২৭শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৩ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা রমজান, ১৪৪৪ হিজরি
ওয়াজ মাহফিলের বক্তাগণ সব এক। কোনো তফাৎ নেই। এ যেন ব্যবসায়িক সমিতি। কারো ব্যবসায় আঘাত লাগলে তার পাশে অন্যরা এসে দাঁড়ায়। যাতে কারো ব্যবসায়িক ক্ষতি না হয়। তারা সকলে জোটবদ্ধ হয়ে ওই ব্যবসায়ীর পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করে। তদ্রুপ ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের ওইরকম অবস্থা দেখছি। অথচ কিছু কিছু কমার্শিয়াল বক্তা এমন অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে, ইসলামী নীতি আদর্শকে ভুলুন্ঠিত করছে, আলেম-উলামার ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, সে বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না।
আচ্ছা, সব ওয়ায়েজগণ মিলে কোন অনৈতিক কাজ সমর্থন দিলে সেটা জায়েজ হয়ে যাবে? বক্তারা সবাই মিলে সাপোর্ট করলে কী দাম্ভিকতা করা জায়েজ হবে? সকল ওয়ায়েজ ঐক্যবদ্ধ হলে কী চুক্তিভিক্তিক ওয়াজ জায়েজ হবে কখনো? আমার বুঝে আসে না, কেউ কেউ মাঠে ময়দানে ইসলাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে আর তার সতীর্থরা সেটাকে সমর্থন দিবেন, এটা কিন্তু চরম অন্যায়।
আজকাল ওয়াজের ময়দানে প্রায়শঃ এসব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তাদের ইসলাহ বা সংশোধন করছে না। বরং আগের থেকে আরো ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে যাচ্ছে তারা। যে সব অশোভনীয় কাজগুলো কিছু বক্তার দ্বারা হচ্ছে, সেগুলো যদি সংশোধন না করা হয় ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে আলেমদের। বর্তমানে মাঠে-ময়দানে কিছু কিছু ওয়ায়েজ যা করছেন তা নিম্নরুপ।
১. কিছু ওয়ায়েজ টাকা এ্যাডভান্স নেন। কিন্তু মাহফিলে আসেন না। ঠুনকো অজুহাতে মাহফিল ক্যান্সেল করেন। কেউ বলেন আমি অসুস্থ,কেউ বলে গাড়ি খারাপ, কেউ বলে যানজটের কারণে আসতে পারিনি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তিনার অন্য জায়গাতে প্রোগ্রাম রয়েছে। মোটা অংকের আশায় তিনি আগের দাওয়াত ক্যান্সেল করেছেন।
২. কিছু বক্তা মিডিয়া মারফত জানিয়ে দেন, এবার একটু হাদিয়া বাড়িয়ে দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ তাতে রাজিও হন। কিন্তু মাহফিলে উপস্থিত হয়ে ১৫/২০ মিনিট ওয়াজ করে চলে যান। এদিকে আয়োজকদের প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। এলাকার মানুষের কাছে হেয় হয়ে যেতে হয়। দেখা যায়, উক্ত বক্তার একদিনে তিন-চারটে প্রোগ্রাম। সবগুলো ঠেকাতে গিয়ে এক জায়গায় ১৫/২০ মিনিটের বেশী তিনি ওয়াজ করতে পারেন না।
তাহলে মোটা অংকের হাদিয়া দাবী করে এভাবে স্বল্প সময় ওয়াজ করে জনগণকে বোকা বানানো কী আলেমদের শান?
৩. কিছু বক্তা পোষ্টারে নাম নিয়ে ঝামেলা করেন। তার নাম হতে হবে সবার উপরে। যদি কোনো কারণবশতঃ নাম নিচে চলে যায়, সেটা নিয়ে তিনি আপত্তি করে বসেন। কখনো কখনো মাহফিলে যান না। মাহফিলের কাছে গেলেও পোষ্টার দেখার পরে মাফিলের আশ-পাশ থেকে ফিরে আসেন।
বড় আফসোসের বিষয়। শুধু পোষ্টারে নাম নিয়েই এমন তেলেসমাতি, তাহলে তিনি ওয়াজ শেষে টাকা নিয়ে কেমন আচারণ করেন সেটা আল্লাহ মালুম।
৪. কেউ কেউ খাবার নিয়ে ঝামেলা করে থাকেন। আয়োজকগণ তাদের সাধ্যমতে বক্তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু কিছু বক্তা এমন আছে, যারা রুচিমাফিক খাবার না হলে কর্তৃপক্ষের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। অমুক আইটেম নেই কেন? কী খাবার জোগাড় করেছেন? এভাবে নানা অজুহাতে আয়োজকদের ধমকাইতে থাকে।
৫. কিছু বক্তা চান তাকে গাড়ির বহর দিয়ে রিসিভ করতে হবে। মোটরবাইক, প্রাইভেটকার ইত্যাদী গাড়ি আগেপিছে করে তাকে ইস্তেকবাল করে নিয়ে আসতে হবে। এর কমতি হলে তিনি অসন্তুষ্ট হন।
৬. ওয়াজ করে টাকা চেয়ে নেওয়া বা চুক্তি করে নেওয়া তো কিছু বক্তার খাছলাতে পরিণত হয়েছে। টাকা কম হলে কেউ কেউ তো জায়গায় ব্রেক। মানে ওয়াজ করবেন না। কেউ কেউ তো প্রথমে চুক্তি করে নেয়। দাওয়াত দেওয়ার সময় এ্যাডভান্স টাকা। আর বাকিটাকা মঞ্চে ওঠার আগেই। যদি আয়োজকগণ দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ওয়াজ না করে চলে যাবেন এমন হুমকি দেন।
এরকম বহু অনৈতিক কাজ ওয়াজ মাহফিলের বক্তারা করে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস হচ্ছে না। আর বলবে কাকে? এঁদের সবার মাথায় টুপি-পাগড়ি, গায়ে জুব্বা। আবার কেউ কেউ তো সৌদি শায়েখদেরমত বিশাল আবাকাবা লাগায়ে ওয়াজ করেন। সুতরাং ওনাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কথা বলে কী কাফের হওয়ার বা গোমরাহ হওয়ার ট্যাগ লাগাবে? কেউ কিন্তু কিছু বলেন না।
দেখেন, অন্যায় করে যাচ্ছে, আলেমদের মান-ইজ্জত নষ্ট করছে, ইসলামী নীতি আদর্শ পদদলিত করে যাচ্ছে, তারপরেও আমরা কেউ কিছু তাদের বলব না, এটা বড় আফসোসের বিষয়। আচ্ছা, আমরা কী ওসব বক্তাদের সংশোধন চাই না? নাকি ওনারা এভাবে বেপরোয়া চলতেই থাকবেন। সত্যি যদি সংশোধন চাই তাহলে কথা বলা দরকার। ওসব বক্তাদের কোনো মুরুব্বীদের আওতায় এনে ইসলাহ করা জরুরী। নচেৎ আমরা আরো ক্ষতির সম্মুখিন হব।
এজন্য যিনি ওয়াজ করবেন, তার ইসলাহ বা সংশোধন তথা খাছলাত পরিবর্তন হওয়া চাই। বক্তার নিজের খাছলাত পরিবর্তন ছাড়া জাতির সংশোধন সম্ভব নয়।