ গ্রহণ করি নাই। আমি আমার দেশের বাইরে কোথাও আমার জন্য আবাসন হোক তা চাইনি। কারণ আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তো সৌদিআরবেও জন্মদিতে পারতেন, বাংলাদেশে দিতেন না। আমার এইটা ধারণা মাটি এবং এই রসের নিশ্চয় আমার প্রতি কোন দায়িত্ব আছে, আমি পারি আর না পারি সুতরাং আমি আমার দেশকেই আপন করে নিয়েছি সবসময়।
যাই হোক, তো টুইনটাওয়ারে হামলার সময় আমি ইংল্যান্ড ছিলাম। আমি বার্মিংহাম সিটিতে ছিলাম কিছুসংখ্যক মুসলমানকে আমি উল্লসিত হতে দেখেছিলাম, ইংল্যান্ডে আমি তখন তাদেরকে সতর্ক করেছিলাম। আমার যেন কেমন মনে হলো এইটাতো উল্লাসের দিন না, এটা কান্নার দিন। কারণ সামনে মুসলমানদের জন্য ভয়ংকর দিন আসতেছে। আর কোন মুসলমানের দ্বারা এমন ম্যাসাকার অপরাধী, নিরপরাধ শিশু-মহিলা-বৃদ্ধ নির্বিচারে এভাবে হত্যার বিষয় ইসলামে কোনদিন ছিলো না। কখনো থাকবেও না। কারণ ইসলামের মূল সুরটাই বর্বরতার নয়। ইসলামের মূল সুরটাই ভালোবাসার। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামকে বলছিলেন, আচ্ছা বলো তো ইসলামে কোন জিনিসটা সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? কেউ বললেন, নামায কেউ বললেন হজ, কেউ বললেন যাকাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না বলো কোনটা? তখন সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ আপনিই বলে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন মানুষকে ভালোবাসা। [আলোচনাটা আগে গিয়েছে]

দুটি উদ্দেশ্য এক ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে। আর হইলো নিজের দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করা। হলি আর্টিজানেতো ঘটনার পরে শোলাকিয়ার ঘটনার পরে আমাকে টার্গেট করে তারা হামলা করে এইটার পরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিটা নিচে নেমে আসে। জাপানিরা তো এই স্থিরই করে ফেলছিলো যে তারা আর আসবে না। খোদ জাপানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমাকে বললেন, আপনাদের দেশের ধর্মীয় ব্যক্তিদের এত সংখ্যকের ফতোয়াটা পাওয়ার পরে আমাদের আস্থা ফিরে এসেছে আমরা বুঝলাম ইসলামের নামে যখন এরা জঙ্গিবাদকে প্রচার করছে এতজন ধর্মীয় ব্যক্তি যেখানে একত্র হয়েছে নিশ্চয় তারা এখানে আর প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে না। আমি জাতিসংঘেও এইটা বলছি, যেখানে একশটা দেশের সদস্য উপস্থিত ছিলেন আপনারা তো কেবল মাদরাসার কথা বলতেছেন, গোটা জাতিকে আজকে দায়ি করা হচ্ছে। দুইটা জিনিস আমি তাদেরকে বললাম, যে কিছুসংখ্যক মানুষের কারণে মুসলমানদেরকে টার্গেট করা ইসলামকে টার্গেট করাÑ এটা কখনই ঠিক হবে না।

এতে বরং সন্ত্রাসীরা আরও উৎসাহিত হবে। আমি আপনাদেরকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করতে চাই, সারা পৃথিবীতে সোয়াশ কোটি মুসলমান রয়েছে আর সন্ত্রাসীরা হিসাব করলে কয়েক হাজার মাত্র হবে। এই ক্ষুদ্র অংশের জন্য সোয়াশ কোটি মানুষকে টার্গেট বানানো এটা কেমন ধরনের যুক্তি। আরেকটা কথা বললাম, সন্ত্রাসবাদকে জেহাদি বলবেন না। এই জিহাদ তো ইসলামের পবিত্র জিনিস, জিহাদ তো হুকুম। তবে এই ডাকাতদেরকে যদি জিহাদি বলেন তাহলে আরও সাহস পাইয়া গেলো বরং এদেরকে জেহাদি বলাটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত ভুল। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের আট সদস্য আমার সঙ্গে বসেছিলো আমি ওদেরকে বললাম বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা অত্যন্ত আগ্রহী ছিলো যে, বাংলাদেশে কখনই জঙ্গিবাদের উত্থান সম্ভন নয় ওরা জিজ্ঞাসা করলো কেন? আমি বললাম এর প্রথম কারণ হলো বাংলাদেশের মাটি ও বাতাসের স্বভাব তারা কোনদিন উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয় নাই। অতীতেই বামপন্থিরা চেয়েছে নকশালপন্থীরা চেয়েছে উগ্রবাদের মাধ্যমে সমাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে জাসদ চেয়েছে কিন্তু মানুষের কাছে তারা আশ্রয় পায়নি। আজকে ধর্মের নামেও যদি কেউ উগ্রবাদ চালায় সেও মানুষের কাছে স্থান পাবে না।

দ্বিতীয় কারণ হিসাবে আমি বললাম, বাংলাদেশের মত ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় যেখানে প্রতি কিলোমিটারে কয়েক হাজার মানুষের বসতি এটা আফগান নয় যে এখানে পাহাড়েরর চিপায় কেউ লুকিয়ে থাকবে সন্ত্রাসীর জন্য কোন আশ্রয়ের জায়গা বাংলাদেশে নাই যেখানে যেখানে তারা বসতে পারে কথা বলতে পারে। তাই আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশের জনগণই সব বিষয়ে পুলিশকে জানাচ্ছে।

কারণ মানুষ বুঝে ফেলছে এরা যদি সত্যিকারের ইসলামের হতো তাহলে শোলাকিয়ার মত নিরীহ মুসলমানদেরকে হামলা করত না। এখন জনগণই তাদেরকে ধরে ধরে পুলিশের হাতে দিচ্ছে, জনগণই খবর দিচ্ছে তমুক জায়গায় আছে, আগে তো পুলিশে ঘটনা ঘটলে পরে যাইতো এখন ঘটনা ঘটার আগেই পুলিশ চলে যায়। আপনারা জানেন, আমরা এই বিষয়ে এক লাখ উলামায়েকেরামের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। পৃথিবীতে নযির নাই যে এত সংখ্যক মানুষ কোন বিষয়ে দস্তখতে একমত হইছে। মানুষ মনে করে মৌলভীরা কোন বিষয়ে একমত হতে পারে না। আমি বলি, একলাখ একমত হয়ে গেছে। এর নযির দেখান কোন একটা। সুতরাং ইসলামের অপব্যাখ্যাও গ্রহণযোগ্য হবে না। বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, কোন শীথিলতা নেই। এমনি চলতে চলতে একটা বোমা মেরে দিতে পারে কিন্তু জঙ্গিবাদের উত্থান ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তখন আমার কথায় সবাই নিরব সায় দিলো। আমেরিকানদের বুঝা মুশকিল ভিতরে কি থাকে আর বাইরে কী থাকে। এতে মৌলিকভাবে কাজ করছে আামরা জানি ইহুদি শক্তি। ইন্টারন্যাশনাললি ইহুদিরাই এর পেছনে। এবং এটার আমরা প্রমাণও পেয়ে গেলাম নেতানিয়াহুর অসতর্কতামূলক কথার দ্বারা। সে ভেটু দিয়েছে আইএস ঠিক আছে, ইরান ঠিক নাই। এতে বুঝা গেলো আইএসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। যে আইএসের নৃশংসতা চেঙ্গিসখানকেও হার মানায়।

আর সে বলছে কী? এতে বুঝা যায় এর পিছনে কারা আছে? আল্লাহ অনেক সময় সত্যকে প্রকাশ কইরা দেন। ঠিক টুইনটাওয়ারের পেছনে মৌলিকভাবে ওরাই ছিলো। আমি আমেরিকান বহুজনের কাছে শুনেছি, বইও লেখা হয়েছে যে এই ঘটনার পেছনে মৌলিকভবে ইহুদিরাই ছিলো। যাই হোক সত্যিকারার্থে আলেমরা এর সঙ্গে শামিল হতে পারে না। একজন নিজেকে আলেম দাবি করবে আবার সন্ত্রাসী করবে এইটা হতে পারে না। আমরা সাধারণত আমাদের দেশে ও দেশের বাইরেও দেখছি এর সঙ্গে জড়িত কারা? যারা জেনারেল শিক্ষিত। এদের পিছনে অনেকগুলো কারণ আজকে সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে অনেকগুলো দেশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে কিন্তু প্রত্যেকের ধারণা অসম্পূর্ণ। মানে সাত অন্ধের হাতি দেখার মত। কেউ বলে, এইটা ধর্মীয় কারণে। কেউ বলে, এইটা অর্থনৈতিক কারণে। মৌলিক বিষয়টা নিয়া আর কেউ কথা বলছে না। সুতরাং এখানে একটা কারণ চিহ্নিত করা মুশকিল। সময় নাই, নাইলে আমার আলোচনাটা বিস্তারিত করতাম। আমি কেবল ইঙ্গিত করে দিলাম। আর ইংরেজি শিক্ষিতদেরকে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করা সহজ। কারণ অনেক তরুণ আজকে ক্ষুব্ধ। দেশজ কারণে ও ইন্টারন্যাশনাল কারণে। একটা মহিলাকে এভাবে নির্যাতিত হতে দেখবে ন্যায়পন্থী একটা তরুণ এইটা কিভাবে সহ্য করবে? আজকে সিরিয়াতে যা ঘটছে আফগানে যা ঘটছে মিয়ানমারে যা ঘটছে শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে তো যাই হোক বিভিন্ন অনেক কারণে তা ঘটছে। আর এইটা তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে আর তাদের ক্ষুব্ধতাটা সন্ত্রাসীরা কাজে লাগাচ্ছে। আর সঠিক ব্যাখ্যা তাদের জানা নাই। আর আলেমদেরকে পারছে না কেন কারণ আলেমদের কাছে তো সঠিক ব্যাখ্যা জানা আছে। তাই তাদেরকে সাধারণত বিভ্রান্ত করতে পারে না। আরও কিছু কথা আপনারা বলছেন সবগুলো কথা তো এখানে বলাও সম্ভব না।
আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। ওয়াখের দাওয়ানা আনিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।

মাসিক পাথেয়, ডিসেম্বর ২০১৭

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *