গরুর মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম কম, তবে স্বস্তিকর দাম নয়

গরুর মাংস, মুরগি ও ডিমের দাম কম, তবে স্বস্তিকর দাম নয়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস এখন আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দামে বেশ হেরফের রয়েছে।  কোথাও ৬০০ টাকা কেজি, কোথাও বা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি। এমনকি কেজি ৫৮০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।

 

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। দুই সপ্তাহ আগে কমা ডিমের দাম ডজনে ১২০ টাকায় স্থির। অনেক এলাকায় ডিম ১১৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার সব বাজারেই সবজির দাম আরো কমেছে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শুক্রাবাদ, মালিবাগ, রামপুরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়। তবে গরুর মাংস, মুরগি বা ডিমের দাম কোনোটিই এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি, যা সাধারণ ক্রেতার জন্য স্বস্তিকর হতে পারে।

 

গতকাল শুক্রাবাদ, মালিবাগ, রামপুরা বাজারের বেশির ভাগ দোকানে গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। তবে জোয়ারসাহারা ও গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।

 

যেসব এলাকায় গরুর মাংসের দাম কম, সেসব এলাকার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।

 

এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা ও সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে এখন প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখন সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে ক্রেতারা কিনতে পারছে ডিম। সরকার নির্ধারিত দর অনুযায়ী প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪৪ টাকা।

 

দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। আলু প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ এখনো বন্ধ।

 

শুক্রাবাদ বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি গরুর দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা কমেছে। এতে মাংসের দামও কিছুটা কমেছে। শুধু হাড্ডিসহ মাংস সাড়ে ৭৫০ টাকা কেজি। চর্বি, হাড়সহ মাংস ৬০০ টাকা কেজি।’

 

বাজারের জনপ্রিয় গোস্ত বিতানের বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধইরা মাংসের কেজি ৭০০ টাকা। চর্বিসহ ৬০০ টাকা কেজি। ক্রেতারা যেইভাবে খাইতে চায়, আমরা সেইভাবে দিতাছি। দাম কমানোয় মাংসের বিক্রিও বাড়ছে।’

 

জোয়ারসাহারা ও গুলশানের কালাচাঁদপুর বাজারে এখনো গরুর মাংস কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রির বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, ‘আমাদের ব্যবসা কয়েক দিনের জন্য না, তাই ক্রেতাদের ঠকিয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করি না। ক্রেতারা ৬০০ টাকায় যেসব মাংস কিনছে, সেগুলোর সঙ্গে চর্বি ও মাথার মাংস থাকছে। ৬০০ টাকা কেজি ধরে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে গরুই কিনে আনতে পারছেন না।’

 

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির গতকালের বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে ৫০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত গরুর মাংসের দাম কমেছে। প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে কেজিপ্রতি দর ছিল ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা।

 

রামপুরার বাসিন্দা মো. হাবিব বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে গরুর মাংস খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম। দাম কমার কথা শুনে আজ (গতকাল) বাজারে এসে আধাকেজি ৩০০ টাকায় কিনলাম। ইচ্ছা থাকলেও এত দিন গরুর মাংস কেনার সাহস হয়নি।’

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপন্ন হয়। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম ছিল বেশি। কিন্তু মানুষ মাংস কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।

 

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা বলেন, দেশে গরুর উৎপাদন ভালো। এতে ছয় মাস আগের তুলনায় গরুর দাম ২৫ শতাংশের মতো কমেছে। এ ছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে আসার ফলে চাহিদাও অনেক কমে এসেছে। এ জন্য বাজারে গরুর মাংসের দাম কমেছে।

 

সবজির দাম আরো কমেছে

প্রায় এক মাস ধরে রাজধানীর বাজারগুলোতে কম দামে শীতের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে বেগুন ৪০ থেকে ৭০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি আকার ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ও পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দাম এখনো বাড়তি। পাকা টমেটো প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *