কেবল জিহাদী নয়, সালাতী-সিয়ামী-হজ্জী চেতনাও লালন করি
আবদুস সালাম :: এক. আমার এক লতায়পাতায় ভাগ্নে কথায় কথায় সেদিন বলল, আমি বুকে ‘জিহাদী চেতনা’ লালন করি। আমি রসিকতা করে জিজ্ঞেস করলাম, শুধুই ‘জিহাদী চেতনা’? ‘সালাতী চেতনা’ ‘সিয়ামী চেতনা’ ‘হজ্জী চেতনা’ নেই তোমার?
ভাগ্নে বলে মামা,’মানুষের মনে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর চিন্তা এখন আলাদাই ‘।
হ্যাঁ, ঠিক এই জায়গাটাতেই আমার আপত্তি৷ কেবল জিহাদেরই কেন আলাদা চেতনা থাকতে হবে? ধর্মের আর দশটা বিধানের কি কোন চেতনা নেই? অন্যান্য বিধানের চেয়ে এর আলাদা কী বৈশিষ্ট্য আছে? জিহাদ তো ইসলামের পাঁচ ভিত্তির একটিও নয়, জিহাদ তো এমন বিধানও নয় যা সর্বাবস্থায় ফরজ , অন্যান্য ইবাদাতের চেয়ে এর ফরয হওয়ার শর্তাবলীও অনেক বেশী। কাজে কাজেই এর প্রায়োগিক ক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে অন্যসব ইবাদাতের পরে প্রাসঙ্গিকতা পাবে।
কিন্তু চেতনার জোরে পাহাড় ঠেলে জিহাদকেই কেন সবার আগে পাঠাতে হবে? এই প্রবণতা ভালো কোন ফলাফল বয়ে আনে না। এই ছুতোয় ভারসাম্য বা মধ্যমপন্থা অবস্থান লঙ্ঘিত হয়, যা কিনা সুস্পষ্ট ‘গুলু’। সোজা বাংলায় বাড়াবাড়ি বা উগ্রতা। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য যে, পবিত্র বিধান এই জিহাদ এখন উগ্রবাদের পাতা সবচেয়ে বড় ফাঁদ। যেই ফাঁদে পা দিয়ে আমার ভাগ্নের মত উঠতি বয়সি অসংখ্য তরুণ উচ্ছন্নে যাচ্ছে।
সেই উগ্রবাদের ফাঁদগুলো কী কী? কীভাবেই বা এড়িয়ে যেতে হবে? কী করে মধ্যমপন্থী অবস্থানে অটল থাকা যাবে? হ্যাঁ সেই উত্তরগুলোই বইটির ছত্রে ছত্রে বলতে চেয়েছেন ড. খালিদ আম্বারি। নিজের পুত্রকে সম্বোধন করে একেকটি কথা বলেছেন যা কিনা উঠতি বয়সের প্রতিটি তরুণের জন্যই মূল্যবান পাথেয়।
দুই. অবসর সময়ে আমি ইন্টারনেটে পছন্দের বিষয়ের পিডিএফ খুঁজি। সম্ভাব্য কীওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে সামনে যা আসে তাই চট করে ডাউনলোড করে ফেলি। পরে সময় করে বাছাই করে সেগুলো পড়ি নইলে সেভাবেই দিনের পর দিন পড়ে থাকে গুগল ড্রাইভে।
বেশকিছু দিন আগে ড.খালিদ আম্বারির এই বইটি আমি পেয়েছিলাম। করোনা ভাইরাসের গৃহবন্দী সময়ে বইটি পড়ার সুযোগ হয়। ভাগ্নের ‘জিহাদী চেতনা’র কথা শুনে সেদিন মনে হলো এটি অনুবাদ করে ওর হাতে দিতে পারলে দারুণ হবে। কয়েক দিনের মুসালসাল প্রচেষ্টায় আলহামদু লিল্লাহ আজ বিকেলে বইটির অনুবাদ শেষ হলো। বই ছেপে এলে প্রথম কপিটি আমি আমার সেই ভাগ্নের হাতে দেওয়ার ইচ্ছে করেছি। কারণ শুধু কথায় চিড়ে ভিজে না। তাদের চতুর্দিকে যেই পরিমাণে উগ্রবাদের ফাঁদ ছড়ানো রয়েছে এর সিকিভাগও মধ্যমপন্থার সবক তাদেরকে দেওয়া হয় না।
আমার ধারণা অবশ্যই তাদের একদিন না একদিন ভুল ভাঙ্গবে। তবে তা অবশ্যই উগ্রবাদের ফাঁদে পুরাপুরিভাবে জড়িয়ে পড়ার আগেই আমাদের কিছু করা উচিত। দেরী হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ একবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রায় অসম্ভব। বুখারীতে ইবনে ওমর রা. ঠিক এমনই একটি ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন চৌদ্দশ বছর আগেই।
লেখক : শিক্ষক