ওলামাদের আগমনে বাতিল সর্বদাই শঙ্কিত: চরমোনাই পীর

ওলামাদের আগমনে বাতিল সর্বদাই শঙ্কিত: চরমোনাই পীর

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ওলামাদের আগমনে বাতিল দূর হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় ওলামা মশায়েখ আইম্মা পরিষদের আয়োজিত জাতীয় ওলামা মশায়েখ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনে আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজীকে সভাপতি, মাওলানা গাজী আতাউর রহমানকে সিনিয়র সহসভাপতি ও মাওলানা রেজাউল করীম আবরারকে সেক্রেটারি জেনারেল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

রেজাউল করীম বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাই অবগত। আগে ডাকাতরাও হক্কানি ওলামাদের ভয়ে সমীহ করতো। এখন ওলামাদের জেলে বন্দি করতে, হামলা করতে ও রক্ত ঝরাতে দ্বিধাবোধ করে না।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শায়খ জাকারিয়া রহ. ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ওলামা মশায়েখদের শক্তিশালী একটি সংগঠন থাকা দরকার। এই প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হলো- জাতীয় ওলামা মশায়েখ আইম্মা পরিষদ। শেষ নবীর পরে সমাজ নষ্ট হলে নবীওয়ালা সব কাজ ওলামাদের করতে হবে। পরিপূর্ণ দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে বাধা এলে তার মোকাবিলা ওলামা মশায়েখ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সব চক্রান্ত নস্যাৎ করার দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ভোট ও খাদ্যের সংকট নিয়ে সবাই চিন্তিত। সংকটের মূল কারণ কোরআন ও সুন্নাহ থেকে আমাদের বের করে আনতে হবে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দূরত্বের কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নায়িকা-গায়িকারা যদি আইনপ্রনেতা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না। অতীতে ৭টি শিক্ষা কমিশন হয়েছে। এই কমিশনে কেন একজন আলেমকে রাখা হয়নি। এই শিক্ষা কারিকুলামে মুসলিম চেতনাবিরোধী বিষয় সন্নিবেশিত করা হয়েছে। পীর সাহেব চরমোনাই এই ইসলামবিরোধী সিলেবাসের বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ করেছেন। এখনও ইসলামবিরোধী বিষয় সিলেবাসে যুক্ত করা আছে। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু থাকলে হাফেজ, আলেম তৈরি হবে না। কোরআন শিক্ষা হবে না।

ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন বলেন, আমাদের চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে। যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন হলে আমারা হাতপাখাকে নির্বাচিত করতে ঘাম ঝরাব। আর যদি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের চক্রান্ত হয় তবে ময়দানে নেমে তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জামিল মাদ্রাসার বগুড়ার মোহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খুলনা দারুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশতাক আহমদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম, মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।

সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হযরত মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ১৫ দফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

১) দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত মূলনীতি ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা’ নিশ্চিত করতে দেশের শাসনতন্ত্র, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক মুল্যবোধকে ইসলামের আলোকে সাজিয়ে তুলতে সবাইকে যার যার স্থান থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

২) বিভিন্ন চিন্তাধারার উলামায়ে কেরামের মাঝে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

৩) ওলামা-মাশায়েখ আইম্মাসহ সব ধর্মীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৪) দেশের সব মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের যথাযথ মর্যাদা প্রদানপূর্বক সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, এতিম ও দুস্থ ভাতা এবং দুর্যোগকালীন ত্রাণ বিতরণের মতো সামাজিক নিরাপত্তা কাজে ইমামদের মতো সৎ জনশক্তিকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৫) কাওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট অক্ষুণ্ন রেখে দেশের সব কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দাওরায়ে হাদিস ও উচ্চতর মাদরাসাগুলোর শিক্ষকদের সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমতুল্য মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।

৬) দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলে মুসলিম শিশুদের কোরআন ও নামাজ শেখানোর জন্য একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলেম বা ক্বারি নিয়োগ দিতে হবে।

৭) দেশে যে কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল এবং সম্মেলনে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানি করা যাবে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পুলিশ পারমিশনের হয়রানিমূলক ও অপমানকর বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে হবে।

৮) দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং মক্তব ও মাদরাসার শিক্ষকদের চাকরিবিধি এবং বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।

৯) মসজিদ মাদরাসা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে দাতাদের যাবতীয় দান-অনুদান সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত করতে হবে।

১০) কারাবন্দি সব মজলুম আলেমকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে এবং উলামায়ে কেরামের নামে দায়ের করা সব ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১১) ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলুল্লাহ সা. এর অবমাননাকারীদের প্রতিহত করতে আইন প্রণয়ন করতে হবে। কোরআন সুন্নাহ বিরোধী বিদ্যমান সব আইন বাতিল করতে হবে এবং কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না মর্মে সংবিধানে ধারা স্থাপন করতে হবে।

১২) কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম নাগরিক ঘোষণা করে তাদেরকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।

১৩) অপসংস্কৃতি, মাদকাসক্তি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে ওলামায়ে কেরাম এবং ইমামদের ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

১৪) দেশে সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৫) দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

এসব দাবি আদায়ে তিন মাসব্যাপী তিন দফা কর্মসূচিও ঘোষণা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হযরত মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

কর্মসূচিগুলো হলো-

১. আগামী ১-৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা ও মাহনগরে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ও সিরাতুন্নবী মাহফিল।

২. আগামী ১-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি থানা ও উপজেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ওলামা সম্মেলন।

৩. ডিসেম্বর মাসব্যাপী সারাদেশে তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ও গণ- কুরআন শিক্ষা কর্মসূচি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *