পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত মহামারীর কারণে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে প্রবাসী অধ্যুষিত অধিকাংশ দেশ। এতে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক এরই মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন। অর্থাভাবে টিকতে না পেরে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে শুধু নয় দেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ৪০ হাজার ৭৫৬ জন প্রবাসী কর্মী।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য বলছে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট চাকরি হারিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে। গত সাড়ে চার মাসে দেশটি থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ২৩ হাজার ৫০২ জন। এর মধ্যে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫৭৩। নারী কর্মী রয়েছেন ৯২৯ জন।
ইউএই প্রত্যাগত কর্মীরা বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে জানিয়েছেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশটিতে কর্মসংস্থান কমেছে। ফলে সেখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিদেশী কর্মীদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তবে এর অনেক প্রতিষ্ঠানই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মীদের আবার চাকরিতে ফেরত নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিরে আসা প্রবাসীরা।
মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতার থেকে গত সাড়ে চার মাসে ফিরে এসেছেন ৬ হাজার ৬৮ জন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮০২ জন পুরুষ এবং ২৬৬ জন নারী কর্মী। কাজ না থাকায় চাকরি হারিয়ে এদের সবাই দেশে ফিরেছেন। যেসব প্রবাসী দেশটিতে ফ্রি ভিসার আওতায় গিয়ে সেখানকার বিভিন্ন দোকান ও ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, তারাই চাকরি হারিয়েছেন।
চাকরি হারিয়ে মালদ্বীপ থেকেই গত সাড়ে চার মাসে ফিরে এসেছেন ৭ হাজার ৭৫৯ জন। ফিরে আসা কর্মীরা প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে জানিয়েছেন, মালদ্বীপ পর্যটননির্ভর দেশ হওয়ায় মহামারীতে সেখানকার বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই এখন কোনো কাজ নেই। এ কারণে কোম্পানিগুলো তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে।
মালদ্বীপে বাংলাদেশীরা মূলত হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় কাজ করে থাকেন বেশি। এছাড়া দেশটির মত্স্য আহরণ খাত এবং নির্মাণ ও শিল্প খাতেও অনেক বাংলাদেশী কাজ করেন।
মালদ্বীপ থেকে ফিরে আসা একাধিক প্রবাসী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় বিদেশীদের প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল মালদ্বীপ। ফলে পর্যটননির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বাংলাদেশী শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান ছাঁটাই না করলেও নিয়মিত বেতন দিচ্ছে না। আবার অনেকের বেতন আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ। মালদ্বীপে বর্তমানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ৮০ শতাংশই বর্তমানে সেখানে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। দেশ থেকে টাকা নিয়ে বাসা ভাড়া ও খাওয়ার খরচ চালাচ্ছেন কর্মহীন শ্রমিকদের অনেকেই।
মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশী কর্মরত, যাদের বড় অংশই শ্রমিক। অনেকেই আবার ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশটিতে চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন বাংলাদেশীরা।
বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, কাজ না থাকায় গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসেছেন ১ হাজার ৮৩৮ জন। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মালয়েশিয়া ফেরত একজন প্রবাসী কর্মী জনান, মহামারীজনিত দীর্ঘ লকডাউনে মালয়েশিয়ার বিদেশী মালিকানাধীন ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশী কাজ করতেন, যারা একে একে ফিরে আসছেন।
এছাড়া কাজ না থাকায় গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ইরাক থেকে ১ হাজার ৪১৯ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১, থাইল্যান্ড থেকে ২০, মিয়ানমার থেকে ৩৯ ও কম্বোডিয়া থেকে ৪০ জন প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন।
চাকরি হারিয়ে ফিরে আসা কর্মীদের প্রসঙ্গে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটি বৈশ্বিক। চাকরি হারিয়ে যারা ফিরে এসেছেন, তাদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবা খাতে কাজের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কারণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই বহির্বিশ্বে এসব সেক্টরে চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে।
/এএ