৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
ওয়াজ মাহফিল সাধারণত ইসলাহ বা সংশোধনের জন্য। বিজ্ঞ আলেম-উলামা বা মাশায়েখগণ কোরআন-হাদীসের আলোচনার মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথ দেখান। জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা বাতলে দেন। জাহান্নামের রাস্তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া অনেক অজানা বিষয় মানুষকে জানানোর চেষ্টা করা হয়। মাসয়ালা-মাসায়েলের তালিম দেওয়া হয় সেখানে।
একটা পুতঃপবিত্র জায়গা বলা যায় ওয়াজ মাহফিলকে। ভ্রাম্যমান শিক্ষাকেন্দ্র। বিশেষ করে বয়স্ক এবং সাধারণ মানুষের তা’লিম হাসিলের মোবারক এক স্থান ওয়াজ মাহফিল। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, ওয়াজ মাহফিলের সেই আসল অবস্থা এখন আর বাকি রাখা হচ্ছে না। ওয়াজ মাহফিল যে উদ্দেশ্যে সেটা এখন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এখন ওয়াজ মাহফিলকে বিনোদন অনুষ্ঠান বানানো হয়েছে। ওয়াজ মাহফিলে বয়ানের পরিবর্তে হাসি-মজাক, নাটক, সিনেমার ডায়ালগ, কৌতুক দেখানো হচ্ছে। কিছু কিছু বক্তা ওয়াজ মাহফিলের ষ্টেজে বসে নাটক দেখাচ্ছেন। পুরো সিনেসা-বায়োস্কোপের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মত সেখানে অভিনয় দেখাচ্ছেন। স্রোতাগণকে আনন্দ উপভোগ করাচ্ছেন তারা। পুরো মজলিসে হাসির রোল পড়ে যাচ্ছে। তাদের কর্মকান্ড দ্বারা বোঝার কায়দা নেই, এটা কী ওয়াজ মাহফিল নাকি নাটকের মঞ্চ?
বড় দুঃখজনক অবস্থা। ওয়াজের মঞ্চে যেখানে বক্তাগণ কোরআন-হাদীসের কথা এবং ইসলামী ইতিহাস এর কথা বলে মানুষকে আখেরাতমুখী করবে। কিন্তু কিছু বক্তার খামখেয়ালীপনা এবং স্বেচ্ছাচারিতায় ওয়াজ মাহফিলের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। ওয়াজের পরিবেশ আর বজায় থাকছে না। মানুষের শিক্ষনীয় কিছু থাকছে না। মানুষ আখেরাতমুখী হওয়ার পরিবর্তে অশ্লীলতার দিকে ঝুকে যাচ্ছে।
ওয়াজের মাহফিলে বসে ধোঁকাবাজি। কত বড় স্পর্ধা। প্রতারণার আশ্রয় নেয়। পাবলিককে বোকা বানানো হচ্ছে। সেই ব্যক্তি বিনোদনমুলক অনুষ্ঠানে কী করে থাকে, সেটা ওয়াজের ষ্টেজে পরিবেশন করছে। আচ্ছা, বিনোদন আর ওয়াজ মাহফিল কী এক জিনিস? বিনোদন জগতের পাঠ এখানে কেন? বিনোদনের জায়গায় বিনোদন রাখা উচিত। আর ওয়াজ মাহফিলকে তার জায়গায় ছেড়ে দিতে হবে। ওয়াজের মাহফিলে দ্বীনি আলোচনা এবং মানুষকে আখেরাতমুখী করার পরিবর্তে ভিন্ন কোন পরিবেশ কায়েম করা সমীচিন নয়।
তাছাড়া নাটকে সিনেমার প্লেয়ার কেন ওয়াজের ষ্টেজে বসবে? যারা নাটক করেন, সিনেমা তৈরী করেন, হাসি-মজাকের ভিডিও তৈরী করেন, তাদের জায়গাতো ওয়াজের ময়দান নয়। তাদের তো ওয়াজের মঞ্চেই বসা ঠিক নয়। তারা থাকবে বিনোদন পাড়ায়। চিত্রজগতে গিয়ে সেগুলো করতে পারেন। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের মত পবিত্র জায়গাতে তাদের আগমণ কোনো শুভ লক্ষণ নয়।
মানে ওয়াজ মাহফিলকে ভিন্ন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পবিত্রাঙ্গনকে বিনষ্ট করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর গোমরাহ ফেরকার লোকেরা এই অঙ্গনে প্রবেশ করে ওয়াজের ময়দানের সেই রুহানিয়্যাত বিদায় করে ফেলেছে। আদব-আখলাক, তালিম, তাযকিয়া, জিকির-আজকার এর পরিবর্তে ওরা নাটক-সিনেমার ডায়ালগ ঢুকিয়ে দিয়েছে। কী এক সুদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। প্রথমে ওরা জিকির-আজকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ’ইল্লাল্লাহ’ জিকির জায়েজ নেই! আবার জিকির করে কী লাভ? ইত্যাকার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কখনো বা পীর-মুরিদীকে কটাক্ষ করে। কখনো হালকায়ে জিকির নিয়ে ওরা প্রশ্ন তোলে। কিন্তু এখন ওরা কৌশলে ওয়াজের ময়দানে নাটক-সিনেমার মন্ত্র পাঠ করে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে কোন উচ্চ-বাচ্চ নেই। কেউ কোন কথাই বলছে না।
মানে এটা আরেক ধরনের পলিসি। দ্বীন ইসলামের মধ্যে ভিন্ন কোন বিষয় ঢোকানোর নীলনকশা বলা যায়। যেমন তাদের গুরু দ্বীনের তাহরিফ করেছে। আর বর্তমান তাদের শিষ্যগণ সেই পথেই চলছে। এজন্য সতর্ক হওয়া দরকার। ওয়াজের মাহফিলকে বিনোদনের মঞ্চ বানানো যাবে না। কাউকে এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। ওয়াজ মাহফিলের দ্বারা মানুষ তালিম গ্রহণ করে। কিছু হাসিল করতে পারে। সেটা মুসলমানের ঐতিহ্য এবং প্রাণের জায়গা। সুতরাং সেই পবিত্র অঙ্গনের হেফাজত আমাদেরই করতে হবে। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন। আমিন।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিষ্ট
আরও পড়ুন: তাঁর বয়ানে প্রশমিত হয় হৃদয়ের যাতনা