৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

ওয়াজ মাহফিলের রেশ যেন কওমী মাদ্রাসার উপরে না পড়ে

ফাইল ছবি

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

ওয়াজ মাহফিলের কিছু কিছু বক্তাদের বাড়াবাড়ির কারণে এর আগে একবার কওমী মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। নানান সমালোচনায় সবাই ছিল জর্জরিত। বিশেষ করে আলেম-উলামাদের নানান ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। কিছু কিছু উঠতি বয়সের বক্তার লাগামহীন বক্তব্য প্রশাসনকে ক্ষেপিয়ে তোলে। প্রশাসনের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সকলেরই কওমী মাদ্রাসা এবং আলেম-উলামাদের প্রতি অশ্রদ্ধা ভাব চলে আসে। কোথাও কোথাও আলেমদের হয়রানির শিকার হতে হয়।

মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহে কওমী মাদ্রাসাগুলো খুবই সুন্দর ভাবে চলছে। কোনো পেরেশানী নেই। অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ এখন কওমী অঙ্গনে। লেখাপড়ার মান অনেক ভালো। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কওমী মাদ্রাসার শাখা-প্রশাখা আরো বেড়ে চলেছে। পুরো দেশ ও জাতির নিকট আস্থার এক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে এসব দেওবন্দী মাদ্রাসাগুলো।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এখনো কিছু বক্তা ওয়াজ মাহফিলকে রাজনীতির মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছেন। সেখানে গিয়ে যত জারিজুরি। নিজের কোন যোগ্যতা, দক্ষতা, সাহসিকতা নেই রাজপথে নামবে। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের মত একটি শান্ত পরিবেশকে তারা গুলিয়ে ফেলে। অস্থিরতা সৃষ্টি করে সেখানে। যত বিতর্কিত কথা, বিতর্কিত ওয়াজ বা বক্তব্য দিয়ে থাকে। এর দ্বারা পরিবেশ আরো ঘোলাটে হয়। প্রশাসনের নজরদারী বেড়ে যায়।

এদেশের অধিকাংশ ওয়াজ মাহফিল হয় কওমী মাদ্রাসাতে। আবার ওয়াজের ময়দানের বেশীর ভাগ বক্তা কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক। কেউ মাদ্রাসার পরিচালক, কেউ মুহাদ্দিস, কেউ শিক্ষক এরকম কোনো না কোনো ভাবে তিনি কওমী মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু বক্তা যখন কওমী মাদ্রাসার মাহফিলে গরম বক্তৃতা করে আবার তিনি কওমীতেই আশ্রয় নেন। প্রশাসনের নজর অটোমেটিক কওমী মাদ্রাসার উপরেই পড়ে।

বক্তার বল্গাহীন কথা। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন বক্তব্য। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ। সরকারকে অবমুল্যায়ন। খোদ রাষ্ট্রের কর্ণধরদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার। নিশ্চয়ই এটা গর্হিত কাজ। কারো যদি সরকারকে অপছন্দ হয়, সরকারের কার্যক্রম ভালো না লাগে, তার জন্য রাজপথ খোলা। সেখানে প্রতিবাদ হতে পারে। জাতীয় প্রেসক্লাব সহ দেশের বহু রাজপথ খোলা আছে, সেখানে গিয়ে তিনি বক্তৃতা করতে পারেন। তাই বলে ওয়াজ মাহফিলের মত একটা শান্তিপূর্ণ জায়গাতে বেপরোয়া কথা-বার্তা বলা, সরকারকে হুমকি-ধমকি দেওয়া চরম অন্যায় কাজ।

মানুষ ওয়াজ মাহফিলে যায় নিজেকে সংশোধন করার জন্য। আত্মশুদ্ধি করার মানসিকতা নিয়ে ওয়াজ মাহফিলে ছুটে যায়। দৈনন্দিন জীবনে কিছু আমল শেখার জন্য, মানুষের জীবনের আমূল পরিবর্তন ঘটানোর জন্যই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে যদি সাধারণ মানুষ দেখে, সেখানে শুধু জারিজুরি মারা হচ্ছে, সরকার পতনের বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে, এতে স্রোতাদেরও মন খারাপ হয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেসব প্রতিষ্টান এবং বক্তার প্রতি বিশেষ শ্যেন দৃষ্টি পড়ে যায়। এজন্য বক্তাকে অবশ্যই সহনশীল বক্তব্য দেওয়া চাই। বিতর্কিত কথা থেকে পরহেজ থাকা জরুরী।

বর্তমানে আরো কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সরকার ওমিক্রণ এবং করোনার ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে জনসমাগম সীমিত আকারে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কেউ সেসব বিধি নিষেধ মানতে নারাজ। আবার সরকার কোথাও নীরবতা থাকলেও কিছু কিছু মানুষ সরকারের নিয়মনীতি মোটেও তোয়াক্কা করছেন না।

কথা হলো, সরকার নীরব থাকলে ভালো কথা। ওয়াজ মাহফিলের রেশ ধরে যদি আবার কওমী মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়, সেটা হবে বড় দুঃখজনক। কেননা, কওমী মাদ্রাসা হল দ্বীনের মারকাজ। এখান থেকে দ্বীনের দায়ী, দ্বীনের অকুতোভয় সৈনিক তৈরী হয়। মাদ্রাসাতেই কোরআন-হাদীসের ধারক-বাহকগণ গড়ে উঠেন। সুতরাং সেই মারকাজগুলো যদি বন্ধ থাকে, তাহলে দেশ ও জাতির চরম মূল্য দিতে হবে। ওয়াজ মাহফিল বন্ধ হলে তেমন প্রভাব ফেলবেনা যত ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হলে।

এজন্য যিনি যেখানেই আছেন। মেহেরবাণী করে ধৈর্য এবং সহনশীলতার সাথে কাজ করুন। হেকমত এবং প্রজ্ঞার সাথে দ্বীনি কাজে শরীক হোন। অতি উৎসাহী হয়ে কেউ সামনে বাড়াবেন না, বরং বিচক্ষণতার সাথে এগিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট

আরও পড়ুন: তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com