পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : ইরানের বিখ্যাত কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ গিয়াসউদিন আবুল ফাতেহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম নিশাপুরির ৯৭১তম জন্মদিন ১৮ মে শনিবার।
জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ ডুডল প্রদর্শন করছে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। গুগলের হোমপেজে লোগোটিকে রঙিন পর্দায় তাকে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি গাছের নিচে বসে বই পড়ছেন ওমর খৈয়াম।
১০৪৮ খৃষ্টাব্দে আজকের দিনে ইরানের নিশাপুরে জন্মগ্রহণ করার পর ওমর খৈয়াম যুবক বয়সে সমরখন্দে চলে যান এবং সেখানে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বুখারায় নিজেকে মধ্যযুগের একজন প্রধান গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তার বীজগণিতের গুরুত্বপূর্ণ ‘Treatise on Demonstration of Problems of Algebra’ গ্রন্থে তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধানের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। এই পদ্ধতিতে একটি পরাবৃত্তকে বৃত্তের ছেদক বানিয়ে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করা হয়। ইসলামি বর্ষপঞ্জি সংস্কারেও তার অবদান রয়েছে।
তিনি তার কবিতা সমগ্র, যা ওমর খৈয়ামের রূবাইয়াত নামে পরিচিত, তার জন্য বিখ্যাত। তার কাব্য-প্রতিভার আড়ালে তার গাণিতিক ও দার্শনিক ভূমিকা অনেকখানি ঢাকা পড়েছে। ধারণা করা হয় রনে দেকার্তের আগে তিনি বিশ্লেষণী জ্যামিতি আবিষ্কার করেন। তিনি স্বাধীনভাবে গণিতের দ্বিপদী উপপাদ্য আবিষ্কার করেন।
বীজগণিতে ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান তিনিই প্রথম করেন। বহুমুখী প্রতিভার দৃষ্টান্ত দিতে বলা হলে বিশ্বসাহিত্য কিংবা ইতিহাসে যাদের নাম উপেক্ষা করা কঠিন ওমর খৈয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম ও শীর্ষস্থানীয়।
দর্শন ও শিক্ষকতায় ওমরের কাজ তার কবিতা ও বৈজ্ঞানিক কাজের আড়ালে অনেকখানি চাপা পড়েছে বলে মনে করা হয়। মধ্যযুগের মুসলিম মনীষা জামাকসারি ওমর খৈয়ামকে ‘বিশ্ব দার্শনিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিশাপুরে তিন দশক ধরে শিক্ষকতা করেছেন।
ইরান ও পারস্যের বাইরে ওমরের একটি বড় পরিচয় কবি হিসেবে। এর কারণ তার কবিতা বা রুবাই এর অনুবাদ এবং তার প্রচারের কারণে। ইংরেজি ভাষী দেশগুলোতে এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা যায়।
ইংরেজ মনিষী টমাস হাইড প্রথম অ-পারস্য ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম ওমরের কাজ সম্পর্কে গবেষণা করেন। তবে, বহির্বিশ্বে খৈয়ামকে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় করেন এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড। তিনি খৈয়ামের ছোট ছোট কবিতা বা রুবাই অনুবাদ করে তা রুবাইয়্যাতে ওমর খৈয়াম নামে প্রকাশ করেন।
১১৩১ খৃষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ওমর খৈয়াম। নিশাপুরে ওমরের সমাধি দেখতে অনেকটা তাবুর মতো। তার কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা সেখানে উৎকীর্ণ করা আছে।