কুয়েতের আমির মারা গেছেন

কুয়েতের আমির মারা গেছেন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল–আহমাদ আল–জাবের আল–সাবাহ মারা গেছেন। শনিবার কুয়েতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কুনার এক প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে কুয়েতের আমিরের মৃত্যুর ঘোষণায় আমিরি আদালতের মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-সাবাহ বলেন, ‘‘আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা—কুয়েতের জনগণ, আরব ও ইসলামিক বিভিন্ন দেশ এবং বিশ্বের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণ— আমির শেখ নাওয়াফ আল–আহমাদ আল–জাবের আল–সাবাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। যিনি আজ সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে গেছেন।’’

তবে বিবৃতিতে কুয়েতের আমিরের মৃত্যুর কোনও কারণ জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, গত নভেম্বরে শেখ নাওয়াফ আল-আহমাদ আল-জাবেরকে জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই সময় দেশটির সরকারি একজন কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আমিরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শেখ নাওয়াফ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কুয়েতের আমিরের শপথগ্রহণ করেন। ৯১ বছর বয়সী সৎ ভাই শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার পর কুয়েতের নতুন আমিরের দায়িত্ব নেন নাওয়াফ।

ক্ষমতায় আসার কয়েক দশক আগে থেকেই কুয়েতের সরকারি বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের অফিসে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে কুয়েতের আমিরের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। ১৯৯০ সালে তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে ইরাকি সৈন্যদের হামলার সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

এছাড়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন নাওয়াফ। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্রগোষ্ঠীর কাছ থেকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তিনি। কুয়েতের আল-সাবাহ পরিবারের সদস্যদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে শেখ নাওয়াফের। সদা বিনয়ী আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য তার বেশ সুনামও রয়েছে।

দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয় শেখ নাওয়াফের মৃত্যুতে তার সৎ ভাই শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-জাবের (৮৩) এখন আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

গত নভেম্বরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমির শেখ নাওয়াফ আল–আহমদ আল–জাবের আল–সাবাহকে জরুরিভাবে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে ওই সময় তার শারীরিক অসুস্থতার কোনও কারণ প্রকাশ করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ। এছাড়া তিনি কী ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন সেই বিষয়েও কোনও তথ্য জানানো হয়নি।

শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত না জানানো হলেও অতীতে কয়েকবার তার ডেপুটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন শেখ নাওয়াফ। এর আগে, শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।

শেখ নাওয়াফের মৃত্যুর খবরে শোক জানিয়ে কুয়েত ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক বাদের আল সাইফ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন, ‘‘আজ কুয়েতের জন্য অত্যন্ত দুঃখের দিন। শেখ সাহেব কেবল দেশের জন্য ভালো কাজ করেছেন। তার কর্মকাণ্ড স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার শাসনামল উল্লেখযোগ্য। যদিও কুয়েতের ইতিহাসে তৃতীয় সংক্ষিপ্ততম শাসনামল ছিল এটা।’’

১৯৩৭ সালে কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ নাওয়াফ। ১৯২১ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কুয়েতের আমিরের দায়িত্ব পালন করা শেখ আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহর পঞ্চম পূত্র ছিলেন শেখ নাওয়াফ। কুয়েতে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করেছিলেন তিনি। তবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেননি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে কুয়েতের হাওয়ালি প্রদেশের গভর্নর হিসাবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন তিনি ।

সূত্র: আলজাজিরা, এপি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *