খোদার পরে শ্রেষ্ঠ যিনি

খোদার পরে শ্রেষ্ঠ যিনি

ধারাবাহিক রচনা ● মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

হাকাম এত আন্তরিকতার সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যে, সারা জীবন নবীজীর সঙ্গে কাটিয়ে দেন। শেষে বীরে মাউনার ঘটনায় তিনি শহীদ হন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন তাঁর উপর খুবই সন্তুষ্ট। [ইবন সাদ ৪:১৩৭]

ফিরআউনের চেয়ে নিষ্ঠুর কাফির সর্দার আবু জাহেলকেও তিনি বার বার ইসলামের আহ্বান জানিয়েছেন, দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে তার ও হযরত উমার রা.-এর
হিদায়াতের বিশেষভাবে দুআ করেছেন। কিন্তু আবু জাহেলের ব্যাপারে তার দুআ কবূল হয়নি। বদ আমলের জন্য তার হৃদয়ে মোহর পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বার বার দাওয়াত দিয়েছেন। হযরত মুগীরা ইবন শু’বা বলেন, আমি আবু জাহেলের সঙ্গে মক্কার এক গলি দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তিনি আবু জাহেলকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আবুল হাশম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আসুন। আমি আপনাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাচ্ছি।

আবু জাহাল বললো, হে মুহাম্মদ, তুমি কি আমাদের দেব দেবিদের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকবে? তুমি কি চাচ্ছো, আমি সাক্ষী দেবো যে, তুমি আমার কাছে তোমার কথা পৌঁছে দিয়েছো? এই যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়, তবে শোন, সাক্ষী দিচ্ছি তুমি তোমার কথা পৌঁছে দিয়েছো। ওয়াল্লাহ! যদি জানতাম তুমি যা বলছো তা সত্য তবে তো তোমার অনুসরণই করতাম।

এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। আবু জাহাল আমার দিকে ফিরে বললো, ওয়াল্লাহ! আমি জানি ইনি যা বলেন সবই সত্য। কিন্তু তা গ্রহণ করতে একটা বিষয় আমাকে বাঁধা দেয়। তা হলো, বানু কুসাই দাবি করলো, আমরা বাইতুল্লাহ শরীফের পর্যবেক্ষণকারী, পাহারাদার। আমরা বললাম, হ্যাঁ, এতে আমরাও আছি। এরা বললো, আমরা হাজীদের পিপাসা নিবারণ করি। আমরা বললাম, আমাদেরও এই মর্যাদা আছে। তারা বললো, পরামর্শসভা দারুন নাদওয়ায় আছি আমরা। আমরা বললাম তাতেও আছি আমরা। এরা বললো, জাতীয় রণপতাকা আমাদের হাতে। আমরা বললাম, এই মর্যাদায় আমরাও আছি শরীক। এরা লোকদের আহার করায়, আমরাও তা করি। এমনকি কাফেলা ওয়ালাদের মুখে মুখে ছাড়িয়েছে এই মর্যাদার কাহিনী। কিন্তু হায় এরা বললো, আমাদের মাঝে আছেন আল্লাহর নবী, আল্লাহর কসম এটাতো আমরা আবিষ্কার করতে পারছি না। [আল বিদায়া ৩ ৬৪]

হুজাইমা গোত্রের একব্যক্তি বর্ণনা করেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে হাজির ছিলাম, এ সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, আপনি কি আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ? তিনি বলেন, হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি বললো, কীসের আহ্বান জানান আপনি?

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহর দিকে ডাকি। তিনি এক। তিনি এমন যে যদি তোমার কোনো কষ্ট থাকে আর তাঁকে ডাক তিনি তোমার কষ্ট দূর করে দেবেন। তুমি যদি দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হও, আর তাকে ডাক তিনি তোমার কথা রক্ষা করবেন। কোনো বিয়াবান মরুতে সোওয়ারী হারিয়ে ফেল তাকে ডাক তিনি তোমার কাছে তা ফিরিয়ে দেবেন।

এই শোনে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করলো। বললেন, আমাকে বিশেষ কিছু নসীহত করুন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কাউকে কখনও গালি দিবে না।
এরপর তিনি আমৃত্যু এমন কি উঠ বকরীকেও গালি দেননি কোনোও দিন। [হায়ছামী ৮ : ৭২]


আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম, বললাম, আঙুলের গিঁটগুলোর চেয়েও বেশিবার কসম খেয়েছি- আপনার কাছে আসবো না। আপনার দ্বীন গ্রহণ করবো না। কিন্তু আসতেই হলো আপনার কাছে। আল্লাহ যা জানিয়েছেন তা ছাড়া তো বুঝি না কিছুই। মহান আল্লাহ পাকের পবিত্র চেহারার কসম খেয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, আমাদের প্রভু কি দিয়ে আপনাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন?


মুআবিয়া ইবন হাফসা কুশাইরী রা. বলেন, আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম, বললাম, আঙুলের গিঁটগুলোর চেয়েও বেশিবার কসম খেয়েছি- আপনার কাছে আসবো না। আপনার দ্বীন গ্রহণ করবো না। কিন্তু আসতেই হলো আপনার কাছে। আল্লাহ যা জানিয়েছেন তা ছাড়া তো বুঝি না কিছুই। মহান আল্লাহ পাকের পবিত্র চেহারার কসম খেয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করছি, আমাদের প্রভু কি দিয়ে আপনাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন?

তিনি বললেন, ইসলাম ধর্ম দিয়ে। আমি বললাম, ইসলাম কী? তিনি বললেন, একথা বলো যে, আমি আমাকে আল্লাহর জন্য সমর্পিত করলাম। আর সবকিছু থেকে বিযুক্ত হয়ে গেলাম। সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে, এক মুসলিমের জান-মাল-আব্রু অন্য মুসলিমের জন্য হারাম। দুই জন পরস্পরের সাহায্যকারী। ইসলাম আনায়নের পর কেউ যদি মুশরিক হয়ে যায় তবে শিরকি থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার কিছুই কবুল করা হবে না।

কী হলো তোমাদের কোমর ধরে আমি তোমাদের জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে রাখছি। শোন, আমার প্রভুই হলেন মূল আহ্বায়ক। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আমার বান্দাদেরকে পৌঁছিয়েছিল আমার কথা? আমি বলবো, হে প্রভু, আমি পৌঁছিয়েছি। শোন, তোমাদের যারা হাজির আছো সে যেনো যারা হাজির নেই তাদের কাছে পৌঁছে দেয় পয়গাম। শোন, পরবর্তী জীবনে মুখে লাগাম বেঁধে ডাকা হবে তোমাদের। প্রথম তোমাদের বিষয়ে খবর দেবে তোমাদের ঊরু দেশ এবং হাতের তালু। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, এই আমাদের দ্বীন ও আমাদের ধর্ম। তিনি বললেন, হ্যাঁ, এই তোমার দ্বীন ও তোমার ধর্ম। যেখানেই তুমি ভালো কাজ করবে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে তা। [ইস্তিআব ১ : ৩২৩]
মক্কার অন্যতম সর্দার আবু সুফিয়ান রা.কেও তিনি বারবার ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। হযরত মুআবিয়া রা. বলেন, আমার পিতা আবু সুফিয়ান একবার আমার মা হিন্দাকে নিয়ে গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। আমি তখন বালকমাত্র। একটা গাধায় চরে আমি ছিলাম তাদের আগে আগে। হঠাৎ রাসূলুল্লাহর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আবু সুফিয়ান তখন বললেন, মুআবিয়া তুমি নেমে আসো। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোওয়ার হতে দাও।

আমি গাধা থেকে নেমে এলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে আরোহন করলেন এবং আমাদের সামনে কিছুক্ষণ চললেন। পরে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, হে আবু সুফিয়ান ইবন হারব, হে হিন্দ বিনতে উৎবা অবশ্যই একদিন তোমাদের মরতে হবে এবং অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর যারা ভালো কাজ করেছে তারা অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে আর আর যারা মন্দকাজ করেছে জাহান্নামে যাবে। আমি তোমাদেরকে সত্য কথা বলছি। আমি তোমাদেরকে প্রথমেই সতর্ক করছি। এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তেলাওয়াত করলেন,

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *