করোনার টিকার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : মরণব্যাধী করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গ্রহণীয় উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখুন- এ কামনা আমাদের সবার। দেশের প্রতিটি মানুষই এমন আশা করে থাকে। এ জন্য গৃহীত উদ্যোগ জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়ন হোক বলে আশাবাদি আমরা। বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি ভয়ানক রূপে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
আশার কথা, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি টিকা বাজারে ছাড়ার পর্যায়ে চলে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই অনেক উন্নত দেশে ব্যাপক আকারে টিকার প্রয়োগ শুরু হবে। অথচ এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকার জন্য ভারতের একটি কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা ছাড়া টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় কোনো অগ্রগতি নেই। অনেকে সেই চুক্তিকেও অপর্যাপ্ত মনে করছেন। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবারও বলেছেন, ‘যখনই টিকার অনুমোদন মিলবে, তখনই আমরা পাব।’ তিনি বলেছেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে টিকার বুকিং দিয়ে রেখেছি।’ পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুসারে এরই মধ্যে দেশে টিকা এলে কারা আগে টিকা পাবে তার অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরি এবং টিকা পাওয়ার পর তা আমদানি, সংরক্ষণ ও প্রয়োগের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও প্রস্তুত করা হচ্ছে টিকা প্রয়োগের জন্য।
বাংলাদেশে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কম্পানির টিকার ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনোটারই ট্রায়াল শুরু হয়নি। বাংলাদেশে ট্রায়াল হলে এখানে কোন টিকার কেমন কার্যকারিতা তা যেমন জানা যেত, একইভাবে এসব টিকা আগে পাওয়ার সুযোগ থাকত। পাশাপাশি টিকার দামও কম হতো। ট্রায়াল শুরু করতে না পারাকে বিশেষজ্ঞরা এক ধরনের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন। আমাদের মতো দেশের জন্য টিকার দামও একটি বড় বিবেচ্য বিষয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অক্সফোর্ড ও রাশিয়ার টিকার স্বত্ব উন্মুক্ত থাকায় এগুলোর দাম অনেক কম পড়বে। দুই থেকে পাঁচ ডলারের মধ্যে। অন্যদিকে মডার্নার টিকার প্রতি ডোজের দাম ২০ ডলার এবং ফাইজারের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়তে পারে ৩৮ ডলার। তদুপরি সব দেশই নিজেদের প্রয়োজন আগে মেটাবে। সে ক্ষেত্রে জোর উদ্যোগ না থাকলে টিকা পেতে বাংলাদেশের অনেক বিলম্ব হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে যেসব টিকার ট্রায়াল হওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলো দ্রুত শুরু করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, টিকা আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো অনেক তৎপর হতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে টিকা আমদানিকেও উৎসাহিত করতে হবে। আগাম বা সীমিত পরিসরে প্রয়োগ উপযোগী বলে যে ছয়টি টিকাকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সেগুলো সীমিত পরিসরে আমদানি করা যায় কি না দ্রুত সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোনো কোনো টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হয়। তার জন্যও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি টিকা প্রদানের জন্য দেশব্যাপী প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারি মোকাবেলায় যত বিলম্ব হবে ক্ষয়ক্ষতি ততই বাড়বে।