৫ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ১৫ই জিলকদ, ১৪৪৪ হিজরি
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : উনিশ শতকের শেষের দিকে বাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছিল পরিবারটি। সেখানেই তারা একটি সমাধি খুঁজে পান। সমাহিত করা মরদেহের বুকের ওপরে ছিল একটি কোরআন। ক্ষুদ্র আকৃতির সেই কোরআনটি আন্দোলিত করে ক্যাথলিক পরিবারটিকে। এর প্রভাবে রীতিমত ধর্মান্তরিত হয়ে পরিবারসমেত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তারা। এরপর পরিবারটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে সেই কোরআন সংরক্ষণ করে আসছে। এমনটিই জানিয়েছেন ওই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য প্রুশি তিরানায়।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।
সমাধি থেকে উদ্ধার ক্ষুদ্র কোরআনটি
১৯৩০ সালের দিকের কথা। কসোভোর জাকোভিকা অঞ্চলে থাকতেন প্রুশি তিরানায়ের দাদা-দাদী। বর্তমানে তারা আলবেনিয়াতে থাকেন। ৪৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানিয়েছেন কোরআনটি পাওয়ার ইতিহাস।
ওই ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার দাদা-দাদী কসোভোর জাকোভিকা অঞ্চলে থাকতেন। সেখানেই ১৯৩০ সালে একটি বাড়ি করার জন্য জমি খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন তারা। ওই সময় সেখানে একটি সমাধি পাওয়া যায়। সমাহিত ব্যক্তির বুকের ওপর ওই কোরআন সংরক্ষণ করা ছিল, যা পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।”
কোরআনটি খুঁজে পাওয়ার ঘটনাকে “ঐশ্বরিক” হিসেবে বিশ্বাস করেন তারা। তিনি বলেন, “আমার দাদা-দাদীর এক বন্ধু ওই সময় আলবেনিয়ার রাজা জোগের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি আরবি জানতেন বলে, তাকেই প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের জন্য ডাকা হতো।”
যুদ্ধকালে আবার সমাধিস্থ কোরআন, অবশেষে রক্ষা
কসোভোতে এনভার হোক্সার কমিউনিস্ট শাসনামলে সব ধর্ম নিষিদ্ধ করা হয়। ওইসময় ধর্ম পালনকারীদের কারাগারে পাঠায় সেই সরকার। এমনকি ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ধর্মীয় বই জব্দ করা হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র আকৃতির হওয়ায় ওই সময় এ কোরআনটিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল।
প্রুশি বলেন, “কেউ একজন পুলিশকে জানিয়ে দেয় আমাদের বাড়িতে একটি কোরআন আছে। তবে সেটি এতো ছোট ছিল যে সহজেই লুকিয়ে ফেলা যায়। ফলে পুলিশ ব্যাপক তল্লাশি করেও সেটি খুঁজে পায়নি।”
“ওই ঘটনার পর আমার বাবা কয়লা ভর্তি লরিতে লুকিয়ে সীমান্তের ওপারে পালিয়ে যান ও প্রতিবেশী কসোভোর বন্ধুদের কাছে সেটি রাখতে দেন।”
“১৯৯৯ সালে কসোভোর যুদ্ধের পরে তিনি আবার সেটি পুনরুদ্ধার করেন। যুদ্ধের সময় কোরআনটি সুরক্ষিত রাখতে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল।” ২০১২ সালে প্রুশির বাবা মারা গেলে তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে এটি পান।
কোরআনটির আকার
ডাকটিকিট আকারের কোরআনটিকে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বলে মনে করেন অনেকেই। এটি একটি রুপার বাক্সে রাখা ছিল। দীর্ঘ সময় সংরক্ষিত থাকা ওই রুপার বাক্সটির রঙ বদলে কালো হয়ে গেছে।
মাত্র দুই সেন্টিমিটার (০.৭ ইঞ্চি) চওড়া ও এক সেন্টিমিটার পুরু কোরআনটি হাতের তালুতে রাখা যায়। এটি শুধুমাত্র একটি ছোট আতশ কাঁচের মাধ্যমে পড়া যায়।
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ না থাকলেও তিরানার বেডার ইউনিভার্সিটির কোরানিক স্টাডিজের গবেষক এলটন কারাজের মতে, “৯০০ পৃষ্ঠার অনুলিপিটি উনিশ শতকের হতে পারে।”
এছাড়া প্রুশি জানান, এই কোরআনটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র আকৃতি কোরআনের একটি। উনিশ শতকের শেষ দিকে খুব কম আকারে এটি মুদ্রিত হয়েছিল।
কোরআনটিকে আশীর্বাদমূলক মনে করে পরিবারটি
এই কোরআন পাওয়ার ঘটনাকে অলৌকিক ও আশীর্বাদমূলক মনে করেন প্রুশি। এটি ধরার আগে অজু করে নেন। ধরার পরে কপালে ঠেকিয়ে চুম্বন করে নেন।
প্রুশি বলেন, “আমরা এটিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পরম সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণ করেছি।”
তার স্ত্রী ব্লেরিনা এএফপিকে বলেন, “আমি যতবার এটি স্পর্শ করি, ততবার আন্দোলিত হই। যখন কিছু ভুল হয় বা যখন আমাদের মেয়ে অসুস্থ হয়, আমরা আশ্বস্ত হই। আমরা জানি, এই কোরআন আমাদের রক্ষা করবে, এটি সত্যিকারের একটি তাবিজ।”
কোরআনটি সংরক্ষণে জাদুঘর থেকে প্রস্তাব পাওয়া ও এটি কেনার প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানায় পরিবারটি।
তবে প্রুশি বলেন, “আমি কখনোই এটি বিক্রি করার কথা ভাবি না। এই কোরআন আমাদের পরিবারের ভেতরের সম্পদ। এটি সবসময় আমাদের সঙ্গে থাকবে।”