গণপরিবহনে নতুন ভাড়া কার্যকর, সড়কে বাস কম

গণপরিবহনে নতুন ভাড়া কার্যকর, সড়কে বাস কম

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে নতুন বাসভাড়া গতকাল রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করে। তবে মহানগর ও দূরপাল্লার বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীতে বাসভেদে ১০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা।

আর ২০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ৪০ টাকার ওপরের ভাড়ার ক্ষেত্রে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মহাখালী, বংশাল, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, রামপুরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে কিছু জায়গায় যাত্রী ও ভাড়া আদায়কারীদের মধ্যে তর্কাতর্কিও হয়েছে।

ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আন্ত জেলা ও দূরপাল্লায় বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১.৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২.২০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২.১৫ টাকা থেকে ২.৫০ টাকা করা হয়। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকাই রয়েছে।

কিন্তু সরেজমিনে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায়। আগে যখন প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২.১৫ টাকা ছিল, তখন তিন কিলোমিটার পথের জন্য ভাড়া হতো ৬.৪৫ টাকা। কিন্তু সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা থাকায় তাই দিতে হতো। এখন ওই পথের ভাড়া হচ্ছে সাড়ে সাত টাকা। কিন্তু সর্বনিম্ন ভাড়া যেহেতু ১০ টাকা, তাই ১০ টাকাই ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ ওই পথের জন্য নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা।

দেওয়ান পরিবহনের বাসে নতুন বাজার থেকে নিউ মার্কেটের ভাড়া যেখানে ৪০ টাকা, সেখানে চালকের সহকারী ৬০ টাকা চাইতেই যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া বাধে। এ সময় যাত্রীরা ভাড়ার তালিকা দেখাতে বললেও দেখাতে পারেননি ভাড়া আদায়কারী। এক পর্যায়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হলো। আবার অনেকে আগের ভাড়া দিয়ে তর্কাতর্কি করে গন্তব্যে পৌঁছেন। একজন ফার্মগেটে তর্ক করে নেমেও গেছেন।

এদিকে সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত চলাচলকারী ভিক্টর পরিবহনের বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে বচসা হতে দেখা গেছে। এই বাসের যাত্রী সুমন রহমান বলেন, ‘সরকার যদি পাঁচ টাকা বাড়ায়, বাস মালিকরা ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ মানুষ আছে চিপায়। তারা কইতেও পারে না, সইতে পারছে না।’

পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ী চলাচলকারী রাইদা পরিবহনের বাসে পাঁচ টাকা ভাড়া বাড়াতে দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে জুরাইন এলাকা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাওয়া এক যাত্রী জানান, জুরাইন থেকে বসুন্ধরা পর্যন্ত আগে ৪৫ টাকা ভাড়া দিতে হতো। এখন ৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাসের চালকের সহকারী সোহেল বলেন, ‘পাঁচ টাকা ভাড়া বাড়ানোতে যাত্রীদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করতে হচ্ছে না। বেশি বাড়াইলে হয়তো ঝামেলা হইত। এর আগেরবার যহন ভাড়া বাড়ছিল তহন যাত্রীরা ভাড়া নিয়া খুব ঝামেলা করত।’

  • দূরপাল্লার ভাড়া ইচ্ছামতো

রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল গাবতলী থেকে সবচেয়ে বেশি বাস চলাচল করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে। গতকাল গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার পরিবহনগুলো তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। কেউ বাসভাড়া বাড়িয়েছে ১০০ টাকা, কেউ বাড়িয়েছে ২০০ টাকা, আবার অনেকে ৫০ টাকাও বাড়িয়েছে।

ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী নাবিল পরিবহনের যাত্রী সাদেক হোসেন বলেন, ‘আগে ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, এখন নিচ্ছে এক হাজার টাকা।’ ঢাকা থেকে যশোরগামী ঈগল পরিবহনের যাত্রী সাজেদা আলম বলেন, ‘আগে ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা এখন নিচ্ছে ৬৫০ টাকা।’

গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া সব পথেরই বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কেউ মানছে না। যদিও ইচ্ছামতো ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করা হয় কাউন্টারগুলো থেকে।

  • চট্টগ্রাম

নগরের বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিচ্ছে। গণপরিবহনে দেখা গেছে নতুন ভাড়ার তালিকা টাঙানো হয়নি, যে যেভাবে পারছে সেভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করছে। নিউ মার্কেট থেকে হাটহাজারীর আগে মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৩৫ টাকা। গতকাল থেকে ৪৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

  • ময়মনসিংহ

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাসের ভাড়া আগে ছিল ২৬০ টাকা। এখন নতুন ভাড়া হচ্ছে ৩২০ টাকা। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে আগে ছিল ভাড়া ১২০ টাকা, এখন ১৫৪ টাকা। ময়মনসিংহ-ভৈরব ভাড়া ছিল ২১৬ টাকা, এখন ২৬৪ টাকা। মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে এ অভিযোগ পাওয়া যায়।

  • সিলেট

দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের বিক্রেতা শিপন আহমদ জানান, আগে তাঁদের নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৭০ টাকা ছিল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর নতুন নির্ধারিত ভাড়া হয়েছে ৭০০ টাকা। অন্যদিকে এনা পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৭০ টাকার জায়গায় ৬৮০ টাকা। সিলেট-ঢাকা সড়কে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের ভাড়া ৩০০ টাকা বেড়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *