ওহে রমাযান

ওহে রমাযান

  • আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

 

ওহে রমাযান

পৃথিবী যখন অস্থির, মানুষ যখন মানবতার ঠিকানা খোঁজে পাচ্ছে না কোথাও, ভোগ আর ভোগ একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের। জৌলুষ আর অশ্লীল যৌন আবহে বিষাক্ত যখন যৌবন। নারী দেহবল্লরী হয়ে গেছে পণ্য। যৌবন তেজ যেখানে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে অনাসৃষ্টির উল্লাসে। শিশু হারাচ্ছে পিতৃ সৌহার্দ্য আর মাতৃ সোহাগ পরশ পেলবতা। বার্ধক্য হারাচ্ছে শ্রদ্ধা ও সম্মানধন্যতা। বেদনার্তরা হারাচ্ছে সহমর্মিতার সান্ত্বনা আবেশ। অনটনের আঘাতে মৃয়মলিন দারিদ্র্য যখন এনজিওদের পেটের চিকনাই তৈরির নির্মম পুঁজি। মানবতাবিরোধী অপরাধীরা যখন রক্তাক্ত দাঁত বের করে ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে। মানব সেবাব্রত যখন বেশ্যার শরীরী গন্ধে মাতোয়ারা, রাজনীতি যখন সব ধরনের কুনীতির জঙ্গম যোনী। ওলামা, তলাবা, শুহাদার রক্তে রক্তলাল কালো পিচঢালা রাজপথ। অসত্য সেবীদের ক্রুর হাসির আড়ালে হারায় সত্যের আহ্বান, তখন সে আবহে ওহে রামযাযান কে ‘কইরা লইবে’ তোমাকে বরণ লা’আল্লাকুম তাত্তাকুন তাকওয়ার মহা আলিঙ্গনে?

ওহে রমাযান 

হে মহান অতিথি, শুভেচ্ছা ধ্বনিতে নয়, কালের ক্লেদাক্ততায় বিলাপে বিলাপে খোশ আমদেদ জানাচ্ছি আজ তোমাকে। আমাদেরকে একটু মানুষ করে দিয়ে যাও, উম্মতে হাবীবী রূপে যেন দাঁড়াতে পারি হাশরে।

তুমি যাকে খোঁজ, যে মানুষটির জন্য তোমার মহা আগমন সে মানুষটি কই? সেই সত্য সেবী আজ কোথায়? ভন্ডামীর চাদর ছিড়ে তাকে মুখোশ বিমুক্ত করবে সে কোন জন? বু বকরী চেতনা কই? তেজদৃপ্ত ফারুকী দহন জ্বালা কই? যুন নুরাইনী হায়া-বিনম্র জ্যোতির্ময়ীতা কই? শেরে খোদা প্রজ্ঞাদ্বারের সেই জ্ঞান বিভাস কই? বি আয়্যিহিম ইকতাদাইতুম ইহতাদাইতুম যাকেই সামনে রেখে চলবে হেদায়েতের সত্যের ঠিকানা পেয়ে যাবে, নবী শ্রেষ্ঠ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই মহাসঙ্গীদের গতিময়তা কই?

আমি তাঁদের কাছে যাবো, ঠিকানাটা একটু দাও না খোঁজে এই যে মিনতি মোর।

ওহে রমাযান

তুমি তো ওহে বদরের বাতিল-নাশন বিভায় বিভূষিত লায়লাতুল খায়রুম মিন আলফি শাহার- হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এক রাতকে গর্ভে ধারণ করে আছো তুমি ওহে। হুদাল লিন্নাস, ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান- মনুষ্যকূলের দিশা, হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রমাণ, হক বাতিলের পার্থক্য নিয়ে হেদায়েতের ঠিকানা বানীর অবতরণ প্রারম্ভের সূচনা সূচিতায় স্নাত তোমার দিবস রজনী। শয়তান শক্তি তাগুতি ইবলিস জিঞ্জিরাবদ্ধ হয়ে সমুদ্রের অতল তলে নিক্ষিপ্ত তোমার দার্ঘ্যে। নফলকে দাও ফরজের শক্তি আর ফরজকে দাও সত্তরের মহাবল। রহমত, মাগফিরাত, আর ইতকুম ও মিনান্নার জাহান্নাম থেকে আযাদীর বার্তা আবহে মহিমান্বিত তুমি। মানুষকে মানুষ বানানোর, আল্লাহর দাসকে আল্লাহর বানানোর দারস নিয়ে আগমন তোমার। কিন্তু এই দুনিয়ায় তোমার দিকে তাকানোর অবকাশ আছে কার?

ওহে রমাযান

হে মহান অতিথি, শুভেচ্ছা ধ্বনিতে নয়, কালের ক্লেদাক্ততায় বিলাপে বিলাপে খোশ আমদেদ জানাচ্ছি আজ তোমাকে। আমাদেরকে একটু মানুষ করে দিয়ে যাও, উম্মতে হাবীবী রূপে যেন দাঁড়াতে পারি হাশরে।

শুভ হোক, ভালোতায় ছেয়ে যাক চৌদিক, ম ম করুক রহমতে বরকতে, মাগফিরাতে। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

 

সম্পাদকীয়, মাসিক পাথেয়, জুলাই ২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *