করোনা প্রতিরোধে মাস্কের কার্যকারীতা ও মাস্ক বৃত্তান্ত

করোনা প্রতিরোধে মাস্কের কার্যকারীতা ও মাস্ক বৃত্তান্ত

করোনা প্রতিরোধে মাস্কের কার্যকারীতা মাস্ক বৃত্তান্ত

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা যাওয়ার পর থেকেই আশেপাশে মাস্কপড়ার হিড়িক লেগেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক কতটুকু কার্যকরী, কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করাআবশ্যক?

সম্পর্কে ফরাসি স্বাস্থ্য মন্ত্রী এক টুইটে জানিয়েছেন, ‘‌আমি একদিন বাড়ির বাইরে দেখি, প্রায় সকলেই মাস্ক পরে ঘুরছেন। আরকেউ কেউ হাত দিয়ে মাস্ক ঠিকও করছেন।’‌

এই টুইটের ভিত্তিতেই সমস্যা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এভাবে হাত দিয়ে মাস্ক ঠিক করলে তো মুশকিল।কারণ কোনও কারণে মাস্কের ওপর যদি জীবানু লেগে থাকে, তাহলে তো সেটা হাতে লাগবে, মুখেও লাগবে। এভাবে মাস্ক হাত দিয়েঠিক করলে তা রোগ আটকানোর বদলে ছড়িয়ে দেবে আরও বেশি করে।

একই কথা প্রযোজ্য গ্লাভসের ক্ষেত্রেও। গ্লাভসের ওপরেও লেগে থাকতে পারেকরোনা ভাইরাস। অনেকেই দেখা যাচ্ছে, গ্লাভস পরেঘুরছেন, অথচ সেই হাত দিয়েই কপালে, গালে হাত দিচ্ছেন। যার ফলে রোগ ছড়াতে পারেই।  দায়িত্বজ্ঞানহীন মাস্ক ব্যবহার করলেরোগ ছড়াবে, কমবে না।

সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণ লোকজনের জন্য মাস্ক ব্যবহার করার খুব বেশি প্রয়োজন নেই। আপনার হাঁচিকাশি হলেঅন্যদের সংক্রমিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য আপনাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যদি কোনো লক্ষণ না থাকে, তাহলে মাস্কপরার দরকার নেই। ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি এড়াতে সেগুলো যথাযথভাবে ফেলে দিন।

শুধু মাস্ক ব্যবহার সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে অবশ্যই ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। হাঁচিকাশি দেওয়ার সময় নাকমুখ ঢাকতে হবে। ঠান্ডাজ্বর রয়েছে এমন ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।

মাস্ক ব্যবহারের কি আদৌ প্রয়োজন আছে? মাস্ক পরা নিয়ে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন  এবং সিডিসি আমাদের যা বলে তাহলো

১। আপনি যদি সুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি তখনই মাস্ক পরবেন যখন আপনি সম্ভাব্য অথবা নিশ্চিত করোনা ভাইরাসেআক্রান্ত কোন ব্যাক্তির আশেপাশে যাবেন।

২। অথবা আপনার যদি হাঁচি কাশি হয়ে থাকে। অথবা আপনি করোনায় আক্রান্ত বলে নিজেকে সন্দেহ করছেন অথবা আপনিনিঃশ্চিতভাবে জানেন আপনি করোনায় আক্রান্ত।

কারণ আপনি যদি আক্রান্ত হয়ে থাকেন আপনার হাঁচি কাশির মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তুআপনি যদি মাস্ক পরে থাকেন তখন মাস্কের কারনে আপনার হাঁচি কাশির মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া ভাইরাসগুলো আশে পাশেছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

৩। মাস্ক ব্যবহার তখনই কার্যকরী যখন আপনি মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত অ্য়ালকোহল আছে এমন লিকুইড অথবাসাবান পানি দিয়ে নিয়মিত অথবা যথাসময়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন।

৪। যদি আপনি মাস্ক ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই মাস্ক কিভাবে পরতে হয় এবং ব্যবহার শেষে খুলতে হয় তাজানতে হবে। এবং ব্যবহৃত মাস্কটি অবশ্যই যথাযথ স্থানে (মুখ বন্ধ ব্যাগে অথবা ঢাকনাসহ ডাস্টবিনে) ফেলতে হবে। তা না হলেআপনার মাস্ক ব্যবহারের উদ্দেশ্যই বৃথা।

৫। ধরুন আপনি মাস্ক পরে কোনো করোনা রুগীর সংস্পর্শে গেলেন, তার কাছ থেকে কোনো ভাইরাসের কনা আপনার মাস্কেরউপর পরলো, বাসায় এসে আপনি ওই মাস্ক কেয়ারলেস ভাবে হাত দিতে ধরে খুলে বিছানার উপর অথবা টেবিলের উপর রেখেদিলেন। এতে করে যা হলো মাস্কে থাকা ভাইরাস আপনার হাতে এবং টেবিলে ছড়িয়ে পড়লো যা পরবর্তীতে আপনাকে অথবাআপনার কোনো প্রিয় মানুষকে ইনফেক্টেড করে ফেললো। এবার আপনিই ভাবুন, আপনার এই মাস্ক পরা কি আদৌ কোনো কাজেএসেছে?

আমরা যদি মাস্ক পরি তাহলে কোন মাস্ক গুলো পরবো? WHO এবং CDC আমাদেরকে দুই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে রেকমেন্ডকরে।

১। সার্জিক্যাল মাস্ক : সার্জিকেল মাস্ক আসলে সম্পুর্ন ভাইরাস প্রতিরোধী না। এটি ডাক্তারদের সাধারন কর্মকান্ডের জন্য তৈরীহয়েছে। ভাইরাস  প্রতিরোধ করার জন্য না।

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের . ডেভিড ক্যারিংটন বিবিসিকে বলেন, ‘সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়

বেশিরভাগ ভাইরাসই বায়ুবাহিত, তিনি বলেন, এবং এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারেনাঠিকঠাক। তাছাড়া যিনি এই মাস্ক ব্যবহার করছেন, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।

সার্জিক্যাল মাস্কের সম্ভাব্য অসুবিধা : সার্জিকাল মাস্ক পরিধাণকারীরড্রপলেটবাইরে ছড়িয়ে পড়া আটকে রাখতে পারে। তবেবাইরের কোনোড্রপলেটভেতরে প্রবেশ করা রুখতে পারে না। অর্থাং এই মাস্কগুলো একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিপরিধাণ করলে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ হবে। তবে কোনো সুস্থ মানুষ এই মাস্ক পরিধান করে ভাইরাসের আক্রমণ থেকেবাঁচতে পারবেনা।

সার্জিক্যাল মাস্ক আপনার মুখে টাইট হয়ে আটকে থাকে না, ফলে দুই পাশে অনেক ফাকা জায়গা থাকে যেখান দিয়ে ভাইরাসেরকনা প্রবেশ করতে পারে। এই কারণে এটা সাধারণ মানুষের জন্য কতটুকু ইফেক্টিভ এটা দিয়ে একটু সংশয়তো থেকেই যায়।

এক্ষেত্রে আপনারা যা করতে পারেন তা হলো, সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পর এর দুই পাশে ভালোভাবে টেপ দিয়ে আটকে দিতেপারেন, যাতে এমন কোনো ফাকা জায়গা না থাকে যেখান দিয়ে অবাধে বাতাস চলাচল করতে পারে।

তাহলে প্রশ্ন হলো কারা সার্জিকেল মাস্ক পরবে। সার্জিক্যাল মাস্ক কখন\কারা ব্যবহার করবে?

এটা মূলত সম্ভাব্য অথবা নিশ্চিত করোনা রুগীরা পরবে। যাতে করে তাদের হাঁচি কাশির সাথে ভাইরাসগুলো যেখানে সেখানেছড়িয়ে না পড়ে। পাশাপাশি এটা একটু লুজ হওয়াতে রোগিদের নিঃশ্বাস নিতেও অনেক সুবিধা হয়।

সাধারণ সুস্থ মানুষ তখনই ব্যবহার করবে যখন তিনি জানেন তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় অথবা রোগির কাছেযাচ্ছেন না। সামান্য বাজার করার জন্য নিচে যাচ্ছেন, আবার হয়তোবা ১০২০ মিনিটে চলে আসবেন। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসেআক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম এমন জায়গায় যাওয়ার সময় বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহারনা করে। কারন এটার দাম এন ৯৫ মাস্কের তুলনায় অনেক কম।

সার্জিক্যাল মাস্কএর দাম : আমাদের দেশে সরকার নির্ধারিত দাম ৩০ টাকা। কিন্তু বাস্তবে তা নয়।  ভালো মানের মাস্ক সঙ্কটেরকারণে খোদ চায়নাতেই ১০০ টাকার কমে কিনতে পাওয়া যায় না। একসাথে ১০০০০ পিস অথবা ১০০০০০ পিস কিনলে এখন৩০ টাকা অথবা এর কমে পাওয়া যায়। আমি চায়না লোকাল মার্কেটগুলো ঘাটাঘাটি করেই বলছি। এর কারন হয়ত সারাপৃথিবীতে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম।

সার্জিক্যাল মাস্ক কতক্ষন ব্যবহার করা যাবে?

ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির রিকমেন্ডশেন অনুযায়ি এই মাস্ক একটানা ঘন্টা ৯৫% প্রোটেক্টিভ থাকে। অর্থাৎ আপনি প্রতি চারঘন্টা পর পর নতুন মাস্ক পরতে হবে অথবা ঘন্টা এর মাথায় খুলে ফেলতে হবে অথবা এর আগে যেমন ঘন্টা পর যদি একবারখুলে ফেলেন তাহলে আর পরা যাবে না।

এই মাস্ক মুখ থেকে খুলে ফেলার পর অবশ্যই অবশ্যই দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যাবে না। এবং খুলে ফেলার সময় এটা অবশ্যইবিশেষ পদ্ধতি অনুসরন করে খুলবেন। না হলে মাস্ক ব্যবহারের ফলাফল জিরো।

২। N95 মাস্ক : ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিক্যুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, হাসপাতালের মধ্যেএকটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় দেখা গেছে রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে পারে।

রেসপিরেটর হচ্ছে এমন একধরণের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র যার মধ্যে থাকে একটি বিশেষায়িত ফিল্টার। মূলত বায়ুবাহিত ক্ষতিকরক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পদার্থের হাত থেকে শ্বাসনালীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য রেসপিরেটর তৈরি করা হয়।

N95 মাস্ক হলো একটা রেসপিরেটর। N95 মাস্ক মূলত ভাইরাস প্রতিরোধে অধিক কার্যকরী। কারন এটা এমন ভাবে বানানো হয়, এটা আপনার মুখের সাথে শক্ত ভাবে চেপে আটকে থাকে। চার পাশে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকায় ভাইরাসের কনাগুলোপ্রবেশ করতে পারে না।

N95 মাস্কের সম্ভাব্য অসুবিধা : অত্যাধুনিক এই মাস্ক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানাও প্রয়োজন। যাতে মাস্কটি মুখমণ্ডলের ওপরবসে বায়ুরোধক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তারপরওলিকবা ছিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোইবলছে কোনোমাস্কবারেস্পিরেটর শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারেনা।

এই মাস্ক অনেক শক্তভাবে আপনার মুখে চেপে থাকে বিধায় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে আপনার সমস্যা হতে পারে, বিশেষতযাদের আগে থেকেই ফুসফুসের কোনো জটিলতা জনিত রোগ রয়েছে। এটা কখনো কখনো আপনার জন্য মারাত্মক সমস্যা বয়েনিয়ে আসতে পারে।

তাছাড়া এই মাস্ক লাগানোর এবং ব্যবহার শেষে খোলার একটি বিশেষ পদ্ধতি আছে যা আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, নতুবাসংক্রমন থেকে বাঁচতে গিয়ে আপনি উলটো সংক্রমিত হয়ে পরবেন।

N95 মাস্ক কখন\কারা ব্যবহার করবে?

এই মাস্ক মূলত মেডিকেল পারসন এবং এক্সপার্টরা ব্যবহার করে, যেমন ডাক্তার, নার্স, অথবা ল্যাবের লোকজন। সাধারণ মানুষতখনই ব্যবহার করবে, যখন সে নিশ্চিতভাবে জানে সে করোনা আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি যাচ্ছে, অথবা হাসপাতাল অথবাসম্ভাব্য করোনা রোগী আছে এমন জায়গায় যাচ্ছে। তবে পরা এবং খোলার সঠিক ট্রেনিং ছাড়া এই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত না।

N95 মাস্ক কতক্ষণ ব্যবহার করা যাবে?

ম্যানুফাকচারিং কোম্পানির রিকমেন্ডশেন অনুযায়ি এই মাস্ক একটানা ৪৮ ঘন্টা ৯৫% প্রোটেক্টিভ থাকে। এরপর আরো ২৪ ঘন্টা৯৪% প্রোটেক্টিভ থাকে। অর্থাৎ আপনি একটানা ৭২ ঘন্টার বেশি এই মাস্ক ব্যবহার করতে পারবেন না। অথবা ৭২ ঘন্টার আগেযদি একবার কোনো কারনে খুলে ফেলেন তাহলে সেটা আর পুনরায় ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে বাস্তবে আপনি এই মাস্কআপনি টাকা ঘন্টার বেশি পরে থাকতে পারবেন কিনা, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

N95 মাস্কের দাম : এই মাস্কের দাম কোয়ালিটি ভেদে ১৫০৫০০ টাকা বাজারে (নরমাল গুলো)

মাস্ক পড়া এবং খোলার পদ্বতি : আপনাদেরকে অবশ্যই মাস্ক সঠিক পদ্ধতিতে পরতে এবং ব্যবহার শেষে খুলতে হবে।

সার্জিকেল মাস্ক পরা এবং খোলার সঠিক নিয়ম : এই ভিডিও লিংকে আপনি সঠিক ভাবে সার্জিকেল মাস্ক পরা এবং খোলারনিয়ম জানতে পাবেন। লিংক– https://youtu.be/OABvzu9e-hw

এন৯৫ মাস্ক খোলা এবং পরার নিয়ম : এই ভিডিও লিংকে আপনি সঠিক ভাবে এন৯৫ মাস্ক পরা এবং খোলার নিয়ম জানতেপাবেন। লিংক– https://youtu.be/zoxpvDVo_NI

কটি মাস্ক কি বার বার ধুয়ে অথবা জীবানু নাশক স্প্রে করে ব্যবহার করা যাবে?

না, কখনোই না। ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি, হু, সিডিসি কেও এটা সমর্থন করে না। আর তাছাড়া যদি সত্যি এগুলোজীবানুনাশক স্প্রে করে জীবানুমুক্ত করে বার বার ব্যাবহার করা যেত, তাহলে WHO থেকেই নির্দেশনা দিত তেমন। তারাআপনাকে নিশ্চয় বলতো না যে একবার ব্যবহারের পর এটা ফেলে দিবেন।

N95 এবং সার্জিকেল মাস্কে এক ধরনের ফিল্টার থাকে, এই ফিল্টার গুলো আপনি পানিতে ভিজিয়ে অথবা স্প্রে করে পরিষ্কারকরতে গেলে এই ফিল্টারগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন এটা ব্যবহার করা আর না করা সমান কথা। আর তাছাড়া ম্যানুফাকচারিংকোম্পানির দেয়া এক্সপায়ার্ড টাইমের পর এটা এমনিতেই আর আগের মত কার্যকর থাকে না। এই সত্যটা আপনার পছন্দ নাহলেও মেনে নিতে হবে, দুঃখিত।

বাজারে প্রচলিত যে মাস্কগুলো আছে এগুলো কতটুকু কার্যকর?

বাজারে প্রচলিত লোকাল যে মাস্কগুলো আছে এগুলো মূলত ধুলাবালি প্রতিরোধক মাস্ক, এগুলো ভাইরাস প্রতিরোধী মাস্ক না।এগুলো দিয়ে আপনি ভাইরাস সংক্রমন আটকে রাখতে পারবেন না, উলটো মাস্কে করে ভাইরাস বয়ে নিয়ে এসে পরিবারেরলোকজনের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

সবচেয়ে বড় কথা এগুলাতে ভাইরাস প্রতিরোধী ফিল্টার না থাকায়, এগুলার ভাইরাস আটকে রাখার ক্ষমতা প্রায় জিরো। তাইএগুলো পরা আর না পরা সমান কথা। তাই বাজারের প্রচলিত ২০ টাকা, ৫০ টাকা দামের যে মাস্কগুলো রয়েছে, তা কিনবেনকিনা আবারো ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।

আমরা বাসায় কাপড় অথবা টিস্যু পেপার দিয়ে যে মাস্ক গুলো বানিয়ে ব্যবহার করি সেগুলো কতটা কার্যকর?

এগুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে একদমই কার্যকর না, ধুলাবালি থেকে এগুলো ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন, ভাইরাসেরপ্রতিরোধ করার কোনো ক্ষমতাই নেই এগুলোতে।

শুধু শুধু কষ্ট করে এগুলো ব্যবহার করে মনে সান্তনা পেতে পারেন, এর বেশি কিছু না। আবারো বলছি হয় সার্জিক্যাল মাস্ক অথবাএন৯৫ মাস্ক উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী।

তাহলে আমরা কি মাস্ক পরবো নাকি পরবো না?

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডএর . জেক ডানিং বলেন, ‘যদিও একটি ধারণা আছে যে মাস্ক ব্যাবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবেহাসপাতালের পরিবেশের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপকভিত্তিক উপকার পাওয়ার খুব কম নজিরই আছে

তিনি আরো বলেন, মাস্ক যদি পরতেই হয় এবং এটা থেকে উপকার পেতে হয়, তবে সেটা পরতে হবে সঠিকভাবে। বদলাতে হবেনিয়মিত। এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও নিরাপত্তা নির্দেশিকা মানতে হবে।

. ডানিং বলেন, সত্যিই যদি উদ্বিগ্ন হয় মানুষ, তবে তারা ব্যক্তিগত হাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিলেই ভালোকরবে।

উপরের আলোচনা সারাংশ করে আমি আবার বলছি, বারবার বলছি, আপনি যদি রোগি হয়ে থাকেন অথবা করোনা ভাইরাসআপনার কাছে সুপ্ত অবস্থায় আছে এমন কোনো আশঙ্কা আপনার কাছে থেকে থাকে অথবা হাঁচি কাশি থেকে থাকে সেটা এবারসাধারণ Flu অথবা করোনা ভাইরাস যে কারনেই হোক, আপনি অবশ্যই অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। কারণ আপনারআশেপাশের লোকজন যাতে আপনার কাছ থেকে সংক্রমিত না হয় এটা নিশ্চিত করা আপনার দ্বায়িত্ব এবং কর্তব্য। আরআপনি যদি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন তাহলে আপনার জন্য মাস্ক পরা কতটা যৌক্তিক সেটা আপনি নিচের ফ্যাক্টরগুলোবিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

যে কোনো মাস্ক আপনি একবারের বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না। এবং সার্জিকাল মাস্ক আপনি সর্বোচ্চ ঘন্টা, এন৯৫ মাস্কসর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা এর বেশি ব্যবহার করা উচিত না। এতে কার্যকারিতা কমে যায়।

আপনি কি পারবেন একবারের বেশি মাস্ক ব্যবহার না করে ফেলে দিতে?

একটি সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ৩০ টাকা, আর এন৯৫ মাস্কের দাম ২৫০ টাকা এর উপরে। তাহলে আপনি চিন্তা করে দেখুন ২৫০টাকা দিয়ে আপনি একটি মাস্ক ঘন্টা ব্যবহার করে ফেলে দিলে এক মাসে কত টাকা আসবে। আবার এমনও না আপনি শুধুমাস্ক ব্যবহার করলেন, তাই আপনি নিরাপদ।

আপনি কি এই ব্যয় নির্বাহ করতে পারবেন?

আমাদের তো ধারনা অনেকে এটাকে ফেলে না দিয়ে পুনঃব্যবহার করতেই থাকবে। যার ফলে লাভ তো হবেই না, উল্টো মাস্কেবহন করা ভাইরাস আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য হুমকি হয়ে যাবে।

আপনি কি পারবেন সঠিক ভাবে মাস্ক পরতে এবং ব্যবহার শেষে খুলতে? এবং খোলার পরে + নিয়মিত হাত সাবান অথবাএলকোহল জাতীয় লিকুইড দিয়ে পরিস্কার পরিচ্চন্ন রাখতে?

উপরের প্রশ্নগুলো বিবেচনা সাপেক্ষে আপনি নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করবেন কি করবেন না সিদ্ধান্ত নিন।

আমাদের উদ্দেশ্য আপনাকে মাস্ক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা না, বরং কখন , কেন, কিভাবে মাস্ক ব্যবহার করবো তার বেষ্টপ্র্যাকটিস সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া। আপনি বিষয়টা কিভাবে নিবেন অথবা ব্যবহার করবেন এটা সম্পুর্ন আপনার বিষয়।প্রার্থনা করি সবাই যেন সুস্থ এবং ভালো থাকে।

মাস্ক কোথায় কিনতে পাবো : আপনার আশেপাশের ভালো ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শএন ৯৫ মাস্ক কেনার সময় অবশ্যই শিওর হবেন যে এটা আসল নাকি নকল।

ঢাকাতে মিটফোর্ড অথবা পল্টনের আশে পাশের মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এর মার্কেটগুলো খুঁজে দেখতে পারেন।

তথ্যসুত্র:

১।https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/when-and-how-to-use-masks

২।https://www.livescience.com/face-mask-new-coronavirus.html

৩।https://www.consumerreports.org/coronavirus/do-you-need-a-mask-to-prevent-coronavirus/

৪। প্রথম আলো।

৫। IEDCR

৬। বিবিসি বাংলা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *