পাথেয় রিপোর্ট : আমরা দেশের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নির্বাচনে গিয়েছি বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। তাই আমরা দেশের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নির্বাচনে গিয়েছি। নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তারেক রহমানকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা যাবে না। ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীসহ দেশের কারাবন্দি নেতাকর্মীরা মুক্তি পাবে না। জনগণকে এখন সংগঠিত হতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব লেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কামান-ট্যাংক দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, এখন স্বাধীন দেশে সরকার চাইছে জনগণকে দমিয়ে রাখতে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে। এদেশের মালিক আপনারা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয়। তাই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়াসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীর মুক্তির জন্য আপনাদের নিকট একটা ভোট ভিক্ষা চাই।
সংসদীয় আসনের বিএনপি মনোনীত কারাবন্দি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ফুলতলী মিনি স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
দলের কারাবন্দি প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীর কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফুরী, সামছুদ্দিন দিদার, দলের জেলা ও স্থানীয় নেতা শফিকুজ্জামান মজুমদার, মাহবুব চৌধুরী, আবুল বাসার, ইসমাইল হোসেন মজুমদারসহ কুমিল্লা-১০ আসনের সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও লাইমাই উপজেলা নেতৃবৃন্দ।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার মিথ্যা ও ভৌতিক মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রেখেছে। গুম খুন নির্যাতন ও মামলা হামলায় হাজার লক্ষ কোটি মানুষের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে আজ বাংলাদেশ। তাই আপনাদের যতই বিপদ আসুক, যতই ভয় দেখাক আর যতই হুমকি ধমকি দিক আপনারা মাঠ ছেড়ে যাবেন না। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে, দাবি উঠেছে এ সরকার আমরা চাই না, পরিবর্তন চাই। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেব, আমরা মাথানত করব না। জনগণ যদি জেগে উঠে তাহলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আমরা এদেশের মানুষ, আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাড়ান তাহলে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারা অত্যাচার করছে, গ্রেফতার করে হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে, গুলি করছে। এ নির্যাতন বন্ধ করুন, জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিন। এসময় তিনি নাঙ্গলকোট থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বলছে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তারা শেয়ার মার্কেট, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ক্যানাডা, মালয়েশিয়া, লন্ডনে বাড়ি করেছে। এটা দেশের মানুষ জানে। বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এবং কুইক রেন্টালের নামে তারা কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের একজন কমিশনার বলছেন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন কমিশনারের কথা মিথ্যা। কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও কোন কাজ হয় না, ইসি এখন অসহায়, বধির। ইশতেহার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে বেকার ভাতা, বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে কৃষকদের সার দেয়া হবে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর এদেশের মানুষের মুক্তির দিন। শেখ হাসিনা একটি ভোটের জন্য মানুষ মারে। একাত্তরে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে আমরা জয়ী হয়েছিলাম, ৩০ ডিসেম্বরও আমাদের গণতন্ত্রের জয় হবে। পুলিশের গ্রেফতার নির্যাতনের কথা বলে তিনি বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। সরকার ভয় পেয়ে গেছে, তাই রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি এ ধরণের হয়রানী ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান।