৮ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৮ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি

করোনা টিকার হিসাবে গরমিল

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯০ ডোজ। টিকা ব্যবহার হয়েছে ৩৬ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫ ডোজ। সেই হিসাবে মজুদ থাকার কথা ৩৪ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯৫ ডোজ। কিন্তু মজুদ আছে ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮ ডোজ, যা প্রকৃত মজুদ থেকে ২৩ লাখ চার হাজার ৩৭৩ ডোজ বেশি।

গত ৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গরমিল পাওয়া যায়।

অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য মতে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোভ্যাক টিকার ক্ষেত্রে প্রাপ্তির চেয়ে টিকা প্রদান হয়েছে বেশি। জেঅ্যান্ডজে টিকার হিসাবে প্রাপ্তির চেয়ে টিকা প্রদান কম দেখানো আছে। সে অনুযায়ী এই টিকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই।

তবে ফাইজারের আরো দুটি টিকা (পিইডি ও ভিসিভি) এবং সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের প্রাপ্তি ও ব্যবহারের হিসাবে মিল রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, কোনো ভ্যাকসিন অপচয় হয়নি, বরং প্রতিটি ভায়াল থেকে অতিরিক্ত এক ডোজ করে বেশি দেওয়া গেছে। এ কারণে প্রাপ্ত টিকার চেয়ে ব্যবহার বেশি হয়েছে।

তবে করোনার টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নার্সদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভায়ালে থাকা অতিরিক্ত অংশ এতই কম ছিল যে সিরিঞ্জে তা ভালোভাবে আসেনি। তাই তাঁরা সে অংশটুকু ব্যবহার করতে পারেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন নার্স জানান, গত দুই বছরে ভ্যাকসিনের চার ধরনের ভায়াল এসেছে। এর মধ্যে ছয়টি, ১০টি, ১২টি এবং কোনোটিতে ১৫টি পর্যন্ত ডোজ ছিল। প্রতিটি ভায়ালে থাকা নির্দিষ্ট ডোজের বাইরে তাঁরা টিকা ব্যবহার করতে পারেননি।

ইপিআইয়ের তথ্য মতে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে পাঁচ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার ১১০ ডোজ।

টিকার ব্যবহার দেখানো হয়েছে পাঁচ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ৭৬৮ ডোজ। ব্যবহার বেশি দেখানো হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৬৫৮ ডোজ।
ফাইজারের টিকা (রেডি টু ইউজ) এসেছে সাত কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯০ ডোজ। ব্যবহৃত টিকা দেখানো হয়েছে আট কোটি পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৭৩২ ডোজ। টিকার ব্যবহার বেশি দেখানো হয়েছে ১৪ লাখ আট হাজার ৩৪২ ডোজ।

মডার্নার টিকা এসেছে এক কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ ডোজ। টিকা ব্যবহার হয়েছে এক কোটি ৫৮ লাখ আট হাজার ১২৬ ডোজ। ব্যবহার বেশি দেখানো হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৬ ডোজ।

সিনোভ্যাকের টিকা এসেছে ছয় কোটি চার লাখ ৬৫ হাজার ৪০ ডোজ। ব্যবহৃত টিকা দেখানো হয়েছে ছয় কোটি ১৩ লাখ সাত হাজার ৬৩৫ ডোজ। বেশি দেখানো হয়েছে আট লাখ ৪২ হাজার ৫৯৫ ডোজ।

জেঅ্যান্ডজে ভ্যাকসিন এসেছে ছয় লাখ ৭৯ হাজার ৭৫০ ডোজ। ব্যবহৃত টিকা দেখানো হয়েছে ছয় লাখ সাত হাজার ৮৬২ ডোজ। এখানে টিকা কম ব্যবহৃত হওয়ায় ৭১ হাজার ৮৮৮ ডোজ মজুদ থাকার কথা। অথচ মজুদের ঘরে লেখা আছে শূন্য।

ইপিআই সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ক্রয়কৃত টিকা ৯ কোটি ২০ লাখ ছয় হাজার ডোজ, কস্ট শেয়ারিং করেছে আট কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৪০ ডোজ, উপহার হিসেবে পেয়েছে ১৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫০ ডোজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি নাইট্যাগের (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, যদি এমন হয় তাহলে টিকা না দিয়ে তথ্য-উপাত্ত তৈরি হয়েছে। আরেকটি হতে পারে, যতটুকু একজনকে দেওয়ার কথা তার চেয়ে পরিমাণে কম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সিরিঞ্জে যখন ওঠানো হয়েছে সেখানে কম ওঠানো হয়েছে।

টিকার অপচয় বিষয়ে বে-নজির আহমেদ বলেন, টিকার অপচয় নির্ভর করে যাঁরা টিকা দিচ্ছেন তাঁদের ওপর। যদি দক্ষ লোক টিকা দেন, তাঁদের অপচয় কম হয়। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ অপচয় হতে পারে। তবে একেবারে অপচয় হয়নি এটা অসম্ভব। দেখা যায়, একটা ভায়াল খোলার পর সেটার অর্ধেক শেষ হওয়ার পর আর লোক এলো না টিকা নিতে। তখন তা ফেলে দিতে হয়। অনেক সময় হাত থেকে পড়ে টিকা নষ্ট হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, টিকার হিসাব বস্তুনিষ্ঠ হওয়া উচিত। তাই তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে দেখা উচিত। যতটুকু আনা হয়েছে তার চেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হলে ধরে নিতে হবে, টিকা না দিয়ে সংখ্যা দেখানো হয়েছে।’

টিকার হিসাবের গরমিলের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহাদত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নিবন্ধিত টিকাগ্রহীতার হিসাবে ভুল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে গণটিকার হিসাবে ভুল হতেও পারে। একটা শূন্য ভুল করলেই তো অনেক বড় গরমিল হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই গরমিল তিন কারণে হতে পারে। এক. তিন কোটি গণটিকার ম্যানুয়াল হিসাব। দুই. ইপিআই সারা দেশের যে তথ্য দিয়েছে, সেখানে গরমিল হতে পারে। তিন. একটি ভ্যাকসিনের ভায়াল থেকে ১০ জনকে দেওয়ার কথা বলা হলেও ১১-১২টি পর্যন্ত দেওয়া গেছে।’

শেয়ার করুন


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ১৯৮৬ - ২০২৩ মাসিক পাথেয় (রেজিঃ ডি.এ. ৬৭৫) | patheo24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com