কথা সত্য মতলব খারাপ

কথা সত্য মতলব খারাপ

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

ইদানিং কিছু মানুষ আবিস্কার হয়েছে, তারা বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে বলে, ‘আসুন, কুরআনের কথা হবে, কুরআনের ওয়াজ হবে’। তবে তাদের এই কথার মধ্যে যথেষ্ট গোমর রয়েছে। ওরা যেন মানুষকে বোকা বানাতে চায়। মানে আরবী কথা ‘কালিমাতু হাক্কিন উরিদু বিহাল বাতেল’ তথা ‘কথা সত্য মতলব খারাপ’।

ওনারা শুধু কোরআনের ওয়াজ শুনতে চান। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের কথা শুনতে চান না। অথচ কুরআন বুঝতে হলে হাদীসের আলোকে বুঝতে হবে। হাদীস ছাড়া কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। একথা কখনো বলে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাদীসকে সরাসরি অস্বীকার করে বসে।

একটু চিন্তা করে দেখুন! কুরআন নাজিল হয়েছে ২৩ বছর ধরে। উম্মতের অবস্থার আলোকে কুরআন আস্তে আস্তে, অল্প অল্প করে নাজিল করা হয়েছে। এমন নয় পুরো ত্রিশ পারা এক সঙ্গে নাজিল করা হয়েছে, তেমনটা করা হয়নি। আবার কুরআনের পুরো ভলিয়ম ধরে এক সঙ্গে দেওয়া হয়নি। কখনো একটা আয়াত, একটা সুরা, একটা রুকু এভাবে করে আস্তে আস্তে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

আচ্ছা পুরো ত্রিশ পারা এক সঙ্গে ভলিয়ম আকারে তো আল্লাহ তায়ালা পাঠাতে পারতেন, কিন্তু তিনি পাঠাননি। কেননা ওই ভাবে এক সঙ্গে দিলে উম্মত সেটা গলাধঃকরণ করতে পারত না। বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী ধীরে ধীরে কুরআনুল কারীম এসেছে এবং সেই সাথে একজন শিক্ষক পাঠায়েছেন। তিনি হলেন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই মহান শিক্ষকের মাধ্যমে আস্তে আস্তে অবস্থানুযায়ী কুরআন এসেছে। আর তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন, যতটুকু এসেছে ততটুকু শিক্ষা দিয়েছেন।

পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সাহাবাদের কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তাদেরকে ব্যাখ্যা বোঝায়েছেন। সাহাবীগণ আগ্রহভরে সেগুলো শিখেছেন, আমল করেছেন। এখন বলুন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, সাহাবাগণ যেভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, আপনি কী সেভাবে কুরআন শিখতে চান? নাকি নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী? যদি নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী শিখতে চান তাহলে তো কুরআনের বারটা বাজবে। আর আপনার ব্যাখ্যায় জাতি গোমরাহীতে নিমজ্জিত হবে।

এজন্য আল্লাহ তায়ালা যাকে শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন, তিনি যেভাবে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন, সাহাবাগণ যেভাবে কুরআন শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, সেভাবে যদি আপনি কুরআন শিখতে চান তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাসুলের হাদীসকে উপেক্ষা করে কেউ কুরআন বুঝতে পারবে না। সুতরাং যারা বলবে, কুরআন মানি, কুরআনের ওয়াজ হবে, শুধু কুরআনের কথা হবে, নিশ্চয়ই তাদের কথার মধ্যে দুরভিসন্ধি রয়েছে। ওরা যেন মুনকিরীনে হাদীস তথা হাদীসকে অস্বীকারকারী।

হাদীসকে অস্বীকার করা মানে কুরআনকে অস্বীকার করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মা আতা কুমুর রাসুলু ফাখুজহু ওয়া নাহাকুম আনহু ফানতাহু’। অর্থাৎ আল্লাহর রাসুল যা নিয়ে এসেছে সেটা তোমরা আঁকড়ে ধর এবং তিনি যেটা নিষেধ করেছেন সেটা থেকে বিরত থাক।

অন্য আয়াতে রয়েছে, ‘মা ইয়ানতিকু আনিল হাওয়া ইন হুয়া…’। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুখ থেকে যেটা নির্গত হয় সেটা ওহী।

মোটকথা রাসুলের কথা, কাজ সবকিছু হাদীস। তিনি অহেতুক কিছু বলেননি, করেননি। সুতরাং হাদীসকে অস্বীকার করার কায়দা নেই। আবার হাদীসকে বাদ দিয়ে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়।

দেখুন! শুধু বই পড়ে ডাক্তার হওয়া যায় না। বাজারে ভুরি ভুরি ডাক্তারি বই পাওয়া যায়। কেউ যদি মেডিকেলে ভর্তি না হয়ে বাজার থেকে বই কিনে ঘরে পড়াশুনা শুরু করে এরপর ডাক্তারি শুরু করে দেয়, তাহলে তার দ্বারা কোনো চিকিৎসা হবে না। তার দ্বারা গোরস্থান আবাদ হবে। এজন্য মেডিকেলে পড়ার পরেও কারো প্রাকটিস করার অনুমতি নেই, যতক্ষণ সে ইন্টার্নী না করবে, তথা অভিজ্ঞ ডাক্তারের সংস্পর্শে থেকে ডাক্তারী না শিখবে।

তেমনি শুধু ঘরে বসে নিজে নিজে কুরআন বোঝা যায় না। তার জন্য হাদীসের আলোকে কোনো অভিজ্ঞ উস্তাদের কাছে ইন্টার্নী করতে হবে। এরপর যদি কিছু বুঝতে পারে। আজকাল বড় ফেৎনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার থেকে কুরআন আর তাফসির কিনে ঘরে বসে উস্তাদ ছাড়া প্র্যাকটিস করছে। ওরা নিজেরা গোমরাহ এবং জাতিকে গোমরাহীতে ডুবাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সহী বুঝ দান করুন। আমিন।

  • লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *