পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের সংযোগ দিলেও মনপুরা উপজেলার মানুষকে সেই সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। অথচ মনপুরা থেকে বেশি দূরত্বের চরেও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। কী কারণে পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ উপজেলায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দেওয়া হয়নি, সেটি এলাকাবাসীর প্রশ্ন। তাদের একটাই দাবি- যেকোনো মূল্যে মনপুরায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দিতে হবে।
এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ‘২৪ ঘণ্টায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের দাবিতে’ আন্দোলন করেছেন স্থানীয় নাগরিক কমিটিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সাধারণ মানুষের একমাত্র দাবি, জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।
সম্প্রতি সরেজমিনে মনপুরা উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, মনপুরা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিয়া নিশাতদের ঘরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও বাল্ব লাগানো থাকলেও কেরোশিনের কুপির আলোতে সে পড়া-লেখা করছে। হাজীরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. সাঈদ আবদুল্লাহ নিহালকেও হারিকেনের আলোতে পড়া-লেখা করতে দেখা গেছে। এই চিত্র এখন উপজেলার প্রায় সব বাড়িতেই।
বাজারের ব্যবসায়ীদের বৈদ্যুতিক লাইন লাগিয়ে সোলার বাতির আলোতে কেনাবেচা করতে দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সবাই কষ্ট করে দিন পার করছেন।
হাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, তারা রাত ১০টার পর মাত্র ২ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ পান। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে তাদের দোকানের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারের সব ব্যবসায়ীর একই অবস্থা। কবে বিদ্যুৎ পাবেন তা-ও বলতে পারে না বিদ্যুৎ অফিস।
হাজিরহাট মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, বিদ্যুতের অভাবে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের কারণে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। তাই দ্রুত বিদ্যুতের এই অবস্থার পরিবর্তন চান তিনি। একই সঙ্গে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের দাবিও জানান এ শিক্ষক।
মনপুরা বিদ্যুৎ সরবরাহের (ওজোপাডিকো) আবাসিক প্রকৌশলী আব্দুস ছালাম জানান, তাদের চারটি মেশিনের মধ্যে ৩টি মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। মেশিনগুলো ৩০ বছর আগের হওয়ায় মেরামত করে আনলেও দু-এক দিন পর আবারও সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে ৫০০ কেভির একটি মেশিন চালু থাকলেও সেটি থেকে ২০০ কেভির বেশি লোড দেওয়া যাচ্ছে না। দুই এক দিনের মধ্যে ৫০০ কেভির আরো একটি মেশিন মেরামত করে বসানো হবে। তখন কিছুটা হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
মনপুরা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে তজুমদ্দিন উপজেলার চর মোজাম্মেলে সাড়ে ৯ কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে মনপুরার কলাতলীর চর খুবই কাছে। মাঝখানে শুধু একটি ক্যানেল রয়েছে। সেখানে দুইটি বিদ্যুতের বড় খুঁটি দিয়ে কলাতলীর চরে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব।
আবার কলাতলীর চর থেকে মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল হলেই মনুপারায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এতে করে মানুষের যে দাবি সেটিও পূরণ হবে। তাদের আর বিদ্যুৎ নিয়ে কষ্ট থাকবে না। মনপুরার বিদ্যুতের সমস্যার বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন বলেও জানান তিনি।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, একটি উপজেলার উন্নয়ন অনেকাংশে বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে। বিদ্যুৎ না থাকলে উন্নয়ন চোখে পড়ে না। বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের অফিসের কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বিদ্যুতের বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আশা করছেন, খুব দ্রুত বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হবে।