কাউসার মাহমুদ— এর দুটি কবিতা
প্রত্যাবর্তন
একদিন নবতরঙ্গ ঘিরে মিশ্রিত সকল যোগাযোগ নিঃসৃত হলে; অরূপেরে রূপ দিয়ে সেই যে পালালাম আমি!
নীরব নারীর থেকে একফোঁটা রোদ চেয়ে চোখের নীচে- বিশুদ্ধ নগরীর পথে হেঁটে হেঁটে এ কোথায় এসে দাঁড়ালাম!
স্নেহ নেই, মায়া নেই, প্রেম নেই বিশুষ্ক মরুর এই নির্জন কোনখানে।
যারাই ছিলো বা আছে তারাও কি কোনরূপ বলা ছাড়া আমারে ভুলে গেছে!
এ কেমন নিগূঢ়তম গীতি; ব্যাপৃত মৃত পাখিদের ঢলে
বিযুত অন্ধকারমাখা খোলা আকাশের তলে আমারে ডাকে।
অজস্র রীতিমত ভেঙে নিঃসঙ্গ কবি’র মতো অশান্ত জীবনের ক্রোড়ে-
কাল রাতে শেষবার গিয়াছিলাম, গিয়াছিলাম আমার’ই প্রিয় সেই গণিকার গোরে।
শুধু সে-ই ভোলেনি আমাকে।
কতখানি নীরবতা হলে নীরবতা ঝড়ে পড়ে মানুষের পাশে।
শুনশান মরে গিয়ে শুধু সেই অ-বিস্তৃত নীরবতাই থাকে।
চাঁদের উরুর মতো উজ্জ্বল হাসির তলে-
কে কোথায় কোন ব্যাথা লুকিয়ে রাখে পৃথিবীর কে জানে!
মনে হয় শুধু জানে মাটি, কান্না ভুলে যাওয়া স্তব্ধ করোটি।
আর জানে কিছুকিছু খাতা, কোনদিন ভোরে মাড়িয়ে যাওয়া গাছের পাতা।
তাহলে এসবের পরে কে কবে ভালোবেসেছিল কাকে!
মানুষের মৃতদেহ মানুষেই টানে পৃথিবীতে।
বৃহস্পতিবার
একটা মসৃণ দীর্ঘশ্বাসে ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা বৃহস্পতিবার। কোথাও দূরে, কারো চোখের পাতাজুড়ে বিলাপিনী আহবান! তার পাশে, সন্ধ্যা ঘনীভূত মাগরেবের আজানে, অনতিদূর কোথাও মায়ের আবছা ছায়াটি কাঁপে। যেন অপেক্ষায় অপেক্ষায় গায়ের শাড়িটি সন্তানহারা হয়ে যাচ্ছে। অথচ; কোনদিন ফেরা হবে না জেনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তিতির।
এমন বিষন্ন বৃহস্পতিবারে দিনমান শুধু বেদনাময় কোমল রাত্রিটির অপেক্ষা। যেখানে- অশ্রুত পরিখার মাঝে নিঃশব্দে নীচের ঠোঁটটি কামড়ে ধরে অনতিক্রম্য কান্না রোধ। আর বিস্তৃত একাকীত্বের মাঝে, বিমর্ষ সময়ের মুখে বাবার ঘরে ফেরাকালীন জুতোর শব্দ আহরণ।